চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২০ জানুয়ারি, ২০১৭

দেশে বিচারকের ৩৭০ পদ খালি

প্রধান বিচারপতি

দেশের ৩৭০টি পদে বিচারক নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নতুন ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।

প্রধান বিচারপতি বলেন, দেশে মামলার বিপরীতে বিচারকের অনেক স্বল্পতা আছে। পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় আমাদের অনেক বিচারক কম আছে।

এমনকি নেপালের মতো গরিব দেশের তুলনায় মানুষ ও মামলার সংখ্যা বিবেচনায় আমাদের দেশে অর্ধেকের মতো বিচারক আছে। ৩৭০টি পদে বিচারক নেই।

তিনি বলেন, একটা বিচারক নিয়োগ করতে অনেক প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। নিয়োগ করতে বছর খানেক লাগে একটা বিচারক। এরপরে প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বছরখানেক দেরি হয়ে যায়। পুলিশ ভেরিফিকেশনে বেশ সময় লেগে যায়। একজন বিচারককে বসিয়ে দিলে তো তিনি বিচারক হয়ে যান না। তার অনেক দিনের প্রশিক্ষণের দরকার। অনেক সময় দরকার। বিচারকের পরিপক্বতা আসতে আসতে ৭-৮ থেকে ১০ বছর লেগে যায়। এর আগ পর্যন্ত তিনি সাময়িক কিছু শিক্ষাগ্রহণ করেন।

জুডিশিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের জন্য নতুন ভবন তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিচারকদের জন্য জুডিশিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট আছে, সেটা কবুতরের ঘরের মতো। নতুন বিচারকদের জন্য ৬ মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু সেটা ভালোভাবে দুই মাসও করা যায় না। ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে বিচারকরা যেখানে থাকেন, সেগুলো ছোট ছোট ঘর, কবুতরের ঘর। তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা নেই। নারী ও পুরুষ জজদের জন্য আলাদা ডরমিটরি দরকার। জুডিশিয়াল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গায় নতুন ভবন তৈরির জন্য আমি আইনমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। এটা করা না গেলে আমাদের বিচারকদের প্রকৃত বিচারক হিসেবে গড়ে তুলতে পারব না।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গিয়েছে। তাদের বিচারকরা আগ্রহ প্রকাশ করেছেন আমাদের এখানে এসে ট্রেনিং নেওয়ার জন্য। আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া থেকে বিচারকরা আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু এমন একটা পরিবেশে আমাদের প্রশিক্ষণ হয় যে, নিজেদেরই লজ্জা লাগে। আমাদের বিচারক স্বল্পতা আছে। এরপরও আফগানিস্তান থেকে বলেছে, তাদের বিচারকদেরকে ট্রেনিং দেওয়ার জন্য। আমি বলেছি, আমরা ট্রেনিং দেব। অর্থাৎ আমাদের বিচার বিভাগ আস্থা অর্জন করেছে। এতে শুধু বিচারকদের না, বিজ্ঞ আইনজীবীদেরও অবদান আছে।

ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠান দাবি জানিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি নেই। পৃথিবীর প্রত্যেকটি দেশে ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি আছে। ভারতে এখন একজন বিচারক অতিরিক্ত জজ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরে তাকে বাধ্যতামূলকভাবে ৬ মাসের ট্রেনিং নিতে হয়। আমাদের দেশে উচ্চ আদালতের ৮০ ভাগ বিচারক নেওয়া হয় আইনজীবী থেকে। তাদের আইন পেশার অভিজ্ঞতা থাকে, কিন্তু রায় লেখা জুডিশিয়াল এথিকসসহ ব্যবহারিক ট্রেনিং থাকে না। তাই আমি সরকারের কাছে আবেদন করব, আপনারা বিষয়টা সুবিবেচনায় রাখবেন। ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি খুব দরকার। এটা হতে দেরি হওয়ায়, আমাদের কিছু বিচারকের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে ভারতের উচ্চ আদালত। কিন্তু এটা একটা স্বাধীন দেশের জন্য দুঃখজনক যে, আমাদের দেশের উচ্চ আদালতের বিচারকদের অন্য একটি দেশের বিচারকরা ট্রেনিং দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের দেশে বেশ যোগ্য বিচারক আছেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক আছেন, প্রতিষ্ঠিত বিচারকরা ট্রেনিং দিতে পারেন। কিন্তু একটা একাডেমি ছাড়া কোনোভাবেই এটা সম্ভব না। পুলিশ প্রশাসনের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে, সেনাবাহিনীর জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু বিচারকদের জন্য নেই। আমি মনে করি, সবার চেয়ে বিচারকদের আরো বেশি ট্রেনিংয়ের দরকার।

বুধবার চট্টগ্রাম আদালতে ভাঙচুরের ঘটনাকে ন্যক্কারজনক আখ্যা দিয়ে আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি নিজেকে এত দিন গর্ববোধ করতাম। যে প্রথমে আমি একজন আইনজীবী। এরপর আমার পরিচয় বিচারক। গতকাল এখানে একটা ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটলো। আইনজীবীদের একটু বিচ্যুতি হলে, রক্তক্ষরণ হয়, আমার তো রক্তক্ষরণ হচ্ছে এখন। আপনাদের কাজ অপরাধীদের রক্ষা করা নয়। আপনাদের কাজ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। টাকা নিয়ে সেবা দেওয়ার রীতি আইনপেশায় ছিল না, যেটা এখন হয়ে গেছে। আইনজীবীরা কালো যে গাউন পড়েন তার পেছনে একটা পকেট থাকে। মক্কেল খুশি হয়ে কিছু তার অজান্তে পেছনের পকেটে দেবে। এটাই হলো এই মহান পেশার আদর্শ। মহান এই পেশাকে আপনারা সমুন্নত রাখবেন। আইনের শাসনব্যবস্থার আপনারাই ধারক-বাহক। আপনারা যদি চুল পরিমাণ বিচ্যুত হন। তাহলে কে হাল ধরবে? আমরা বিচারকরা? আমরা বিচারকরা কোনো দিনই একটা লাইন লিখতে পারব না আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া। আপনারাই আমাদের প্রাণ।

চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুন্সী মো. মশিয়র রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ হেলাল চৌধুরী।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist