গাজী শাহনেওয়াজ

  ২৫ মে, ২০১৭

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ১১ প্রকল্প অর্থ সংকটে

অর্থ সংকটে পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দেশের ১১টি প্রকল্প। প্রকল্পের মাঝপথে চুক্তির শর্তের বাইরে বাড়তি অর্থ দরকার পড়ার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া প্রকল্প কর্তৃপক্ষ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে সমন্বয়হীনতা। প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভার কার্যবিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা হচ্ছে, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি), কুয়েত ফান্ড, ওপেক ফান্ড, আবুধাবী ফান্ড এবং সৌদি ফান্ড। এসব দাতা সংস্থার সহায়তায় দেশে ১২টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন চলছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে-তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু প্রকল্প, পায়রা সেতু (লেবুখালী সেতু), সাউথ এশিয়ান সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক করপোরেশন (এসএএসইসি) রোড কানেকটিভিটি প্রকল্প, শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন সাইকেল পাওয়ার প্লাট প্রকল্প, মগবাজার মৌচাক ফ্লাই ওভার নির্মাণ প্রকল্প, বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ বিতরণ প্রকল্প (এসসিএডি), তিস্তা রিভার ব্রিজ অ্যান্ড এসেস রোডস অ্যাট গাইবান্ধা, তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু প্রকল্প, থার্ড আরবান গভর্নেন্স অ্যান্ড ইনফ্রাকটাকচার ইনপ্রুভমেন্ট প্রকল্প, ন্যাশনাল অপর্থোমলজি ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল প্রকল্প এবং ন্যাশনাল ক্যানসার রিসার্স ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল প্রজেক্ট। অধিকাংশ প্রকল্পের নির্মাণাধীন কাজের মাঝপথে এসে তহবিলে টান পড়ে। অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দাতা সংস্থাগুলোর অর্থছাড়ে গড়িমসির কারণে সংকটে পড়েছে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো। এখন বাড়তি অর্থ ছাড়ে সমঝোতা চালিয়ে যাচ্ছে ইআরডি। ইতোমধ্যে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের চাহিদানুযায়ী সমঝোতাকারী কর্তৃপক্ষ ইআরডির মাধ্যমে দাতা সংস্থাগুলোর কাছে চাহিদাপত্র দিলেও তার অনেকগুলোর জবাব মেলেনি। তবে, কুয়েতসহ কয়েকটি ফান্ড

কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বরাদ্দ ছাড়ের বিষয়ে তাদের সীমাবদ্ধতার কথা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

নথি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কুয়েত তহবিলের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু প্রকল্পের কাজ। এই সংস্থাটি একটি প্রকল্পের অর্থায়ন বিবেচনার সময়ে তার সঙ্গে সংযুক্ত অন্য কোনো প্রকল্পে অর্থায়ন বিবেচনা করে না। তাই তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু বাস্তবায়নকালে সেতুটির দুপাশের আট কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে অর্থ বরাদ্দে আপত্তি তুলেছে সংস্থাটি। সংযুক্ত বাড়তি কাজটির জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ৩.৪০ মিলিয়ন কেডি (কুয়েতি ডলার) অর্থায়নের অনুরোধ জানালে কুয়েত ফান্ড তাদের নীতিগত সীমাবদ্ধতার কথা জানায়। তার পরেও কর্ণফুলী সেতু প্রকল্পের কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রকল্পটির পরিচালক।

লেবুখালী সেতুর প্রকল্প পরিচালক জানান, এই প্রকল্পের কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে চলমান রয়েছে। প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য ওপেক এবং কুয়েত ফান্ডের অতিরিক্ত অর্থায়নপ্রাপ্তির আলোকে প্রকল্পের প্রথম সংশোধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে। পরিচালক আরো বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে কুয়েত ফান্ডের সঙ্গে দ্বিতীয় ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। তবে ওপেক ফান্ডের সঙ্গে অতিরিক্ত অর্থায়ন-সংক্রান্ত ঋণচুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত কুয়েত ফান্ড তাদের দ্বিতীয় ঋণচুক্তি কার্যকর করবে না। তাই ওপেক ফান্ডের একটি মিশন চলতি বছরে প্রকল্পটি এপ্রেইজাল করার সম্ভাবনা আছে। পরিচালক বলেন, প্রকল্প দলিল সংশোধনের ক্ষেত্রে ওপেক ফান্ডের অতিরিক্ত অর্থায়নের নিশ্চয়তা আবশ্যক; অন্যথায় প্রকল্পের কাজ নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন করা কঠিন হবে।

একইভাবে এসএএসইসি প্রকল্পের চিত্রই একই। সাউথ এশিয়ান উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক করপোরেশনের সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় বর্তমান জমি অধিগ্রহণ চলছে। প্রকল্পটি আবুধাবী তহবিলেন অর্থায়নে বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির জন্য আরো ২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের আবেদন জানানো হয়েছে। এখনো দাতা সংস্থার কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

আর তিস্তা নদীর ওপরে ব্রিজ ও সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি ওপেক ফান্ডের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু প্রকল্পের আসবাসপত্র, যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য সংস্থার অনুদানের জন্য সম্মতি বা অনাপত্তির জন্য প্রকল্প কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পত্র পাঠানো হলেও তার কোনো জবাব দেয়নি দাতা কর্তৃপক্ষ। আর শীতলক্ষ্য তৃতীয় সেতু ব্যয়বৃদ্ধির কারণে অতিরিক্ত ৭.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়ে পত্র দিলেও সৌদি ফান্ড কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া নেই। বাকি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে অতিরিক্ত অর্থ ছাড়ে গড়িমসি শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ১১ প্রকল্প।

এদিকে, বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের আগে দাতা সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা করে থাকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। শুরুতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মধ্যস্থতাকারী কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক ইআরডির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ শুরু হলে ইআরডিকে পাশ কাটিয়ে দাতা সংস্থার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যখন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন পড়ে, তখনই টানাপড়েন শুরু হয়। দাতা সংস্থার সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে তখন আবার প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ইআরডির শরণাপন্ন হন। এ নিয়ে দুটি সংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়ে যায়।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্প পরিচালকরা তাদের পাশ কাটিয়ে দাতা সংস্থার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় উন্নয়ন সহযোগী দেশ কিংবা সংস্থাসমূহের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়। গত ১১ মে ইআরডির অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ শামসুল আলম স্বাক্ষরিত পত্র পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist