নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৫ মে, ২০১৭

দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন

দুর্নীতির অভিযোগ বেড়েছে, কমেছে মামলা

দুর্নীতি দমন কমিশনে আগের বছরের চেয়ে গত বছর অভিযোগ বেশি জমা পড়লেও যাচাই-বাছাই শেষে মামলা হয়েছে কম। ২০১৬ সালে ১২ হাজার ৯৯০টি অভিযোগ জমা পড়েছিল, এর মধ্যে মামলা হয়েছে ৩৫৯টি। ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৪১৫টি অভিযোগের মধ্যে মামলা হয়েছিল ৫২৭টি। রাষ্ট্রপতির কাছে দুদকের দেওয়া বার্ষিক প্রতিবেদনে অভিযোগ ও মামলার এই চিত্র পাওয়া যায়। গতকাল বুধবার বিকেলে বঙ্গভবনে গিয়ে মো. আবদুল হামিদের কাছে ২০১৬ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে প্রায় ২৫ শতাংশ অভিযোগ বেশি জমা পড়াকে কমিশনের প্রতি ‘জনআস্থা বৃদ্ধি’ বলে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। মামলা কম হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বহু অভিযোগ ছিল কমিশনের ‘তফসিল-বহির্ভূত অভিযোগ’। এ ছাড়া মামলা দায়েরে ‘অধিকতর সতর্কতা’ অবলম্বন করা হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালে কমিশনে আসা অভিযোগ থেকে এক হাজার সাতটি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া আরো ৫৮৮টি অভিযোগের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো হয়। দুদক ২০১৬ সালে মোট ৫৩৫টি মামলার অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছে, যা ২০১৫ সালে ছিল ৬১৪টি। সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, কতিপয় অপরাধ দুর্নীতি দমন কমিশনের ‘তফসিল-বহির্ভূত’ ও ‘মানসম্মত (প্রমাণের পক্ষে পর্যাপ্ত দালিলিক প্রমাণাদি রয়েছে) মামলা’ দায়েরের বিষয়ে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। দুর্নীতির মামলাগুলোর মধ্যে ২০১৬ সালে বিশেষ জজ আদালতে ৩০০টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ২১৪টি দুদকের করা মামলা এবং বাকি ৮৬টি বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরোর আমলের মামলা। দুদকের দায়ের করা ১১৬টি মামলায় সাজা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। ২০১৬ সালে দুদকের মামলায় ৫৪ শতাংশের দ- হয়েছে। ব্যুরোর মামলাগুলোতে সাজার হয়েছে ৪৫ শতাংশ। ২০১৫ সালে দুর্নীতির মামলায় সাজার হার ছিল ৩৭ শতাংশ।

২০১৬ সালে দুর্নীতির মামলায় ৩৮৮ জনকে গ্রেফতার করেছে দুদক, যা গত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৪ সালে মাত্র ১৪ জন এবং ২০১৫ সালে ১৬ আসামিকে গ্রেফতার করেছিল দুদক। ২০১৬ সালে ১৩টি ফাঁদের মাধ্যমে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার করে কমিশন। প্রতিটি অভিযোগের বিষয়ে মামলা করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ফাঁদ মামলা ছিল চারটি এবং ২০১৪ সালে ছিল পাঁচটি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুপারিশ : প্রতিবেদনে কমিশনের পাঁচ বছর মেয়াদি (২০১৭-২১) বেশ কয়েকটি কর্মপরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এগুলো হলো-দুর্নীতিসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য নিজস্ব ‘গোয়েন্দা ইউনিট’ গঠন, ‘সশস্ত্র ইউনিট’ গঠন, হাজতখানা স্থাপন, সম্পদ পুনরুদ্ধার ইউনিট গঠন, দুর্নীতিপ্রবণ দফতরে নজরদারি বৃদ্ধি এবং কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া ও আইনজীবী ও গণমাধ্যমকর্মীদের দুর্নীতির উৎস শনাক্তকরণ, অনুসন্ধান ও প্রতিরোধে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। শিক্ষা খাতে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগে ‘পৃথক পাবলিক সার্ভিস কমিশন’ গঠনের সুপারিশ করেছে দুদক।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা অর্থ ব্যয়ে নীতিমালা প্রণয়ণের সুপারিশও করা হয়েছে। এনসিটিবি সব বই ওয়েবসাইটে দেওয়ার সুপারিশও করা হয় প্রতিবেদনে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি, পরীক্ষা সনদসংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাইভেট মেডিক্যাল কলেজ রেগুলেটরি অথরিটি’ গঠনের সুপারিশ করেছে দুদক।

স্বাস্থ্যখাতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস ও চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, সরকারি হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনায় ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণের সুপারিশ করা হয়। থানায় জিডি, মামলা দায়ের, তদন্ত ও রিপোর্ট দাখিলের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট সময়সীমার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আইনে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে দুদক। প্রত্যেক থানায় ওসি হিসেবে একজন বিসিএস ক্যাডারের কর্মকর্তাকে নিয়োগের সুপারিশও করা হয়েছে।

ভূমি ব্যবস্থাপনা সহজ করতে খাসজমির সম্পত্তির ডাটাবেইজ তৈরি, প্রতি জেলায় স্থায়ী সেটেলমেন্ট অফিস স্থাপন, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) অধীনে সাব-রেজিস্ট্রেশন অফিস পরিচালনা, রেজিস্ট্রেশন অধিদফতরকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় নেওয়ার সুপারিশ করেছে দুদক।

ভূমি রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি অটোমেশন করা এবং দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নামজারি ও প্ল্যান পাসের বিদ্যমান প্রথা বাদ দিয়ে বিভিন্ন সাইজের প্লটের জন্য ‘মডেল প্ল্যান বুক’ প্রণয়ন, মহাসড়ক নির্মাণে কংক্রিট সড়ক তৈরির সুপারিশ করেছে দুদক। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিজ খরচে ২০ বছর পর্যন্ত মহাসড়কের রক্ষণাবেক্ষণ করার শর্ত দেওয়ার সুপারিশও করেছে দুদক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist