নিজস্ব প্রতিবেদক
হোটেল জাকারিয়ায় ধর্ষণ
জুয়েলকে খুঁজছে পুলিশ
রাজধানীর মহাখালীতে হোটেল ‘জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনালে’ তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার ছয় মাস পর মামলা করলেন নির্যাতিত তরুণী। গত সোমবার ওই তরুণী বাদী হয়ে বনানী থানায় মাহমুদুল হাসান শাহিন ওরফে জুয়েল নামের এক যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেন। দীর্ঘদিন পেরিয়ে যাওয়ায় ফরেনসিক টেস্টে কোনো আলামত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই ঘটনার দিনে হোটেলের সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ এবং কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রমাণ উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
বনানীর হোটেল জাকারিয়ার ম্যানেজারের সহযোগীতায় ধর্ষণ করা হয় ২৯ বছর বয়সী তরুনীকে। এজন্য আগে থেকেই হোটেলের একটি রুম বুকিং দিয়ে রাখে মাহমুদুল্লাহ শাহিন নামে এক যুবক। ওই যুবককে গ্রেফতারের পর আরও তথ্য পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার এসআই সোহেল।
এদিকে গতকাল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস (ওসিসি) সেন্টারে ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ওসিসির সমন্বয়কারী ডা. বিলকিস বেগম জানান, ওই তরুণীর ফরেনসিক নমুনা সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে। এখন রিপোর্ট পেলেই তা দেওয়া হবে পুলিশের কাছে।
বনানী থানার ওসি ফরমান আলী জানান, ধর্ষণের অভিযোগকারী ওই তরুণী বলেন, তার সঙ্গে মাহমুদুল্লাহ শাহীন নামে এক যুবকের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরিচয়ের একপর্যায়ে ওই তরুণীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। বিয়ের কথা বলে গত বছরের ১৭ নভেম্বর ওই হোটেলটিতে নিয়ে আসেন। পরে সেখানে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ বলা হয়। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ওই তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা নিয়েছি। গতকাল তার পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই যুবককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, মামলা হওয়ার পর জাকারিয়ার মালিক, ম্যানেজার ও কর্মচারীকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ঘটনা অনেক আগের হওয়ায় হোটেল কর্তৃপক্ষ ধর্ষণের বিষয়টি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। তবে তরুণী অভিযোগ করেছেন, জাকারিয়ার ম্যানেজারের যোগসাজশে ওই হোটেলে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে জুয়েল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সোহেল রানা বলেন, ধর্ষিতা তরুণীর ফরেনসিক টেস্টের জন্য আলামত সংগ্রহ করা হবে। দীর্ঘদিন পার হওয়ায় ফরেনসিক রিপোর্টে প্রমাণ পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, আমরা ওই হোটেলে থেকে কিছু প্রমাণ উদ্ধারের চেষ্টা করছি। এ ছাড়া ওই আসামিকে গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে। আসামি গ্রেফতার হলেই ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
মামলায় ওই তরুণী উল্লেখ করেন, তিনি কাফরুলের একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। জুয়েল থাকেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায়। গত এক বছর আগে ফেসবুকের মাধ্যমে জুয়েলের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরই সূত্র ধরে গত বছরের ১৬ নভেম্বর জুয়েল ঢাকায় আসেন। পরে তারা দুজন ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে ঘুরে বেড়ান। কথা ছিল সেদিনই তারা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করবেন। কিন্তু পরে সিদ্ধান্ত হয় পরদিন অর্থাৎ ১৭ নভেম্বর তারা বিয়ে করবেন।
তরুণী মামলার অভিযোগে লেখেন, ১৭ নভেম্বর বিকেল ৪টার দিকে তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মহাখালীর হোটেল জাকারিয়ায় নিয়ে যায় জুয়েল। সেখানে রিসিপশনে তাকে স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে অজ্ঞাত রুমে নিয়ে যায়। রুমে নিয়ে জুয়েল জানায় একটা সমস্যা থাকার কারণে আজকে বিয়ে করা হচ্ছে না। তখন তিনি চলে আসতে চাইলে জুয়েল তাকে বের হতে না দিয়ে জোরপূর্বক আটকে রাখে। এরপর সন্ধ্যা ৭টার দিকে জুয়েল তাকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের অনুরোধ জানায়। একপর্যায়ে দুজনের সম্মতিতেই শারীরিক সম্পর্ক হয়। পরবর্তীতে তিনি ঘুমিয়ে যান। এই সুযোগে জুয়েল তার কিছু নগ্ন ছবি তুলে রাখে। পরদিন ১৮ নভেম্বর সকালে হোটেল থেকে তিনি চলে আসেন। এরপর একাধিকবার বিয়ের কথা বললেও জুয়েল তাতে রাজি হয়নি। উল্টো বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করে পুনরায় শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে চায়। না করলে সেই নগ্ন ছবিগুলো ইউটিউব ও ফেসবুকে আপলোড করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। মামলায় জুয়েলের পিতার নাম মৃত নজরুল ইসলাম, ঠিকানা কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর থানার ২নং রামগোপাল এলাকা উল্লেখ করা হয়েছে।
"