শরীফুল রুকন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে বিক্রি হয় ছিনতাইয়ের মাল
পুলিশের তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন
মোটরসাইকেল চালিয়ে আসে তারা। কখনো আসে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে। কোনো কিছু বোঝার আগেই ছিনতাই করে চম্পট দিচ্ছে। ছিনতাই যেন নিত্য ঘটনা হয়ে গেছে চট্টগ্রামের সড়কে। স্টেশন রোডে প্রকাশ্যে বেচা-কেনা হচ্ছে ছিনতাইয়ের মালামাল। থানা ও পুলিশে গোয়েন্দা বিভাগের সমন্বয়হীনতার কারণে বেশিরভাগ ছিনতাইকারী থাকছে অধরা। এমনকি ছিনতাইকারীর আঘাতে ঝরছে পথচারীর প্রাণ।
পুলিশের তথ্যমতে, নগরীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত মামলা হয়েছে ৬৪টি। চলতি মাসে ২৩ জুন পর্যন্ত ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১৫টি মামলা হয়েছে। গত এক মাসে ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারান দুইজন। সর্বশেষ গতকাল শনিবার সকাল ৯টায় কাজীর দেউড়ি হল২৪ এর সামনে ছিনতাইয়ের শিকার হন ছাত্রলীগ কর্মী এস এম সাদমান শাহরিয়ার।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার হাসান মো. শওকত আলী বলেন, ‘ভুক্তভোগীরা মামলা না করায় ছিনতাইয়ের সব হিসাব পুলিশের নথিতে নেই। তবে ছিনতাই কমাতে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। গত এক মাসে কমপক্ষে ২০ ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়েছে।’
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এক এলাকায় বসবাস করে আরেক এলাকায় গিয়ে অপকর্ম করে অপরাধীরা। এ অবস্থায় অপরাধ দমনে থানা ও গোয়েন্দা বিভাগের সমন্বয় কম। সমন্বয়ের বদলে এখন রেষারেষি চলে। এতে অপরাধীরা সুবিধা পাচ্ছে। গোয়েন্দা পুলিশের গ্রেফতার-উদ্ধার অভিযানে সাফল্য আসলে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাদের ব্যর্থতা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
এদিকে, চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন রোডে গড়ে উঠেছে ‘চোরাই মার্কেট’। পুরাতন রেল স্টেশন থেকে নতুন রেল স্টেশনের প্রবেশপথ পর্যন্ত ফুটপাতে বেচা-কেনা চলে চোরাই পণ্যের। মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিকসের নানা জিনিসপত্র, কী নেই সেখানে। এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে একেবারেই কম দামে। সেখানে ১০ হাজার টাকায় পাওয়া যায় আইফোন! অ্যান্ড্রয়েড মিলে দুই থেকে তিন হাজারের মধ্যেও!
চোরাই মার্কেটে মালামাল কোথা থেকে আসে? বিভিন্ন এলাকায় চুরি-ছিনতাই হওয়া মালামাল জমা হয় চোরাই মার্কেটে। কারো দামি কোনো জিনিস চুরি-ছিনতাই হলে স্টেশন রোডে এসে খোঁজ নিলে পাওয়া যায়। এমন নজির অনেক রয়েছে। এসব বিষয় অজানা নয় পুলিশের কাছেও। গত ৪ জানুয়ারি সেখানে অভিযান চালিয়ে ১০৫টি চোরাই মোবাইলসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তবে অজ্ঞাত কারণে পুরোপুরি উচ্ছেদ হচ্ছে না চোরাই মার্কেটের দোকানগুলো।
গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার হাসান মো. শওকত আলী বলেন, ‘স্টেশন রোড়ের চোরাই মার্কেটে মালামাল বিক্রি করতে যাওয়ার পথে ২২ জুন ধরা পড়ে নাগর পন্ডিত নামের এক ছিনতাইকারী। চোরাই পণ্যের দোকানগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়।’
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চোরাই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা অপরাধ কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত। ছিনতাই-চুরির কাজে ভাসমান মানুষদের মদদ দিয়ে আসছেন তারা। স্টেশন রোড এলাকায় ভাসমান শিশু ও লোকজনদের টার্গেট করে প্রথমে মাদকে আসক্ত করানো হয়। এরপর মাদকের টাকা সংগ্রহে বাধ্য হয়ে ছিনতাই ও চুরি-ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে ভাসমান লোকজন।
গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘ধরা পড়া বেশ কয়েকজনকে জেরা করে ছিনতাইয়ের পেছনে মাদকের বিষয়টিই উঠে এসেছে। মাদক কিনতে টাকা জোগাড়ের জন্য বেশিরভাগ ছিনতাই হচ্ছে।’
ভয়ংকর ছিনতাইকারীদের গ্রুপ হামকা বাহিনীর একাংশের প্রধান নুরুল আলম জানান, মামলার ব্যয় মেঠাতে গিয়ে অনেকেই ছিনতাই ছাড়তে পারছে না। নুরুল আলম বলেন, ‘অপরাধ না করলেও নতুন নতুন মামলায় আসামি করা হয়। প্রতিমাসে তার মামলার ব্যয় ৩০ হাজার টাকা। সৎপথে এত টাকা আয় অসম্ভব। পুলিশের সহযোগিতা পেলে অনেকেই ভালো হয়ে যাবে। ৮০ ভাগ ছিনতাই কমে যাবে।’
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, ‘ছিনতাইপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে যা যা করণীয় সবই করা হচ্ছে। কেউ ভালো হতে চাইলে পুলিশ সুযোগ দেবে।’
"