আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ০৯ জুলাই, ২০২০

নারায়ণগঞ্জে কালো গ্লাসের গাড়িতে বাড়ছে অপরাধ

বাংলাদেশের আইনে ভিআইপিদের গাড়িতে কালো গ্লাস ব্যবহারের অনুমতি আছে। কালো গ্লাসের গাড়ি দেখলে পুলিশ ভিআইপি মনে করে সে গাড়িতে তল্লাশি থেকে বিরত থাকে। ফলে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। আইনের সেই সুযোগ ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জে বাড়ছে অপরাধ। সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রগুলো কালো গ্লাস সংবলিত বিভিন্ন নামি-দামি গাড়ি ব্যবহার করে আসছেন। এতে অপরাধী কর্মকান্ড চালাতে তাদের সুবিধা হচ্ছে। অনেকে সাদা গ্লাসেও কালোর আবরণ লাগিয়ে নিচ্ছেন।

এসব গাড়ি ব্যবহার করে অপরাধের সংখ্যা বেড়ে গেলে ২০১৪ সালে স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পরে পুলিশি অভিযানে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে কালো গ্লাসের গাড়ির ব্যবহার। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশের অবহেলার কারণে এখন গাড়িতে কালো গ্লাসের ব্যবহার বেড়েছে বহুগুণ।

অতীতে দেখা গেছে গুম, খুন, অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাই ও মাদক সরবরাহসহ ভয়াবহ অপরাধে কালো গ্লাস সংবলিত গাড়ি ব্যবহার করছেন অপরাধীরা। কোনো গাড়ির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কেবল অভিযুক্ত গাড়ির বিরুদ্ধেই অভিযানে নামছেন। কিন্তু বেশিরভাগ কালো গ্লাস সংবলিত গাড়িই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

২০১৪ সালের ১১ মে নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে এর বিরুদ্ধে অভিযানে নামে পুলিশ প্রশাসন। সড়কে প্রশাসনের কঠোরতায় ওই সময়ে এসব গাড়ির চলাচল কমে যায়। পুলিশের ঝামেলা এড়াতে কেউ কেউ গাড়ির জানালার গ্লাস বা কালো আবরণ পাল্টে ফেলে। তবে সময়ের আবর্তে সড়কে পুলিশের কঠোরতা কমলে আবারও বেড়ে যায় গাড়িতে কালো গ্লাসের ব্যবহার। অপরাধীরা অপরাধ সংঘটিত করতে আবারও ব্যবহার শুরু করেন কালো গ্লাসের গাড়ি। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি দুপুরে কাশিপুর হাটখোলা এলাকা থেকে রিপন নামে এক ওয়ার্কশপ কারিগরকে কালো গ্লাস সংবলিত একটি হাইয়েস গাড়িতে উঠিয়ে অপহরণ করে সন্ত্রাসীরা। রিপন হাটখোলা এলাকায় আইডিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের কারিগর ছিলেন। পরবর্তীতে মুক্তিপণ স্বরূপ ৫০ হাজার টাকা দারি করে অপহরণকারীরা। এ ঘটনায় ওই দিনই ফতুল্লা মডেল থাকায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন ওয়ার্কশপের মালিক সাইফুল ইসলাম।

একই বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি সকালে ফতুল্লার দেলপাড়া এলাকা থেকে খোকন মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে কালো গ্লাস সংবলিত একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণ ও তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সংঘবদ্ধ চক্র। এ ঘটনায় শেফালী বেগম বাদী হয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারা দেলপাড়া মির্জাবাড়ীর মোড় এলাকার বাসিন্দা। ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা থানাধীন দেওভোগ পানির ট্যাঙ্কির সামনে থেকে সাদিয়া আক্তার আচল নামে ১৭ বছর বয়সি এক কলেজছাত্রীকে কালো গ্লাস সংবলিত একটি মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণ করা হয়। এ ঘটনায় ওই কলেজছাত্রীর মা কহিনুর বেগম সজল ও সিরাজুল ইসলাম নামে দুজনের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন কালো গ্লাস সংবলিত মাইক্রো বা প্রাইভেট কারে অপহরণের এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে নারায়ণগঞ্জের প্রতিটি থানায়। কিন্তু এরপরও সড়কে এসব গাড়ি ব্যবহারের বিরুদ্ধে বর্তমানে কঠোর হতে দেখা যাচ্ছে না ট্রাফিক বা টহল পুলিশকে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নারাযণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, গাড়িতে কালো গ্লাস ব্যবহারের বিরুদ্ধে আলাদা কোনো আইন নেই। তবে অপরাধীরা এসব গাড়ি ব্যবহার করায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কালো গ্লাস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমরাও অভিযান চালিয়েছি। এর আগে কালো গ্লাস ব্যবহারের বিরুদ্ধে পুলিশ হার্ডলাইনেই ছিল। এখনো আছে। কিন্তু বর্তমানে সড়ক আইনের ধারায় বেশকিছু পরিবর্তন আসায় আপাতত গাড়ির বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে কঠোর হওয়া যাচ্ছে না। সরকারের পক্ষ থেকেই নির্দেশনা রয়েছে। সময়সাপেক্ষে কঠোরতা বাড়ানো হবে। চালক বা গাড়ির মালিকদের সংশোধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা কাগজপত্র সম্পন্ন করেন। তবে করোনাকালীন পর আগামীতে এসবের বিরুদ্ধে কঠোরতা বাড়ানো হবে।

পুলিশ সুপার আরো বলেন, গাড়িতে কালো গ্লাস ব্যবহার করলে ট্রাফিক আইনে মামলা নেওয়ার কথা থাকলেও আপাতত রেকার লাগানো হচ্ছে। এছাড়াও গাড়িতে স্টিকার ব্যবহারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট আইন না থাকলেও এর বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অনেকেই এখন এগুলো মানছেন না। তবে যেকোনো সময় এর বিরুদ্ধে অভিযানে নামা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close