জুবায়ের চৌধুরী

  ২৫ জুলাই, ২০১৭

সেই ‘জাহাজবাড়িতে’ ভুতুড়ে অন্ধকার

রাজধানীর কল্যাণপুরের সেই ‘জাহাজ বিল্ডিং’ এখন ভুতুড়ে বাড়ি। পুলিশ সিলগালা করার পর বাড়িটি সারাক্ষণ থাকে অন্ধকারে। মাঝে মধ্যে বাড়ির মালিকের স্ত্রী এলেও কোনো ভাড়াটিয়া নেই। পুরো বাড়ির ফ্ল্যাটগুলো খালি। মালিক ও তার স্ত্রী-সন্তানরা থাকেন অন্য বাড়িতে। মিরপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, বাড়িটি সিলগালা করার পর এখনো কোনো ভাড়াটিয়া উঠেনি। বাড়িটি এখনো পুলিশি নজরদারিতে রয়েছে। বাড়ির মালিকের স্ত্রীসহ চারজন জামিনে রয়েছে। মামলার তদন্ত করছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। গত বছরের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে ‘অপারেশন স্ট্রর্ম-২৬’ অভিযানের এক বছর পরও সেই মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দিতে পারেনি পুলিশ। এদিকে, পুলিশি অপারেশন চালানোর পর থেকে ভবনটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। ‘জাহাজ বিল্ডিং’ খ্যাত তাজ মঞ্জিল ভবনটি এখনো গুমোট অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে। গতকাল জাহাজ বিল্ডিংয়ের তাজ মঞ্জিলের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, বিশাল আকারের গেটটি তালাবদ্ধ। গত এক বছর ধরে সেখানে কেউ আসেনি। তবে বাড়ির মালিক মাঝে মধ্যে খোঁজ-খবর নিতে আসেন। ঘটনার পর বাড়ির মালিকের স্ত্রীসহ চারজনকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তারা হলেন- মালিকের স্ত্রী মমতাজ বেগম, ছেলে জুয়েল, কেয়ারটেকার মুনিম আহমেদ ও বাড়ির মালিকের এক মেয়ের জামাতা। তারা সবাই এখন জামিনে রয়েছেন। পুলিশের কাছে খবর ছিল, মিরপুরের কল্যাণপুরে বড় একটি জঙ্গি আস্তানা রয়েছে। সেই ডেরায় বসে নাশকতার ছক কষছে জঙ্গিরা। খবর পেয়ে অভিযানে নামে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। সন্ধ্যায় সেই আস্তানার সন্ধানও পায় গোয়েন্দারা। কিন্তু জঙ্গিদের পাল্টা গুলি ও বোমা হামলায় পিছু হটে পুলিশ। এভাবেই সন্ধ্যা থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত ইঁদুর বিড়াল খেলা চলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে। পরদিন চূড়ান্ত অভিযান চালায় গোয়েন্দারা। একপর্যায়ে ঘোষণা আসে বন্দুকযুদ্ধে পরাস্ত হয় জঙ্গিরা। অভিযানের পর সেই জঙ্গি আস্তানা থেকে ৯ জঙ্গির গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ এবং রিগ্যান নামের এক জঙ্গিকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

গত বছরের ২৬ জুলাই জঙ্গিবিরোধী ‘অপারেশর স্ট্রর্ম-২৬’ অভিযান চালিয়েছিল পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। গত বছরের ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজান হামলা এবং ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহের কাছে হামলার পর ২৬ জুলাইয়ের ‘অপারেশন স্ট্রর্ম-২৬’ অভিযানের মাধ্যমেই পুলিশের ধারাবাহিক জঙ্গি অভিযানের শুরু হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই ডজন অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব অভিযানে নেতৃস্থানীয়সহ ৫৭ জন জঙ্গি নিহত এবং প্রায় অর্ধশত জঙ্গি গ্রেফতার হয়।

অভিযানের পরপরই ‘জাহাজ বিল্ডিং’ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নিহত নয় জঙ্গির বীভৎস লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে। সম্প্রতি ময়না তদন্তের প্রতিবেদন তদন্তকারীদের কাছে জমা দিয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিহত নয় জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে গুলিতেই। এই ময়না তদন্তের রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপন করেন মামলার তদন্তকারী।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের উপকমিশনার আবদুল মান্নান জানান, ময়না তদন্ত প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। এতে মামলার তদন্তকাজ শেষ করতে সুবিধা হবে। তিনি জানান, দায়েরকৃত মামলায় রিগ্যান, বড় মিজান, রাজীব গান্ধী, সালাউদ্দিন কামরান ও সর্বশেষ হাতকাটা সোহেলকে ওরফে মাহফুজকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রিগ্যানসহ কয়েকজন জবানবন্দি দিয়েছে। ওই আস্তানায় জঙ্গিদের জড়ো করা হয়েছিল। প্রশিক্ষণও দেওয়া হতো।

তিনি জানান, ‘আমরা খুব শিগগিরই চার্জশিট দেব। আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত বাকি থাকায় চার্জশিট দিতে বিলম্ব হচ্ছে। কাউন্টার টেররিজমের অন্য এক কর্মকর্তা জানান, সেখানে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের পতাকা পেছনে রেখে ছবি তোলা হতো। গত বছর ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর নিহত জঙ্গিদের যে ছবি পোস্ট করা হয় তা জাহাজ বিল্ডিংয়ে তোলা। আর এই ছবি বাংলাদেশ থেকে পোস্ট করে নব্য জেএমবির তামিম চৌধুরী ও সারোয়ার জাহান।

নিহত জঙ্গিদের মধ্যে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জের সোহরাব আলীর ছেলে আবদুল্লাহ, টাঙ্গাইলের মধুপুরের নূরুল ইসলামের ছেলে আবু হাকিম নাইম, ঢাকার ধানম-ির রবিউল হকের ছেলে তাজ-উল-হক রাশিক, সাতক্ষীরার তালার ওমরপুরের নাসির উদ্দিন সরদারের ছেলে মতিয়ার রহমান, ঢাকার গুলশানের সাইফুজ্জামান খানের ছেলে আকিফুজ্জামান খান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার তৌহিদ রউফের ছেলে সাজাদ রউফ অর্ক, নোয়াখালীর সুধারাম মাইজদী এলাকার আবদুল কাইয়ুমের ছেলে জোবায়ের হোসেন ও রংপুরের পীরগাছার পুরশুরা এলাকার শাহজাহান কবিরের ছেলে রায়হান কবির ওরফে তারেক ওরফে ফারুক।

নিহত নয়জনের মধ্যে একজনের প্রথম পরিচয় মিললেও পরে স্বজনরা তার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। পরে আটক রিগ্যানের জবানবন্দিতে গুলশান ও শোলাকিয়ার হামলাসহ নব্য জেএমবির বেশ কিছু পরিকল্পনার তথ্য পায় পুলিশ। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর বেওয়ারিশ হিসেবে তাদের লাশ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist