আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রেমের জন্য যা হারাবেন জাপানি রাজকন্যা
জাপানের স¤্রাট আকিহিতোর বড় নাতনি মাকো সাধারণ পরিবারের একজনকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজকীয় মর্যাদা হারাচ্ছেন-এ খবর প্রকাশের পর তা আলোড়ন তুলেছে বিশ্বজুড়ে। প্রেমের জন্য সব ছাড়তে হচ্ছে এই রাজকন্যাকে। হারাতে হবে অনেক কিছু।
যদিও জাপানের রাজপরিবারে এটা প্রথম ঘটনা নয়। এর আগে ২০০৫ সালে স¤্রাটের মেয়ে সায়াকো রাজপরিবারের বাইরে এক নগর পরিকল্পনাবিদকে বিয়ে করে রাজপরিবার ছেড়েছিলেন। এক যুগ পর ফুফুর পথ অনুসরণ করে নতুনভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন ২৫ বছর বয়সী মাকো। এ ঘটনায় জাপানের রাজকীয় উত্তরাধিকার নিয়ে বিতর্ক নতুনভাবে দানা বেঁধে উঠতে পারে।
রাজকন্যা মাকো এই প্রেমের জন্য কী কী হারাতে যাচ্ছেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, একটি আইনি প্রতিষ্ঠানের কর্মী কেই কোমুরোর (২৫) সঙ্গে আগামী বছর বিয়ের সম্ভাবনা রয়েছে রাজকন্যার। রাজপরিবারের নিয়ম অনুসারে, বিয়ের পরপরই মাকো হারাবেন তার রাজকীয় উপাধি। তার জীবনে আসবে নাটকীয় সব পরিবর্তন। তাকে রাজপরিবার ছেড়ে চলে যেতে হবে। স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে হবে রাজপরিবার থেকে দূরে কোনো স্থানে। তবে রাজকন্যা এককালীন কিছু অর্থ পাবেন, যা নিজেদের ভরণপোষণের কাজে লাগাতে পারবেন। তাকে সাধারণ নাগরিকদের মতো ভোট দিতে হবে এবং কর পরিশোধ করতে হবে। দোকানে যাওয়া, টুকিটাকি কেনাকাটাসহ নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে। আর মাকো দম্পতির সন্তানরা রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচিত হবে না।
রাজকন্যার এই প্রস্থানের অর্থ তাকে কিছু দায়িত্ব পালন থেকেও সরে দাঁড়াতে হবে। এর ফলে সা¤্রাজ্যে নারীর ভূমিকা ও উত্তরাধিকার নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হচ্ছে। ৮৩ বছর বয়সী স¤্রাট আকিহিতো ইতোমধ্যে এ পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর আভাস দিয়েছেন। নারী সদস্যরা সাধারণ নাগরিককে বিয়ে করে দূরের বাসিন্দা হয়ে গেলে সা¤্রাজ্যের অবস্থান আরো সংকুচিত হয়ে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে ১০ বছরের রাজকুমার হিসাহিতো একমাত্র ছেলে। যদি এ অবস্থার পরিবর্তন না হয়, রাজপরিবারের ভবিষ্যৎ তার সঙ্গেই শেষ হয়ে যাবে। জাপানের রাজপরিবার আইন ১৯৪৭ অনুসারে, রাজকন্যারা সাধারণ ব্যক্তিকে বিয়ে করলে রাজপরিবার ছাড়তে হয়। আবার বর্তমান রাজকন্যাকে বিয়ে করার মতো রাজপরিবারে কোনো পুরুষ সদস্যও নেই। তবে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে জাপানে ইতিবাচক জনমত রয়েছে। এ মাসের শুরুতে স্থানীয় কিয়োডো নিউজ জরিপ অনুসারে, নারী স¤্রাটের পক্ষে মত দিয়েছেন ৮৬ শতাংশ জাপানি। আর ৫৯ শতাংশ রাজকন্যাদের সন্তানদের মধ্য থেকেও স¤্রাট মনোনয়নের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন।
জাপানে স¤্রাট হচ্ছেন সাংবিধানিক শাসনকর্তা এবং দেশের প্রধান। বর্তমান স¤্রাট আকিহিতো সিংহাসনের ভার যুবরাজ নারুহিতোর ওপর ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনিই এখন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন।
জাপানি রাজকন্যা মাকোর বাগদানের বিষয়টি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়নি। তবে মনে হচ্ছে, এই তরুণী তার নতুন অবস্থানের বিষয়ে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। টোকিওতে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিশ্চিয়ান ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় তিনি ২০১২-১৩ সালে নয় মাস স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ ইউনিভার্সিটিতে পড়েন। এর পরের বছর তিনি যুক্তরাজ্যের লেস্টার ইউনিভার্সিটিতে আবাসিক হলে থেকে আর্ট মিউজিয়াম ও গ্যালারি স্টাডিজ বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। বর্তমানে তিনি টোকিও জাদুঘরে গবেষক হিসেবে কাজ করছেন এবং পিএইচডি ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করছেন।
"