মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট

  ১৪ জুলাই, ২০১৭

চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুসমাচার

এবার ক্ষত সারাবে রাজু ও মঞ্জুর ভ্যাকুয়াম মেশিন

দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে অনেক রোগীর পিঠে ক্ষত বা ঘা হয়ে যায়। একে বেডসোর বা শয্যাক্ষত বলে। এ ছাড়া ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে যেকোনো ক্ষত বা ঘা মারাত্মক আকার ধারণ করে। অনেক সময় পা কেটে ফেলতে হয়। ক্ষতস্থান ভালো করার চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলা হয় ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’। এই পদ্ধতির মূল কাজটা করে ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’। কয়েকটি উন্নত দেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। এই মেশিন আমদানি খুব ব্যয়বহুল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সুসংবাদ দিয়েছেন দুই বাংলাদেশি বিজ্ঞানী। মাত্র ৩০ হাজার টাকায় আবিষ্কার করেছেন ভ্যাকুয়াম মেশিন। এই দুই বিজ্ঞানীর একজন হলেন রাজু মিয়া, আরেকজন ডা. মঞ্জুর আহম্মেদ। সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে তাদের আবিষ্কার নতুন সংযোজন।

কিছুদিন আগেও অন্ধদের পথচলার সহায়তায় বিশেষ ধরনের এক যন্ত্র (ব্লাইন্ড আই) উদ্ভাবন করেন রাজু মিয়া। সিলেটের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র তিনি।

‘ভ্যাকুয়াম অ্যাসিস্টেড ক্লোজার থেরাপ’ বা সংক্ষেপে ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উদ্ভাবিত হয়েছে ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’। এ মেশিন দিয়ে ‘ডায়াবেটিক ফুট’ ও ‘বেডসোর’ রোগীদের গভীর-অগভীর সব ধরনের ক্ষতস্থান দ্রুত ভালো করা সম্ভব। সর্বপ্রথম ১৯৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেন। ডায়াবেটিসের রোগীদের পা কেটে ফেলার ঝুঁকি থাকে। এর কারণ হলো স্নায়ু দুর্বলতায় পায়ে অনুভূতিহীনতা, পায়ে সহজেই জখম ও ক্ষত তৈরি হওয়া, সূক্ষ্ম রক্তনালি নষ্ট হওয়া, পায়ের ধমনিতে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হওয়া প্রভৃতি। ডায়াবেটিসের রোগীদের পায়ের এই বিপজ্জনক সমস্যাকে ‘ডায়াবেটিক ফুট’ বলা হয়। কোনো ডায়াবেটিসের রোগীর পা সামান্য কেটে গেলেই বিপদ। অনেক সময় পা কেটে ফেলতে হয়।

বেডসোর বা শয্যাক্ষত মারাত্মক একটি সমস্যা। প্যারালাইজড রোগী, কিডনি রোগী, হাড়ভাঙা রোগী বা পঙ্গু মানুষদের দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। শুয়ে থাকতে থাকতে পিঠে বা কোমরে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই ক্ষতকে ‘বেডসোর’ বা শয্যাক্ষত বলা হয়।

ডা. মঞ্জুর আহমদ ‘ডায়াবেটিক ফুট অ্যান্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টার’র পরিচালক। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে ডায়াবেটিক চিকিৎসার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির স্বীকৃত চিকিৎসক তিনি।

উন্নত বিশ্বে যে ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি’ ব্যবহার করা হয়, সেই চিকিৎসাযন্ত্র বাংলাদেশে আমদানি অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে এই পদ্ধতি প্রচলিত নয়। দেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতি সহজলভ্য ও সাধারণের সামর্থ্যরে নাগালে রাখতে কাজ শুরু করেন ডা. মঞ্জুর। তিনি রাজু মিয়ার সঙ্গে চিন্তার শেয়ার করেন। কী চান, কিভাবে কাজ করবে ভ্যাকুয়াম থেরাপি-এসব রাজুকে বুঝিয়ে দেন। একটানা দুই মাস নিজের বাসা আর মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাব-২-এ কাজ করেন রাজু। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’ তৈরিতে সফল হন তিনি।

দেশি-বিদেশি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে তৈরি হয়েছে ‘ভ্যাকুয়াম মেশিন’। রাজু মিয়া বলেন, ‘এই যন্ত্রটি তৈরি করা খুবই কঠিন কাজ ছিল। রাত-দিন পরিশ্রম করতে হয়েছে। যন্ত্রটি একটি বিশেষ ধরনের সফটওয়্যারের সাহায্যে চলে। কন্ট্রোলার সার্কিট বোর্ড তৈরি করি। এ বোর্ড পুরো ভ্যাকুয়াম মেশিনকে নিয়ন্ত্রণ করে। এ যন্ত্রের মেকানিক্যাল কাজটাও জটিল ছিল। তবে শেষপর্যন্ত সফল হয়েছি।’

ডা. মঞ্জুর আহমদ বলেন, ‘ভ্যাকুয়াম থেরাপি একটি বাস্তবধর্মী ক্ষত চিকিৎসা পদ্ধতি। এর মাধ্যমে ক্ষত বা অপারেশন সাইট থেকে রক্ত বা তরল শোষণ করা হয়। বিশেষ ধরনের একটি ফোম ক্ষতস্থানে লাগানো হয়। এরপর বিশেষ ধরনের পাতলা ফিল্ম দিয়ে ক্ষতস্থান সম্পূর্ণ ঢেকে (সিল করে) দেওয়া হয়। সিলের ভিতর থেকে একটি পাইপ ভ্যাকুয়াম মেশিনের পাম্পে সংযুক্ত করা হয়। পাম্পের সাহায্যে ক্ষতস্থানের তরল পদার্থ ও সংক্রামক উপাদানসমূহ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাইরে টেনে নেওয়া হয়।’

ভ্যাকুয়াম মেশিন তৈরি করার পর বেশ কয়েকজন ডায়াবেটিক ফুট ও বেডসোর রোগীর চিকিৎসায় সফলতার সঙ্গে ব্যবহার করা হয়েছে। এই সফলতার পর বর্তমানে সিলেটে ডায়াবেটিক ফুট অ্যান্ড ওউন্ড হিলিং সেন্টারে এর মাধ্যমে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আপাতত এই যন্ত্র নিয়ে রাজুদের বাণিজ্যিক কোনো চিন্তা নেই বলে জানিয়েছেন তারা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist