হবিগঞ্জের মাধবপুর

  ১০ জুলাই, ২০২০

করোনাকালে সরকারি সহায়তা পেলেন বেদেপল্লীর মানুষ

হ হামিদুর রহমান, মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

মাধবপুরের আলাকপুরে বসবাসকারী স্বামী পরিত্যক্তা মালা বেগম। জীবনের শেষ প্রান্তে আশ্রয় নিয়েছেন ছোটবোন স্বামীহারা সাধনার ঘরে। গত ২ বছর ধরে অন্ধত্ব বরণকারী বেদে মহিলা মালা বেগমের দেখভাল করতে ভাইজি মহিমা আক্তারকে ঘরে রেখে সাধনা জীবিকার তাগিদে বের হতেন গ্রামগঞ্জে। মহামারি করোনার কারণে সাপখেলা, তাবিজ বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পুরুষহীন তিনজনের সংসারে বেঁচে থাকা যখন কঠিন, সেই সময়ে সরকারি ত্রাণ সহায়তা নিয়ে বেদে পল্লীতে হাজির হন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনূভা নাশতারান। দুর্যোগকালে বেদেপল্লীর ৮৪ ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মন্টু ও তার স্ত্রী নাজমাসহ বেদেপল্লীর বাসিন্দারা। শুধু বেদে পল্লীই নয়, করোনায় উপার্জন হারানো কৃষ্ণনগর গ্রামের ইদ্রিস হিজড়ার মতো উপজেলার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা বঞ্চিত হয়নি ত্রাণ সহায়তা থেকে। মানবিক সহায়তার পাশাপাশি জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে কঠোরতাও দেখিয়েছেন। গত মার্চ থেকে জুন মাসে ১৫০ জনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদলাত পরিচালনা করে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৮০০ অর্থদন্ড, ২৫ জনকে কারাদন্ড দিয়েছেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্ম ও উপার্জনহীন বেসরকারি শিক্ষক, মধ্যবিত্ত পরিবার খুঁজে বের করে ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আয়েশা আক্তার। সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি ব্যক্তিগত অর্থে চাল, ডাল, তেল, সাবান ও সবজি কিনে দিয়েছেন বেশ কয়েকটি পরিবারকে। বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তাদের নিয়ে দক্ষতার সঙ্গে মহামারি মোকাবিলায় জনসচেতনতা ও দারিদ্র্যহীনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অর্পিত দায়িত্বের পাশাপাশি নিজ বাসায় রান্না করে ডরমেটরির কর্মকর্তাদের খাবার দিতেও ভুলেননি তিনি। গত ৩ মাসে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য, মাদক, ভোক্তা, জুয়া, সরকারি সম্পদ চুরির দায়ে ১৪ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদন্ড, ২৫১ জনের কাছ থেকে ৯ লাখ ৪৫ হাজার ৩০০ টাকা অর্থদন্ড আদায় করেন। রেড জোনে চিহ্নিত সিলেট বিভাগের প্রবেশদ্বার মাধবপুরের বর্তমান অবস্থা রুখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন তারা। জনসেবার অঙ্গীকার নিয়ে নির্বাচিত কিছু জনপ্রতিনিধি মাঠে না থাকলেও প্রায় ৩ লাখ ৬০ হাজার জনগণের পাশে থাকায় সর্বমহলের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। দক্ষতার সহিত সুষম বণ্ঠন নিশ্চিত করায় ত্রাণ কেলেঙ্কারির ঘটেনি মাধবপুরে। সরকারি অনুদানের সদ্ব্যবহার ও মানুষকে ঘরে রাখা নিশ্চিত করতে নিজের গাড়িতে বহন করে প্রকৃত অসহায়দের হাতে তুলে দিচ্ছেন ত্রাণ। সচেতন করছেন করোনাভাইরাস ও জনসমাগম এড়িয়ে মাস্ক ব্যবহারে। খোঁজ নিচ্ছেন আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে রোগীদের।

উপজেলা সূত্র জানায় এ পর্যন্ত ৮৪ আক্রান্তের মধ্যে ১২ জন সুস্থ হয়ে ওঠলেও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে একজন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাসনূভা নাশতারন বলেন, অর্ধশত শিল্পকারখানার মাধবপুর অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বিদেশি শ্রমিকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শ্রমিকরা কর্মরত। সংক্রামণের সংখ্যা রোধ করতে আমরা মাঠে কাজ করছি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close