শাকিল আহমেদ, ঠাকুরগাঁও

  ০৭ জুলাই, ২০২০

সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হচ্ছে ইতিহাসের সাক্ষী

সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর জমিদারবাড়ি। জমিদারবাড়ির ভবনের ছাদগুলো ভাঙা। দেয়ালের পলেস্তারা খসে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। শতাব্দী প্রাচীন এই সামাজিক নিদর্শন আজ বিলীন হওয়ার পথে। স্থানীয় প্রশাসন এই রাজবাড়িটি একাধিকবার সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও আজও পর্যন্ত তা সংস্কার হয়নি। ঐতিহ্য রক্ষার্থে রাজবাড়িটি সংস্কার করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও দর্শনার্থীরা। ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ঐতিহ্যবাহী হরিপুর রাজবাড়িটির দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার। হরিপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত রাজবাড়িটি ধীরে ধীরে লোকচক্ষুর অগোচরে হারিয়ে যাচ্ছে। জানা যায়, ভারতবর্ষে মুঘল শাসন আমলে, আনুমানিক ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের ঘনশ্যাম কুন্ডু নামক একজন ব্যবসায়ী কাপড়ের ব্যবসা করতে আসেন ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ৬৫ কিলোমিটার দূরে হরিপুর উপজেলায়। তখন মেহেরুন্নেসা নামে এক বিধবা মুসলিম নারী এ অঞ্চলের জমিদার ছিলেন। খাজনা দিতে না পারায় মেহেরুন্নেসার জমিদারির কিছু অংশ নিলাম হয়ে গেলে ঘনশ্যাম কুন্ডু তা কিনে নেন। ঘনশ্যামের বংশধরদের একজন রাঘবেন্দ্র রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ আমলে হরিপুর রাজবাড়ির কাজ শুরু করেন। কিন্তু তার সময়ে রাজবাড়ির কাজ শেষ হয়নি। রাঘবেন্দ্র রায়ের ছেলে জগেন্দ্র নারায়ণ রায় ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে রাজবাড়ির নির্মাণকাজ সমাপ্ত করেন। ১৯৪৭ সালে দেশে ভাগের সময় স্বপরিবারে ভারতে চলে যান জমিদার জগেন্দ্র নাথ রায়। এরপর থেকেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে আছে জমিদার বাড়িটি।

এক শতাব্দীরও বেশি পুরোনো এই অট্টালিকাটির দৃষ্টিনন্দন কারুকাজের বিলুপ্তপ্রায় নিদর্শনগুলো প্রাচীনত্বের বিবেচনায় খুব মূল্যবান না হলেও স্থাপত্য কীর্তি হিসেবে এখনো মানুষকে কাছে টেনে নিয়ে যায়। নষ্ট হচ্ছে জমিদার বাড়ির দরজা-জানালাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। নজরদারি না থাকায় সন্ধ্যার পর এখানে চলে মাদক সেবনসহ নানা অপকর্ম। সংস্কারের অভাবে জমিদারবাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে গজিয়েছে গাছপালা। খসে পড়েছে পলেস্তারা। দৃষ্টি নন্দন এই জমিদার বাড়িটি দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে মানুষ এসে ভিড় জমায় এখানে। কিন্তু এর ভগ্নদশা দেখে মন খারাপ করে ফিরছেন তারা।

হরিপুর উপজেলার রাজবাড়ি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সি শামীম হোসেন বলেন, এই রাজবাড়িটি একটি ঐতিহ্য। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অনেক মানুষ রাজবাড়িটি দেখতে ভিড় জমায়। রাজবাড়িটি যদি সংস্কার করা হয় তাহলে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। স্থানীয় বাসিন্দা আলেয়া বেগম বলেন, সংস্কারের অভাবে রাজবাড়িটির পলেস্তারা খসে পড়ছে, সঙ্গে পুরো ভবনে গাছ জন্মেছে। সন্ধ্যার হলেই চলে মাদকের আড্ডা। এটি সংস্কার করা হলে পরের প্রজন্ম ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারে। আর যদি এভাবে পড়ে থাকে হয়তো এটি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

দিনাজপুর থেকে ঘুরতে আসা আবদুল আলিম বলেন, রাজবাড়িটির কথা অনেক শুনেছি। তাই আজ স্বচোখে দেখতে আসলাম। কিন্তু এসে মনটাই খারাপ হয়ে গেল এই রাজবাড়িটির অবস্থা থেকে। এটি সংস্কার করা প্রয়োজন। হরিপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবদুল করিম বলেন, প্রাচীন এই রাজবাড়িটি সংস্কার করার জন্য প্রতœতত্ত্ব বিভাগ বাড়িটি পরিদর্শ করে গেছে। স্থানীয়ভাবে আমরা বাড়িটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করি সবসময়। ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ঠাকুরগাঁও অসংখ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। সেগুলো সংরক্ষণের জন্য ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close