মুহাজিরুল ইসলাম রাহাত, সিলেট
সিলেটে নিরাপত্তার অভাবে বাড়ছে পর্যটকের মৃত্যু
সিলেটের পর্যটন কেন্দ্র জাফলং। পাহাড়, টিলা আর চা বাগানসমৃদ্ধ সীমান্তঘেঁষা প্রকৃতিকন্যা এই জাফলংয়ে জড়িয়ে আছে অন্যরকম এক বিষাদ। শান্ত এ প্রকৃতিকন্যা যেন হুট করে হয়ে ওঠে ‘প্রাণহরণকারী’। জাফলংয়ের স্বচ্ছ পানির নদী পিয়াইনের চোরাবালিতে মঝে-মধ্যেই প্রাণহানি ঘটে চলেছে। জাফলং ছাড়াও সিলেটের বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে বিছনাকান্দি, লালাখাল ও লোভাছড়া। গত এক দশকে এ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে অন্তত অর্ধশত তাজা প্রাণের অকাল মরণ হয়েছে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাবে ক্রমাগত বাড়ছে প্রাণহানি। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর তালিকা
গত এক দশকে পিয়াইন নদীতে ডুবে কত জন পর্যটকের প্রাণহানি ঘটেছে, সে পরিসংখ্যান নেই সরকারি নথিতে। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ১০ বছরে পিয়াইনে অন্তত ৩৫ জন পর্যটকের মৃত্যু ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পর্যটক মৃত্যুর কারণগুলো এখনই খতিয়ে দেখতে হবে। বাড়াতে হবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা। ২০০৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পিয়াইন নদীতে ডুবে মারা যান সিলেটের গোয়াইনঘাটের মুসা মিয়া। একই বছরের ১৬ আগস্ট একই উপজেলার ফখরুল ইসলাম, ২০০৮ সালের ৯ নভেম্বর ঢাকার দিলশাদ আহমেদ, ২০০৯ সালের ২৬ জানুয়ারি হবিগঞ্জের ইউনুস মিয়া, ৮ মে ঢাকার ফারুক আহমদ, ২১ জুন নরসিংদীর সজীব মিয়া পিয়াইনে ডুবে মারা যান। ২০১০ সালের ২৩ মার্চ ঢাকার খিলগাঁওয়ের তারেক আহমদ, একই বছরের ২০ মে গোয়াইনঘাটের রফিকুল ইসলাম ও গৌরাঙ্গ কর্মকার, ২২ মে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের মুস্তাকিন তালুকদার ও ঢাকার শাহরিয়ার আহমদ রাব্বি, ১২ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠির রুহুল আমিন খান রুমি পিয়াইনের বুকে লাশ হন। ২০১২ সালের ২২ আগস্ট ঢাকার ফাহাদ উদ্দিন, ৩০ আগস্ট মৌলভীবাজারের হিমেল রাজ, ২০১৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার শুভ আহমদ, ২৫ অক্টোবর ঢাকার ইমরান হোসেন সাঁতার কাটতে গিয়ে পিয়াইনে লাশ হন। ২০১৪ সালের ৩০ মে মাদারীপুর জেলার সদর উপজেলার চলকিপুরের মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আগস্ট শ্রীমঙ্গলের শাকিল মিয়া, মামুন হোসেন, সাদেক হোসেন এবং সিলেটের কামরুল ইসলাম পিয়াইনের বুকে লাশ হন। ওই মাসে অজ্ঞাতনামা আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত বছরের ২৪ ও ২৫ জুলাই পিয়াইনে মারা যান ঢাকার কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগ ঘোষ ও অন্তর। এর কিছুদিন পর কুমিল্লার ইব্রাহিম আলী পিয়াইন নদীতে ডুবে মারা যান। এদিকে, বিছনাকান্দি, লালাখাল ও লোভাছড়ায় গত এক দশকে অন্তত ১৫ জন পর্যটক পানিতে ডুবে মারা গেছেন। সর্বশেষ ৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার লালাখালে গোসল করতে নেমে কিশোরগঞ্জের এক মেডিক্যাল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এতো প্রাণহানির পেছনে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবকে দায়ী করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন শুধু মাইকিং করে পর্যটকদের সতর্ক করে দায় সারে বলে তাদের অভিযোগ। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম এ ব্যাপারে বলেন, ‘জাফলং, লালাখাল, লোভাছড়া প্রভৃতি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। এসব পর্যটন কেন্দ্রে ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োগ করা জরুরি।’
"