নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ জুলাই, ২০২০

করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে দারিদ্র্য বাড়বে

স্বাস্থ্যমন্ত্রী

করোনার কারণে দারিদ্র্যসীমা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

গতকাল শনিবার বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মহামারি কোভিড-১৯-কে প্রতিরোধ করি, নারী ও কিশোরীর সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করি।’ পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের শ্রেষ্ঠ কর্মী ও মিডিয়াকর্মীদের ফেলোশিপ দেওয়া হয়।

মন্ত্রী আরো বলেন, কোভিড-১৯-এর কারণে কিছুটা হলেও স্বাস্থ্যসেবাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাঠকর্মীদের চলাফেরা ব্যাহত হচ্ছে, এতে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি কিছুটা কমেছে এটি উদ্বেগের। লকডাউন থাকা এবং যানবাহন না পাওয়ায় অনেকে আসছেন না। আমরা চাই না একজন মা সেবার অভাবে মৃত্যুবরণ করুক।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সুন্দর স্বাস্থ্যসেবার কারণে মৃত্যুর হার অনেক কম। কোভিড-১৯ কারণে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়েছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে একই অবস্থা। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা, ডাক্তার নার্স, যারা ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’

মন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছিল। অনেক পুরস্কার পেয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। গড় আয়ু বেড়েছে। মাতৃমৃত্যুর হার অনেক কমে গেছে। ভ্যাকসিন হিরো হিসেবে খেতাব পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আমরা সকলে মিলে অর্জন করেছি। সকলে মিলে এই সাফল্য ধরে রাখব। আমরা যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারি, সেদিকে নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, আপনারা অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। ভিড় এড়িয়ে চলবেন। কোভিড-১৯-এর এখনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাও নেই। তবে চিকিৎসার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এতে আমরা ফল পাচ্ছি।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এফডব্লিউএ এফডব্লিউপি এই কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কোভিডের মধ্যেও তারা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, সচেতন করছেন। অর্থনৈতিক চাপের কারণে বাল্যবিবাহ হয়। আপনারা জানেন ৫০ হাজার পরিবারকে আড়াই হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। যাতে অর্থনৈতিক চাপ কমে যায়। সব মিলিয়ে আমি মনে করি কোভিড দীর্ঘ হলেও আমরা বাল্যবিবাহ রোধ করতে সক্ষম হব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, জাতির জনকের শতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০ উপজেলায় মাতৃমৃত্যু শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছেন। নবজাতক মৃত্যু ও বাল্যবিয়ে রোধে অসাধারণ কাজ করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ হয়েছে, গত কয়েক বছরে এই অর্জন সম্ভব হয়ছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু বলেন, সক্ষম দম্পতিরা যাতে এ সময় সন্তান গ্রহণ না করেন, সেজন্য ব্যাপক ক্যাম্পেইন করা হয়েছে। নবজাতক ও মায়েরা যাতে নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেন। প্রসূতি মায়ের সেবা নিশ্চিত করার জন্য, চব্বিশ ঘণ্টা সপ্তাহে সাত দিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনাকালেও এই সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ফোনকলের মাধ্যমে এই সেবা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফোনকলের মাধ্যমে সেবা গ্রহীতার হার অনেক বেড়েছে। ৬ হাজার ৪০০ সেবা কেন্দ্রে কিশোর-কিশোরীদের সেবা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। করোনার কারণে বাড়িতে গিয়ে সেবার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়ায় ৩৫৩২ জন প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা পাহাড়ি ও দুর্গম অঞ্চলে এই সেবা অব্যাহত রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, করোনার শুরুতেই মার্চের প্রথমদিকে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছি। প্রথমদিকে স্থায়ী পদ্ধতি প্রয়োগের পরিমাণ কমে গেলেও এখন সেটি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আনতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এ সময় গর্ভধারণে নিরোৎসাহিত করেছি। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। ১০৫টি ডেডিকেটেড হটলাইন রয়েছে। যার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি সেবার বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারছেন। ৩৫টি জোনে অডিও ভিজিওয়ালের মাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে। আমরা নিবেদিত হয়ে সেবা সম্প্রসারণ করব। সাধারণ জনগণের প্রতি অনুরোধ, আপনারা আমাদের সেবা গ্রহণ করুন। বাল্যবিবাহ বন্ধ করুন, পরিকল্পিত পরিবার গড়ে তুলুন।

এতে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর। আইইএমের পরিচালক ড. আশরাফুন্নেছা সভা পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, যেকোনো দুর্যোগে নারী ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। করোনাও তেমনি একটি রোগ। তবে আমরা শক্তহাতে করোনা মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি। প্রথমে লকডাউনের কারণে পেনিক সৃষ্টি হয়। পরে অল্প অল্প করে ছুটি বাড়ানোয় ধীরে ধীরে সব স্বাভাবিক হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close