জাহাঙ্গীর হোসেন, পটুয়াখালী

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

পটুয়াখালীর নদ-নদী

ডুবোচরে নাব্যতা সংকট হুমকিতে নৌ-চলাচল

পটুয়াখালী জেলার উপকূলীয় এলাকায় জালের মতো বিস্তৃত রয়েছে অর্ধশত নদ-নদী। একসময় এসব নদনদী ছিল অসম্ভব খর¯্রােতা ও নাব্য। এখন আর সে দিন নেই। নানা কারণে নদীগুলো এখন অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। সেখানে দেখা দিয়েছে তীব্র নাব্যতা সঙ্কট, জন্ম নিয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। ব্যাহত হয়েছে নৌচলাচল। এর প্রভাব পড়ছে কৃষিভিত্তিক উপকূলীয় চরাঞ্চলের জীবন জীবিকার ওপর।

উপকূলীয় চর কাজল এলাকার জিনতলা চ্যানেলটি পলিমাটি জমে ইতোমধ্যেই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কাউখালী বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর অপর চ্যানেলটি, পানপট্টি থেকে চালিতাবুনিয়া ও কোড়ালিয়া ডুবোচরের কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এতে গলাচিপা-চরমোন্তাজ ও উলানিয়া-চরমোন্তাজ রুটে নৌ চলাচল পুরোপুরি অচল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ রুটে বাঁশের লগির সাহায্যে পানি মেপে মেপে নদী অতিক্রম করছে ট্রলার বা লঞ্চ চালকরা। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল। লঞ্চ ও ট্রলার যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ।

সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ করেছেন লঞ্চচালকরা। তারা জানান, উপজেলার যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। উপজেলা সদরের সঙ্গে ইউনিয়ন ও গ্রামগুলোর মধ্যে সরাসরি সড়ক যোড়াযোগ এখনো গড়ে ওঠেনি। উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় চার লাখ লোকের বাস। এর মধ্যে সাতটি ইউনিয়ন মূল ভূখন্ড থেকে পুরোপুরি আলাদা। বিচ্ছিন্ন এসব ইউনিয়নের আওতায় শতাধিক চর রয়েছে। এর অর্ধশতাধিক চরে গত তিন দশক ধরে মানব বসতি গড়ে উঠেছে। সেখানকার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ট্রলার অথবা নৌকা। জরুরি প্রয়োজনেও একমাত্র ভরসা ট্রলার। অসুস্থ হয়ে পড়লেও ট্রলারের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময় ধরে। এ ছাড়া নদীগুলোতে জেগে ওঠা চরে ও সৃষ্ট ডুবোচরে ব্যাহত হচ্ছে নৌ-চলাচল। এ ছাড়া পরিবর্তিত হচ্ছে নদীর গতিপথ, ভাঙছে লোকালয়, জনপথ। চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে জমি, বাড়ি, বাগান, বাজার ও পুকুরসহ সহায়-সম্পদ। সহায়-সম্পদ হারিয়ে অনেক পরিবার চিরতরে উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে।

উপজেলার বুড়াগৌরাঙ্গ, দাড়ছিড়া, রামনাবাদ, আগুমুখা, ডিগ্রিসহ সব নদী ও মোহনায় সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ডুবোচর। এককালের রুদ্ররূপী আগুনমুখা নদী কালের আবর্তনে মৃতপ্রায় নদীতে পরিণত হয়েছে। সাত নদীর মিলন স্থলে ঠাঁই করেছে বিশাল চর ও বনভূমি। প্রমত্তা আগুনমুখা এখন শুধুই ইতিহাস। এ নদীর অপর তীরেও জেগেছে পক্ষিয়া ও চরকারফারমা। নদীর মাঝ বরাবর ছোট্ট একটি চ্যানেল দিয়ে কোনোমতে চলাচল করছে লঞ্চ ও ট্রলার। এ চ্যানেল দিয়ে শুধু জোয়ারের সময় নৌযান চলাচল করতে পারে। ভাটার সময় সেখান দিয়ে লঞ্চ-ট্রলার তো দূরের কথা সাধারণ নৌকার চলাচলও দুরূহ হয়ে পড়ে।

গত কয়েক বছরে বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর চরকাজল সংলগ্ন এলাকায় বেশ কয়টি ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব ডুবোচরের সীমানা চিহ্নিত করার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। প্রায়ই নৌযানগুলোকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে দেখা যায়। এর ফলে যাত্রীদের পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ। ডুবোচরে সৃষ্ট নাব্যতা সঙ্কটে শুধু নৌ চলাচলই নয়, ফসল উৎপাদনেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। প্রভাব পড়ছে কৃষিনির্ভর গলাচিপার উপকূলীয় চরাঞ্চলের জীবন জীবিকার ওপর।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist