পাঠান সোহাগ

  ২০ জুন, ২০১৭

বিএসএমএমইউতে বিনামূল্যে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট

এখন কথা বলতে পারবে রোশনীরা

ফুটফুটে ছোট মেয়ে রোশনী সাহা। বয়স তিন কী চার হবে। কথা বলতে আটকে আসে। উচ্চারণ পারে না পরিপূর্ণ শব্দ। নানা জায়গায় ডাক্তার দেখিয়েও লাভ হয়নি। শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা চলছে। শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য বিনামূল্যে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট (শ্রবণ ও বাকযন্ত্র) সেবার সুযোগ রয়েছে। মেধাকোটায় রেশমী এবারে পেয়েছে সেই সুযোগ। এতে খুশি রেশমীর মা শিল্পী রানী সাহা। মেয়ে কথা শুনবে-বলবে এই ভেবে তাদের পুরো পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা। শুধু রেশমী নয়, শারমিন আক্তান, তুলি বিশ্বাসসহ মোট ৭২ জন শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুকে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সেবা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ডিভাইসের ১০ লাখ টাকা। সে হিসেবে ৭ কোটি ২০ লাখ টাকার ডিভাইস সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানান, কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। শুধু কক্লিয়ার ডিভাইসের দাম ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা। বিদেশে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি করতে ব্যয় হয় ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা।

সূত্র জানিয়েছে, শিশুসহ ২২৪ জনের কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২০০ জন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এ সুযোগ পেয়েছে। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাত জোয়ারদার বলেন, ২০১০ সালে তারই তত্ত্বাবধানে বিএসএমএমইউ’র নাক, কান ও গলা বিভাগে এই কার্যক্রম শুরু হয়। আর এখন এখানে একটি সার্জিক্যাল টিম কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সার্জারি করছেন। তিনি বলেন, এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে বিদেশে গিয়ে কোটি টাকা ব্যয়ে এই সার্জারি করতে হতো। কিন্তু এখন আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না, বিএসএমএমইউতে ইমপ্লান্ট কিনে ২৫ হাজার টাকা দিয়ে এই সেবা পাওয়া যায়। যারা এই টাকা দিতে অপারগ, তাদের বিনামূল্যে এই সেবা দেওয়া হয়ে থাকে।

কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট কার্যক্রমের কর্মসূচি পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল হাসনাত জোয়ারদার বলেন, কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট এক ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যা কিনা মারাত্মক বা সম্পূর্ণ বধির ব্যক্তিকে শব্দ শুনতে সহায়তা করে। এটাকে বায়োনিক ইয়ারও বলা হয়।তবে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন হিয়ারিং এইড ব্যবহার করেও যারা শুনতে পারেন না তাদের জন্যই এই কক্লিয়ার ইমপ্ল্যান্ট। দুইভাগে বিভক্ত এই ডিভাইসের একটি অংশ অপারেশনের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের কক্লিয়াতে স্থাপন করা হয়, যার ভেতরের অংশে থাকে রিসিভার স্টিমুলেটর আর কানের বাইরে থাকা আরেকটি অংশে থাকে মাইক্রোফোন, স্পিচ প্রসেসর এবং ট্রান্সমিটার। কক্লিয়ার ইমপ্লান্টের কাজ হলো বাইরের শব্দ মাইক্রোফোনের মাধ্যমে নিয়ে এনালগ ইলেকট্রিক সিগনালে পরিবর্তন করা। তারপর স্পিচ প্রসেসরের মাধ্যমে সে সিগনাল প্রসেসিং করে কোডেড ডিজিটাল সিগনালে রূপান্তর করা। অপারেশনের তিন থেকে ৪ দিন পর যখন কানের বাইরে থাকা মেশিন লাগিয়ে সুইচ অন করা হয় সেদিন থেকেই শিশুটি শব্দ শুনতে পায়। এই অপারেশনের জন্য তিন থেকে চার ঘন্টা সময় প্রয়োজন এবং এখানে সফলতার হার শতকরা একশভাগ। দুই থেকে তিনদিন পরই রোগী হাসপাতাল থেকে চলে যেতে পারে, তবে অপারেশনের পর দীর্ঘদিন নিতে হয় অডিটরি রিহেবিলিটেশন।

বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, সরকার প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক বলেই দামি এ ডিভাইস বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। দরিদ্র পরিবারের শ্রবণপ্রতিবন্ধী শিশুরাও লাখ লাখ টাকার চিকিৎসা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাচ্ছে। শিশুরা শুনতে পারবে, কথা বলতে পারবে-এমনটা ভেবে তাদের মা-বাবার মুখে হাসি ফুটেছে। শিগগিরই আমাদের এখানে ‘পিস অ্যান্ড হেয়রিং সেন্টার’ চালু করব। দেশের সব শ্রবণপ্রতিবন্ধী চিকিৎসাসেবা পাবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বাংলাদেশে বধিরতার হার ৯ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশে প্রায় ১৬ লাখ মানুষ মারাত্মক বধিরতায় ভুগছে। বিশ্বজুড়ে প্রতি এক হাজার জনের মধ্যে দুই শিশু বধিরতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist