ঢাবি প্রতিনিধি

  ০৩ জুলাই, ২০২০

বিপিওর তথ্য

দেশে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু দেড় হাজার

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দেড় হাজারে পৌঁছেছে বলে তথ্য দিয়েছে বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি (বিপিও)। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা করে বিপিও গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের দ্বাদশ ‘কোভিড-১৯ গ্রাফিক্সে’ এই তথ্য তুলে ধরেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের (সিজিএস) গবেষণা প্রকল্প বিপিও দেশে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে প্রতি সপ্তাহে হালনাগাদ তথ্য নিয়ে এই তথ্যচিত্র প্রকাশ করে আসছে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে গত বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ১ হাজার ৮৮৮ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর। আর ৮ মার্চ থেকে ২৭ জুন পর্যন্ত সময়ে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আরো ১ হাজার ৫০০ মৃত্যুর তথ্য এসেছে বিপিওর প্রতিবেদনে। ইউএনডিপির আর্থিক সহায়তায় দেশের জাতীয় ও আঞ্চলিক সংবাদপত্র, অনলাইন সংবাদমাধ্যম, টেলিভিশনসহ ২৫টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিপিও বলছে, ২১ থেকে ২৭ জুনের মধ্যে দেশে করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে ১৯৮ জনের মৃত্যুর তথ্য সংবাদমাধ্যমে এসেছে। এর আগের সপ্তাহে যা ২০৬ জন ছিল।

দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরে পড়ে। প্রথম দুই সপ্তাহে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর কোনো খবর সংবাদমাধ্যমে না পেলেও ২২ থেকে ২৮ মার্চের মধ্যে তিনজনের মৃত্যুর খবর সংকলিত করেছে বিপিও। এরপরের সপ্তাহগুলোতে পর্যায়ক্রমে ৬৩, ১০৬, ১২০, ১১৪, ৯৩, ৫০, ৬৭, ৪৮, ৭৩, ১৫৪, ২০৬,২০৫ এবং সর্বশেষ সপ্তাহে ১৯৮ জন মিলে মোট ১ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যুর তথ্য উঠে এসেছে তাদের প্রতিবেদনে।

বিপিও বলছে, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৫১ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে, যা সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। এরপর ঢাকায় ৩৩৮ জন, খুলনায় ১৮৫ জন, বরিশালে ১৭০ জন, রাজশাহীতে ১৪৮ জন, সিলেটে ৮৩ জন, রংপুরে ৭০ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৫৫ জন মারা গেছেন করোনা উপসর্গ নিয়ে।

বিপিও তাদের গবেষণায় করোনা মহামারি ঘিরে সংঘটিত বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার তথ্যও তুলে ধরেছে। তাদের প্রতিবেদন বলছে, করোনাভাইরাস নিয়ে গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে গত ২৭ জুন পর্যন্ত ৮৪টি ঘটনায় ৮৭ জনকে গ্রেফতার করেছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। এছাড়া ত্রাণ আত্মসাৎ, খাদ্যে ভেজাল ও করোনাভাইরাস বিষয়ে সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘনের মতো অনিয়ম ও অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫৪৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১১ হাজার ২৮ জনকে।

বিপিও বলছে, এই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২১৭টি নির্যাতন ও সামাজিক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে। দেশের বিভিন্ন জেলায় ১৭২টি বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ ত্রাণসামগ্রী ও কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সহায়তার দাবিতে, বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে ৪১ শতাংশ, লকডাউনে বাড়ি বা মেস বাড়া কমানো, টিউশন ফি কমানোর দাবিতে ১৬ শতাংশ, ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে ৬ শতাংশ, স্বাস্থ্যসেবা ও মেডিকেল সুবিধা নিশ্চিতের দাবিতে ৪ শতাংশ, প্রস্তাবিত বাজেটের প্রতিবাদ জানিয়ে ২ শতাংশ প্রতিবাদ হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, সরকার নিয়মিত কোভিড-১৯ আপডেট দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানে কোভিডের লক্ষণ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের তথ্য দেওয়া হচ্ছে না। মানুষ মনে করছে, কোভিডের উপসর্গ নিয়ে বহু সংখ্যক মারা যাচ্ছে। এতে তাদের মাঝে ভয় কাজ করছে। ২৫টি ওপেন সোর্স পর্যালোচনা করে আমরা ওই তথ্যই পেয়েছি। কোভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর বিষয়ে ফেসবুকে গুজব বা মানুষের ভুল ধারণাগুলো নিরসনে এই গবেষণা সহায়ক হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক ইমতিয়াজ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close