নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ আগস্ট, ২০২০

পশুর চামড়া বর্জ্য নয়

* প্রোটিনের ঘাটতি মেটানোর ভালো বিকল্প * মাংসের মতো খাওয়া সম্ভব

দেশে বর্জ্যে পরিণত হয়েছে লাখ লাখ কোরবানির পশুর চামড়া। অথচ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রয়েছে চামড়া খাওয়ার চল। কোলাজেন এবং প্রোটিনের উচ্চমাত্রার কারণে এটি স্বাস্থ্যকর। ইসলামী চিন্তাবিদরাও বলেন, পশুর চামড়া খাওয়ার অনুমতি আছে ইসলামেও। অপচয় ঠেকাতে বিকল্প এ ব্যবহারের দিকে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্বে দিন দিনই বাড়ছে গরুর চামড়া থেকে পাওয়া মাংসের তৈরি খাবারের। একেক দেশে এই খাবারের একেক নাম। মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ায় কিকিল, নাইজেরিয়ার মেলে পনমো নামে। আর মার্কিন মুল্লুকে এর নাম কেপোমো।

একেকটি বড় গরুর চামড়া থেকে মাংস পাওয়া যায় ১০ থেকে ১৫ কেজি। ৫০০ টাকা কেজি ধরলে একেকটি চামড়ার বাজারদর দাঁড়ায় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। অথচ এ বছরও দেশে নষ্ট হয়েছে কোটি কোটি টাকার কোরবানির চামড়া। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে চামড়া হতে পারে ভালো বিকল্প। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সবুর আহমেদ বলেন, এটাকে আমি চামড়া বলব না মাংস বলব। এটি ভুঁড়ির মতো পরিষ্কার করে কেটে মাংসের মতো রান্না করে খাওয়া সম্ভব।

ইসলামী চিন্তাবিদ আবুল কাশেম গাজী জানান, ইসলাম ধর্মেও চামড়া খাওয়াতে নেই বিধি নিষেধ। এটি না খেয়ে ফেলে দেওয়াটা বরং অপচয়।

মেয়েদের প্রসাধনীসহ বিভিন্ন কাজে চামড়ার বিকল্প ব্যবহার বাড়াতে পারলে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখার পাশাপাশি অপচয় রোধ করা যাবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের।

তারা বলেন, খাদ্যমান হিসেবে গরুর চামড়া একেবারে মন্দ নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর চামড়ায় ২২৫ কিলো ক্যালোরি শক্তি থাকে। উপাদান হিসেবে এই ১০০ গ্রামে ৪৭ গ্রাম প্রোটিন, ৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১ গ্রাম চর্বি, ০.০২ গ্রাম ফাইবার এবং ৪৫ গ্রাম পানি থাকে। গরুর চামড়ার প্রোটিন সাধারণত জিলাটিন হিসেবে থাকে। জিলাটিন হাড় এবং ত্বকের গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যদিও গরুর চামড়ায় ভিটামিন এবং মিনারেল থাকে না বললেই চলে। তবে খুব সামান্য পরিমাণ চর্বি থাকায় শরীরে কোনো ধরনের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না।

অধ্যাপক সবুর আহমেদ বলেন, পশুর চামড়া খাবার হিসেবে প্রস্তুত করা একটু ঝামেলার কাজ। গরু-ছাগলের ভুঁড়ি খাবার হিসেবে প্রস্তুত করতেও ঝামেলা কম নয়। চামড়া থেকে লোম ছাড়ানোর পদ্ধতি খুব সহজেই ইউটিউব পাওয়া যাবে। লোম ছাড়ানোর পর এটি নিজস্ব স্বাদ অনুযায়ী বিভিন্ন মসলা দিয়ে কারি বা ভাজা বা স্যুপ হিসেবে খাওয়া যায়। এগুলো ইন্দোনেশিয়া/মালয়েশিয়ায় কিকিল (করশরষ), বা নাইজেরিয়ায় পনমো (চড়হসড়) খাবার হিসেবে খুব জনপ্রিয়।

তিনি আরো বলেন, গত কয়েক বছরে আমাদের দেশে গরু-ছাগলের চামড়ার দাম একেবারে কমে গেছে। তাই কোরবানির পরে অনেকেই পশুর চামড়া মাটিতে পুঁতে রাখছেন বা ফেলে দিচ্ছেন যা নিতান্তই সম্পদের অপচয়। অথচ খাবার সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটিয়ে আমরা এই অপচয় থেকে বিরত থাকতে পারি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close