আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৩ জুলাই, ২০২০

বিশ্বে মৃত্যু ৫ লাখ ১৫ হাজার ছাড়াল

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারিতে বিশ্বব্যাপী আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৮ লাখ ছাড়িয়েছে। আর এ মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার। ওয়াল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ১৫ হাজার ৫৪২ জনের এবং আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি লাখ ৮ লাখ ২৯ হাজার ১৩৩ জনে। এরই মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬০ লাখ ৬৮ হাজার ১৯৭ জন। বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, ১ লাখ ৩০ হাজার ৭৯৮ জন। আক্রান্তের সংখ্যাও বিশ্বে সর্বোচ্চ, ২৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮০৬ জন।

এই সংক্রমণ বৃদ্ধি মনে করিয়ে দিচ্ছে, মার্কিন ভাইরোলজিস্টদের সতর্কবার্তা। তারা বেশ কয়েক দিন ধরেই বলে আসছিলেন যদি সামাজিক দূরত্ব বিধি লঙ্ঘন করা হবে তবে অচিরেই দিনে ১ লাখের বেশি মানুষও আক্রান্ত হতে পারে মার্কিন মুলুকে। জুনের প্রথম সপ্তাহে যদি চোখ রাখা যায়, দেখা যাবে, আমেরিকায় গড়ে ২২ হাজার করে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছিলেন এক দিনে।সময় যত এগিয়েছে ততই বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। জুনের শেষের দিকে গড়ে ৪২ হাজার মার্কিন নাগরিক করোনা আক্রান্ত হতে থাকেন। এখন সেই মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে সংক্রমণের পরিসংখ্যান।

ক্যলিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা এবং টেক্সাস; এই চার প্রদেশ থেকেই সবচেয়ে বেশি পরিমাণে করোনা আক্রান্তের খবর আসছে। ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের শীর্ষকর্তা অ্যান্টনি ফুসি এই পরিস্থিতিতে মার্কিন সিনেট কমিটির বৈঠকে বলেন, দিনে ১ লাখ সংক্রমণের দিকে এগোচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতোই অবস্থা শোচনীয় ব্রাজিলে। প্রাণঘাতী করোনার তান্ডবে অসহায় লাতিন আমেরিকার দেশটিতে ফের এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৪৪ হাজার ৮৮৪ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ পাওয়া গেছে। যা এক দিনে সর্বোচ্চ। এতে করে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৯ জনে দাঁড়িয়েছে। নতুন করে প্রাণ গেছে ১ হাজার ৫৭ জনের। এ নিয়ে দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ৬০ হাজার ৭১৩ জনে ঠেকেছে। আক্রান্ত ও প্রাণহানির তালিকায় অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পর ভাইরাসটির এখন প্রধানকেন্দ্র ব্রাজিল, যা লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশগুলোতেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। যার ভয়াবহতার শিকার পেরু, চিলি ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলো। যার প্রত্যেকটিতে আক্রান্ত লাখ ছাড়িয়েছে।

মৃতের সংখ্যায় ব্রাজিলের পরেই আছে যুক্তরাজ্য। দেশটিতে মারা গেছেন ৪৩ হাজার ৯৯১ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২ জন।

আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে রাশিয়া। দেশটিতে আক্রান্ত ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৯ জন। যদিও রাশিয়ায় মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, ৯ হাজার ৫২১ জন।

করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে উঠে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত। বৃহস্পতিবার মোট করোনা রোগী শনাক্ত পেরিয়ে গেল ৬ লাখ। সর্বশেষ এক লাখ সংক্রমণে সময় নিয়েছে মাত্র পাঁচ দিন। তবে সংক্রমণের প্রবণতার হারে আশঙ্কা, আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই তৃতীয় অবস্থানে থাকা রাশিয়াকে ছাড়িয়ে যাবে দেশটি।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে ১৯ হাজার ১৪৮ জন নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা হলো ৬ লাখ ৪ হাজার ৬৪১ জন।

আক্রান্ত বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রাণহানিও বেড়েই চলেছে। দেশটিতে ৪৩৪ জনের প্রাণ কেড়েছে করোনা। এ নিয়ে মৃত্যু হলো ১৭ হাজার ৮৩৪ জনের।

দেশটিতে সংক্রমণ ও প্রাণহানির দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। এ রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৫৩ জনের। আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার ২৯৮ জন। দিল্লিতে মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৮০৩ জন। এ রাজ্যে আক্রান্ত ৮৯ হাজার ৮০২ জন। মৃত্যুর দিক থেকে তৃতীয় স্থানে থাকা গুজরাটে প্রাণহানি হয়েছে ১ হাজার ৮৬৭ জনের। এ রাজ্যে মোট আক্রান্ত ৩৩ হাজার ২৩২ জন। তামিলনাড়ুতে মারা গেছে ১ হাজার ২৬৪ জন। এ রাজ্যে আক্রান্ত ৯৪ হাজার ৪৯ জন। এছাড়া উত্তরপ্রদেশে ২৪ হাজার আক্রান্ত ও ৭১৮ জনের মৃত্যু, পশ্চিমবঙ্গে ১৯ হাজার ১৭০ জন আক্রান্ত ও ৬৮৩ জনের মৃত্যু ও মধ্যপ্রদেশে ১৩ হাজার আক্রান্ত ও ৫৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে ভারতে করোনা রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার পরিসংখ্যানটাও বেশ স্বস্তিদায়ক। নতুন ১১ হাজার ৮৮১ জন নিয়ে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৬০ জন সুস্থ হলেন।

মৃত্যুর দিক থেকে চতুর্থ অবস্থানে আছে ইতালি। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৭৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৪০ হাজার ৭৬০ জন। ফ্রান্সে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৮৬৪ জনের। আক্রান্ত ২ লাখ ২ হাজার ৯৮১। স্পেনে মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ৩৬৪। সংক্রমিত ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫৯ জন। মেক্সিকোয় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ২৭ হাজার ৭৬৯ জনের। আক্রান্ত ২ লাখ ৩১ হাজার ৭৭০। রাশিয়ায় করোনায় মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ৫২১। আক্রান্ত ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৯ জন।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। ওই সময়ই চীনের গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে করোনা ছড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ হতে শুরু করে। ছয় মাসে বিশ্ব অনেকটাই পাল্টে গেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯। গত ১১ মার্চ করোনাভাইরাস সংকটকে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close