ফরিদপুর প্রতিনিধি

  ১৩ জুলাই, ২০২০

মধুখালীর শিশু ফয়সাল হত্যা

৯ বছর পর মামলা সিআইডিতে

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের ডুমাইন গ্রামের ১০ বছরের শিশু ফয়সাল হত্যাকা-ের ৯ বছর পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ওই মামলায় তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। আর তদন্তে নেমে এরই মধ্যে সিআইডির হাতে নতুন করে গ্রেফতার হয়েছে দুজন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল রোববার দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। শিগগিরই ওই মামলার তদন্ত শেষ হবে জানিয়েছে সিআইডি।

গ্রেফতার ওই দুজন হলো ডুমাইনের জসীম মোল্যা (৩৫) ও তুজাম বিশ্বাস (৫০)। গত ২ জুলাই সিআইডির অভিযানে পৃথকভাবে তাদের ডুমাইন গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গেছে, তুজাম বিশ্বাস একটি রাইস মিলের মালিক। শিশু ফয়সালের লাশ উদ্ধারের পর সময় তার প্যান্টে লেগে থাকা কুড়া ও পোড়া মবিলের সূত্র ধরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যার আগে তার রাইস মিলে নিয়ে ফয়সালকে নির্যাতন করা হয় বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ফয়সালের লাশ উদ্ধারের পরপর তার রাইস মিলটি সিল করে দিয়েছিল পুলিশ। তবে সে সময় পরে আর তার বিরুদ্ধে তদন্ত এগোয়নি। অন্যদিকে, গ্রেফতার জসীম মোল্যা পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের নাইটগার্ড ছিল। ফয়সালের লাশ উদ্ধারের পর সেও গা-ঢাকা দিয়েছিল।

২০১১ সালের ১৫ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে ডুমাইন মাঠে ফুটবল খেলা দেখার সময় পাখি মারার কথা বলে দুর্বৃত্তরা ফয়সালকে সবার সামনেই ডেকে নিয়ে অপহরণ করে। এরপর তার শরীর থেকে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে নিয়ে পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সেফটিং ট্যাংকে লাশ গুম করে।

মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবদুস সাত্তারের সন্তান ফয়সাল চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে ফয়সাল সবার ছোট। ফয়সাল নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবার করা জিডির সূত্র ধরে ওই বছরের ১৭ এপ্রিল গ্রেফতার হয় প্রধান আসামি জাহাঙ্গীর আলম পলাশ। তাকে দুদিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর ৩০ এপ্রিল গ্রেফতার হয় অপর আসামি মুরাদ বিশ^াস। তাকেও দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর ১২ ও ১৩ মে তাদের দুজনকে আবার একসঙ্গে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। এরপরই ১৫ মে ফয়সালের লাশের সন্ধান মিলে। মাত্র চার মাসের মধ্যে তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়।

ফয়সাল অপহরণ ও হত্যা মামলার তদন্ত শুরু হতেই আপত্তি তুলে নিহতের পরিবার। আসামিদের রক্ষার জন্য তড়িঘড়ি করে চার্জশিট দেওয়ারও অভিযোগ করে নিম্ন আদালতে তারা নারাজি দেলেও না-মঞ্জুর হয়। পরে ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন তারা। ওই আপিলের শুনানি শেষে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. রেজাউদ্দিন খান সমন্বয়ে বেঞ্চ ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর মামলাটি আবার তদন্তের জন্য ফরিদপুর সিআইডিকে নির্দেশ দেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই আদেশ পেয়ে ফরিদপুর সিআইডি মামলা তদন্ত শুরু করে। এরপর নতুন করে গ্রেফতার হয় দুজন।

মামলার বাদী ফয়সালের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তার শেখ বলেন, ফয়সাল হত্যাকা-ের পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার পলাশ ও মুরাদকে রিমান্ডে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেলেও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়নি সে সময়। লাশ উদ্ধারের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, তিনি স্বপ্নযোগে লাশের সন্ধান জেনে ডোম নিয়ে এসেছেন। সুরতহাল রিপোর্টেও তিনি কিছু তথ্য গোপন করেন। গত ৭ জুলাই ওই তদন্তকারী কর্মকর্তাকেও জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেছি সিআইডিতে। তিনি বলেন, ফয়সালকে হত্যার পর কিডনিসহ শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করে দেয় খুনিরা। পুলিশের তদন্তে তাদের নানা অপকর্ম বেরিয়ে আসে। দৃশ্যমান কোনো আয় না থাকলেও তাদের বাড়িতে বিল্ডিং উঠছে! প্রথম যে দুজন আসামি গ্রেফতার হয়েছিল, তারা এরই মধ্যে জামিনে বেরিয়ে কয়েকজন সাক্ষীকে ম্যানেজ করে ফেলেছে।

ফরিদপুরে সিআইডির এসআই মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, মামলার তদন্ত চলছে। আমরা এই মামলার তদন্তে নেমে দুজনকে গ্রেফতার করেছি। তাদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আশা করি শিগগিরই অধিকতর তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারব। এ ব্যাপারে তদন্তের স্বার্থে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার সিআইডি মাসুম বিল্লাহ তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্তের জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। সিআইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে নতুন করে মামলাটির তদন্ত করবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close