নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

রাজউকের ৮০ কাঠা জমি যুবলীগ নেতার দখলে

রাজধানীর মডেল টাউন উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতায় রাজউকের প্রায় ৮০ কাঠা জমি গিলে খাচ্ছে একটি চক্র। দখল করা জায়গায় ফার্নিচার মার্কেট, কাঁচাবাজারসহ নানা স্থাপনা তৈরি করে মাসে আদায় করছেন কোটি টাকা ভাড়া। আর এ টাকা আদায়ের নেতৃত্বে আছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতার ভাগিনা পরিচয়দানকারী যুবলীগ নেতা কবির হাসান।

সরেজমিন ফার্নিচার মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, উত্তরার সোনারগাঁ জনপদ রোডের উভয় পাশে রাজউকের প্রায় ৮০ কাঠা জায়গার ওপর সুবিশাল মার্কেটে গড়ে তোলা হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরা দ্বিতীয় প্রকল্প এলাকায় এখনো রাজউকের বেশ কিছু খালি প্লট বরাদ্দের বাকি আছে। আবার অনেকগুলো প্লটে মামলাও চলছে। এসব খালি থাকা প্লটে গত বছরের শেষ দিকে গড়ে তোলা হয় মার্কেটসহ স্থায়ী স্থাপনা। রাজউকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহায়তা নিয়ে এক ধরনের বিনা বাধায় দখলে নেয় চক্রটি। দখলে জড়িত এ চক্রের প্রধান হচ্ছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ হাবিব হাসানের আপন ভাগিনা কবির হাসান। তিনি নিজে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন লাগালেও যুবলীগে কোনো পদ-পদবি নেই তার। তবে তার মামা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় রাজনীতিতে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন তিনি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তার মামার নামের শেষ অংশ নিজের নামে জুড়ে তিনিও সুবিধা নিচ্ছেন। তার বাবার নাম আবুল হাশেম, উত্তরা হাই স্কুলে তিনি ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছেন। সেখানে তার নাম মো. কবির হোসেন লেখা আছে। অভিযোগ আছে, কবিরের দখল মিশনে যুক্ত রয়েছেন স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কর্মী পরিচয়দানকারী জজ মিয়া। উত্তরার বিভিন্ন জায়গায় তিনিও কাউন্সিলরের নাম ভাঙিয়ে দখল ও চাঁদাবাজি করছেন।

অভিযোগ আছে, অবৈধভাবে গড়ে উঠা মার্কেটগুলোতে ২শরও বেশি দোকান থেকে দখলকারীরা অগ্রিম নিয়েছেন প্রায় ২ কোটি টাকা। এখন প্রতি মাসে সেই দোকানগুলো থেকে ভাড়া উঠে প্রায় কোটি টাকা। অনুসন্ধানে জানা যায়, এ টাকা থেকে উত্তরা পশ্চিম থানায় মাসে দুই লক্ষাধিক টাকা দেওয়া হয়। এর রাইরে রাজউকের কর্মকর্তাদের দেওয়া হয় মোটা অঙ্কের টাকা। রাজউকের টাকা লেনদেন হয় সেখানে কর্মরত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ফারুকের মাধ্যমে। ফারুকের মাধ্যমে উত্তরা দ্বিতীয় প্রকল্পের পরিচালকও অর্থ পান বলে জানা যায়। রাজউকের মাঠপর্যায়ের সুপারভাইজারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে এ জায়গাগুলোতে টুকটাক টং দোকান বসত। সেখান থেকে আমরা গরিব মানুষরা অল্পস্বল্প কিছু টাকা পেতাম, কিন্তু এখানে বড় স্যারেরা আসেন। তাই আমরা সেখানে যাই না।

উত্তরা পশ্চিম থানা টাকা নিয়ে ম্যানেজ হয়ে আছে কবির ও তার লোকজনের কাছেÑএমন অভিযোগের ব্যাপারে উত্তরা পশ্চিম থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এগুলো রাজউকের ব্যাপার, এখানে আমাদের নাম আসবে কেন। সুবিধা নেওয়া ব্যাপারটি তিনি অস্বীকার করেন।’

দেখা গেছে, ৮০ কাঠা জায়গার ওপর স্থায়ীভাবে নির্মিত কাঁচাবাজার এবং ফার্নিচার বাজারে নিউ রূপসী বাংলা ফার্নিচার, ডিজিটাল ফার্নিচার, সুরাইয়া ফার্নিচার মার্ট, ভাই ভাই ফার্নিচার, জামালপুর ফার্নিচার, ইয়াসমীন ফার্নিচার, সাদিয়া ফার্নিচার, মায়ের দোয়া ফার্নিচার, ভ্যারাইটিস ফার্নিচার, ইসলাম ফার্নিচার ও মা ফার্নিচারসহ শতাধিক বড় বড় ফার্নিচার দোকানের পুরনো মালামাল মূল সড়কের ওপর ফেলে রাখা হয়েছে। যাতে সংশ্লিষ্ট রাস্তায় দিনভর যানজট লেগে থাকছে। এসব দেখেও কিছুই বলছে না স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, দখলবাজদের এসব অবৈধ টাকা-পয়সার উৎসের সৃষ্টি হওয়ায় উত্তরায় বিভিন্ন সেক্টরে নানা কিশোর গ্রুপের জন্ম হচ্ছে। এসব গ্রুপকে মিছিলে নেওয়ার নামে দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা। বেপরোয়া এসব কিশোর আর্থিক সহযোগিতা পেয়েই ভয়ংকর হয়ে উঠে। মেতে থাকে খুন-খারাপিতে।

রাজউকের উপসহকারী প্রকৌশলী ফারুক বলেন, তিনি এসবের কিছু জানেন না। এসব বিষয় নিয়ে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

আপনারা উত্তরার বাসাবাড়িতে এক বা দুই ফুট জায়গা দখলমুক্ত করতে প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে থাকেন অথচ কয়েক বিঘা জমিতে দখলবাজরা স্থায়ী স্থাপনা তৈরি করছে, এগুলোকে উচ্ছেদ করছেন না কেন, জবাবে তিনি শুধু বলেন, ‘আপনি এসব বিষয় নিয়া আমাদের প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেন। আমিও চাই উচ্ছেদ হোক। তবে কেন উচ্ছেদ হয় না, তা বলতে পারব না। আপনারা সাংবাদিক ওপরে কথা বলেন। আমি বলতে গিয়ে বিপদে পড়ব।’

এদিকে কবিরের সহযোগী জজ মিয়া প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি ভাই দখলবাজ না, আমি এখানের একজন দোকানদার মাত্র। আমার দোকানের নাম মা ফার্নিচার। আমিও এখানে ভাড়া দিয়ে থাকি। কাকে দেন ভাড়াÑএমন বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

মহানগর উত্তরের নেতারা জানান, কবির যুবলীগের কেউ নন, তাই তার ব্যাপারে কোনো কথা বলতে রাজি নন তারা। দখল বিষয়ে কবিরের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এসবের কিছু জানি না। আমার নামে কে বা কাহারা জায়গা দখল করেছে, তাও জানি না। যারা আপনার নাম ব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না, জবাবে তিনি কোনো সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি। এ বিষয়ে তার মামা ও আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিব হাসান বলেন, ‘কবির হোসেন বা কবির হাসান নামে আমার কোনো ভাগিনা নেই। তাই তার ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে চাই না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist