চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রামে চার বোন যে কারণে জন্মান্ধ!
চট্টগ্রামের জন্মান্ধ চার বোনের রোগ শনাক্ত হয়েছে। তারা ‘লেব্যার কঞ্জেনিটাল অ্যামরোসিস’ রোগে আক্রান্ত। সুইজারল্যান্ড এবং সিঙ্গাপুরের কয়েকটি ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশে এই প্রথম জন্মান্ধ হওয়ার রোগটি শনাক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসকরা। তবে এই রোগের এখনো কোনো চিকিৎসা আবিষ্কার হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা।
জন্মান্ধ চার বোনের সবাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী। তিনজন পটিয়ার তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাদের রোগ শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন মাহমুদ। তবে রোগ শনাক্তের মূল কাজটি সম্পন্ন করেন সুইজারল্যান্ডের লসন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল জিনেটিক ল্যাবপ্রধান বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডা. জহিরুল আলম ভূঁইয়া। মঙ্গলবার নগরীর একটি অভিজাত ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে চার বোনের রোগ শনাক্তের বিষয়টি প্রকাশ করেন এই দুজন চিকিৎসক।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন মাহমুদ বলেন, ‘ছয় মাস ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমরা রোগ শনাক্ত করতে পেরেছি। বাংলাদেশে এ ধরনের রোগী আগেও ছিল, এখনো আছে। কিন্তু তারা কখনো ফোকাস হয়নি। সম্ভবত তারা চার বোন বলে বিষয়টি নজরে এসেছে। এজন্য প্রথমবারের মতো জন্মান্ধ হওয়ার রোগ শনাক্ত করা গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রত্যেকের শরীরে ২২-২৩ হাজার জিন আছে। সিঙ্গাপুরের ল্যাবে ২৩ হাজার জিন স্ক্রিনিং করার পর এসপিএটিএ-৭ নামে একটি জিন পেলাম, যেটা নন-ফাংশনাল। এই জিন চোখের রেটিনা থেকে ব্রেইনের মধ্যে সিগন্যাল দেওয়ার যে ক্ষমতা, তা নষ্ট করে দিয়েছে। তারা বাবার কাছ থেকেও খারাপ জিনটা পেয়েছে। মায়ের কাছ থেকেও খারাপ জিনটা পেয়েছে। কারণ, তাদের বাবা-মা আপন খালাতো ভাইবোন। তারা হয়তো জন্ম থেকে অথবা জন্মানোর মাস দুয়েকের মধ্যে অন্ধ হয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মো. আল ফোরকান বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে জিন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য বিয়ের আগে পুরুষ কিংবা মহিলা সবার স্ক্রিনিং আউট করে নেওয়া উচিত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ল্যাবে মাত্র ২-৩ হাজার টাকা খরচে আমরা এটা করে দিচ্ছি।’
বাংলাদেশ পিডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) উদ্যোগে আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে জন্মান্ধ তৃতীয় বোন উম্মে তাসলিমা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা অন্ধত্বকে জয় করেছি। তাই আমাদের কখনোই ইচ্ছা ছিল না, আমরা এই রোগ শনাক্ত করাব। তবে রোগ শনাক্ত হওয়াটা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যথেষ্টভাবে কাজ করবে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানাটমি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. লায়লা আরজুমান্দ বানু।
"