হাসানুজ্জামান তুহিন, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ)

  ২৫ জুন, ২০১৭

ডাইভারসিফিকেশন শাড়ির চমক

দেশের তাঁতশিল্পের কেন্দ্রবিন্দু শাহজাদপুর পৌর সদরে উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ তাঁত কাপড় বিক্রয়ের হাটে ক্রেতাদের মূল আকর্ষণ বাংলাদেশ তাঁত গবেষণা কেন্দ্রের তাঁতজাত পণ্যের ডাইভারসিফিকেশনের মাধ্যমে উৎপাদিত রং-বাহারি শাড়ি ও ড্রেস মেটেরিয়াল। ঈদুল ফিতরের কাপড় বাজরে এবার ডাইভারসিফিকেশন শাড়ি বেশ চমক সৃষ্টি করেছে।

রাজধানীর নামিদামি স্টোর থেকে শুরু করে দেশের সকল জেলা উপজেলার শহরের অলিতে গলিতে ভারতীয় সিনথেটিক শাড়ি ও সালোয়ার কামিজে যখন বাজার সয়লাব ঠিক সেই মুহূর্তে প্রতিযোগিতায় ভারতীয় বস্ত্রের বাজার হটাতে বাংলাদেশের বাজারে তাঁত গবেষণা কেন্দ্রের সহায়তায় তাঁতজাত পণ্যের ডাইভারসিফিকেশনের মাধ্যমে এলাকার তাঁতিদের তৈরি শাড়ি, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা ও পাঞ্জাবি দেশের ক্রেতাদের আশানুরূপ সারা জাগিয়েছে। পর্যাপ্ত উৎপাদন না থাকায় বাজারের চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে তাঁতিরা। পলিয়েস্টার, পলি-প্রপাইলিং, পলি-এ্যামাইড, পলি-নোসিক, নাইলন ও এক্রেলিক বেইজ্ড ম্যান মেইড ফাইবারগুলোকে ফেন্সি ইয়ার্ন হিসেবে কাজে লাগিয়ে ব্যাপক গবেষণার মাধ্যমে ফিউশন করে কৃত্রিমতন্তু উদ্ভাবিত হাজারো রকমের ইয়ার্ন ছাড়াও মেটালিক ইয়ার্ন (জড়ি) ও ফেন্সি ইয়ার্ন দ্বারা তৈরি এ শাড়ি ও ড্রেস মেটেরিয়াল হস্তশিল্পীদের হাতের বিভিন্ন অলংকরণের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। তুলনামূলকভাবে তৈরি এ শাড়ি ও ড্রেস মেটেলিয়ালগুলোর মূল্যও যেমন কম তেমনি টেকসইও বটে। এ ছাড়াও এ কাপড় ধোলাই ও ইস্ত্রি করাও সম্ভব। সে কারণের ক্রেতাদের কাছে এর ব্যাপক চাহিদা ও কদর ইতোমধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে। শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে আগত কাপড় প্রস্তুতকারী বেশ কয়েকজন তাঁতি জানান, ‘এ ধরনের ম্যানমেইড ইয়ার্ন দ্বারা তৈরি প্রতিপিস শাড়ির সর্বনিম্ন মূল্য ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, জ্যাকার্ড ডিজাইনসহ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং সর্Ÿোচ পাঁচ হাজার টাকা। এর সঙ্গে হস্তশিল্পীদের কারুকার্য মূল্য যোগ হয়ে এর প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ হয়ে থাকে।’

ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ তাঁত গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক মোবারক হোসেন সরকার জানান, ‘বিগত এক দশকে ভারতে ম্যানমেইড ফেন্সি ইয়ার্ন তৈরির ক্ষেত্রে এক বিপ্লব ঘটে গেছে। সে ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। ভারতে গবেষণার মাধ্যমে প্রতিবছর কোনো না কোনো নতুন ম্যান মেইড ইয়ার্ন বাজারে চালু হচ্ছে। ভারতে এ ধরনের ফাইবার বা ইয়ার্ন ম্যানমেইড ফেন্সি ইয়ার্ন হিসেবে পরিচিত। আমাদের দেশে এগুলোকে সিনথেটিক সুতা বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে নন-কটন, নন-সিল্ক বেইজ্ড ফাইবার বা ইয়ার্ন নিয়ে ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন। সরকারকে তাঁতশিল্প রক্ষায় গবেষণার কাজে এগিয়ে আসতে হবে।’ এদিকে, উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ শাহজাদপুর কাপড়ের হাটে তাঁত গবেষণা কেন্দ্রের তাঁতজাত পণ্যের ডাইভারসিফিকেশনের মাধ্যমে উৎপাদিত রং-বাহারি শাড়ি ও ড্রেস মেটেরিয়াল ইতোমধ্যেই চমক সৃষ্টি করেছে। সল্প সময়ের মধ্যেই দেশে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন, বাহারী ডিজাইনের শাড়ি ও ড্রেস মেটেরিয়াল তাঁতবস্ত্র ব্যাপক সমাদৃত হওয়ায় দেশের তাঁতবস্ত্রের বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত চাহিদার বিপরীতে অপেক্ষাকৃত অনেক কম পরিমাণে উৎপাদিত হচ্ছে। ভারতীয় সিনথেটিক শাড়ি ও কামিজের পরিবর্তে দেশের এ ধরনের তাঁতবস্ত্র ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ভারতসহ বহির্বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বস্ত্র গবেষণা কেন্দ্রে ব্যাপকভিত্তিতে পরীক্ষা নীরিক্ষা অন্তে প্রতিনিয়ত বস্ত্রের মান্নোনয়ন ও আধুনিকায়ণের মাধ্যমে তাদের দেশে উৎপাদিত বস্ত্র বিশ্ববস্ত্রের বাজারে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও চাহিদা সৃষ্টি করছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত বস্ত্রের মান বহির্বিশ্বের কোনো দেশের তুলনায় কোনো অংশে কম নয়। দেশের সর্ববৃহৎ কুটিরশিল্প, যে শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে কোটিরও ওপরের জনমানুষ সেই ঐহিত্যবাহী তাঁতশিল্পকে বিশ্ববাজারে দেশের তৈরি বিশ্বখ্যাত ‘মসলিন’-এর মতো সুপ্রতিষ্ঠিত করতে এবং তাঁতশিল্পকে আধুনিকায়নে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist