আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ০৫ জুন, ২০২০

বিশ্বে করোনায় মৃত্যু তিন লাখ ৮৭ হাজার ছাড়ালো

বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রকোপ থামছেই না। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গত ডিসেম্বরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম প্রাণঘাতী এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে নতুন এ রোগ ছড়াতে দেখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে দেশটি। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। পরে ধীরে ধীরে ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাসটি। এদিকে, করোনাভাইরাসের পরিসংখ্যান প্রকাশকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের গতকাল বৃহস্পতিবারের তথ্য অনুযায়ী, বিশে^ ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯২ জনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯৩৩ জন। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে ৩১ লাখ ৬৯ হাজার ৩৪ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। বর্তমানে ৩০ লাখ ১০ হাজার ৬২৫ জন করোনা রোগীর মধ্যে ২৯ লাখ ৫৬ হাজার ৪২৫ জনের অবস্থা স্থিতিশীল। ৫৪ হাজার ২০০ জনের অবস্থা গুরুতর। করোনায় মৃত্যু উপত্যকা যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ১৯ লাখের বেশি মানুষ। আর এক-তৃতীয়ংশের বেশি সুস্থ হয়ে ফিরলেও প্রাণহানি ১ লাখ ৯ হাজার ছাড়িয়েছে।

আগের মতো এখনো গড়ে ২০ হাজারের বেশি মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে প্রতিদিন। এ সংকটকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে সম্প্রতি নিরাপত্তার বাহিনীর হাতে এক কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার জের ধরে চলমান আন্দোলন। হাজার হাজার মার্কিনি বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় সংক্রমণ ব্যাপক বিস্তার করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

করোনায় বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে ২০ হাজার ৫৭৮ জন। এতে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে ১৯ লাখ ২ হাজার ৭৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে নতুন করে ১ হাজার ৮৩টি প্রাণ। যাতে প্রাণহানি বেড়ে ১ লাখ ৯ হাজার ১৪২ জনে ঠেকেছে। আর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭০ জন।

শুধু নিউইয়র্কেই প্রাণহানি ৩০ হাজার ১৬৪ জনে পৌঁছেছে। যেখানে করোনার শিকার ৩ লাখ প্রায় ৮৩ হাজার মানুষ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নিউ জার্সিতে আক্রান্ত ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৭৪ জন। এর মধ্যে প্রাণ গেছে ১১ হাজার ৯০৬ জনের।

এমন অবস্থায় ভয়াবহ বিপর্যয়ে পড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে লকডাউন তুলে নেওয়ার চিন্তা করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এজন্য সব অঙ্গরাজ্যগুলোর গভর্নরকে চাপ দিয়ে আসছেন তিনি।

আক্রান্তের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরের স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে ৫ লাখ ৮৪ হাজার ১৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ৩২ হাজার ৫৪৮ জন।

ব্রাজিলের পরই আক্রান্তের দিক থেকে নাম রয়েছে রাশিয়ার। দেশটিতে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭১৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ২০৮ জনের।

গত সপ্তাহেই করোনায় টালমাটাল দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের ওপর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। স্থগিত হয়েছে জি-৭ সম্মেলন।

যুক্তরাষ্ট্রের পর মৃতের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থায় রয়েছে যুক্তরাজ্য। করোনাভাইরাসে এক দিনে গোটা ইউরোপের চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে এক দিনে ৩৫৯ জন মারা গেছেন। ইউরোপের সব দেশ মিলিয়ে মারা গেছেন ৩১৪ জন।

এদিকে, ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য দফতর পিএইচইর এক জরিপে কোভিড-১৯ সংক্রমণে ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশিদের মৃত্যুর উচ্চ ঝুঁকি সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জরিপের রিপোর্টে বলা হয়, বিশেষত বয়স্ক মানুষ ও পুরুষদের করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বয়স ও লিঙ্গ বাদ দিলে কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি হচ্ছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের।

ইউরোপের দেশ ইতালিতে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩২১ জনের শরীরে। ফলে আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৬ জন। আর নতুন করে ৭১২ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩৪ হাজার ৩৭২ জনে।

ইউরোপের আরেক দেশ ফ্রান্সে নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৫২ জনের শরীরে। ফলে আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫২ হাজার ২৯ জন। আর নতুন করে ৮১ জনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৯ হাজার ৭০২ জনে। এছাড়া স্পেনে স্পেনে টানা তিন দিন কোনো মৃত্যু হয়নি। তবে চারদিনের মাথায় এসে বুধবার একজনের মৃত্যু হয়েছে। বেড়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। বুধবার একজনের মৃত্যুর পাশাপাশি ২৭১ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার ৩২৬। আর মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৭ হাজার ১২৮। নতুন আক্রান্তের অধিকাংশই মাদ্রিদ ও কাতালোনিয়ার। ২১৯ জনের মধ্যে ১৫০ জনই এই দুটি অঞ্চলের। এদিকে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১৩৪ জন। ফলে আক্রান্ত বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার ৮৩০ জন। আর নতুন ৭০ জনের মৃত্যু নিয়ে মৃতের সংখ্যা হলো ৮ হাজার ৮২ জনে। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ২০৬ জন।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারতে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে করোনার প্রকোপ। যার শিকার দেশটির ২ লাখ প্রায় ১৭ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ছয় হাজারের বেশি মানুষ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও বেঁচে ফিরেছেন অর্ধেকই।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নতুন করে ৯ হাজার ৩০৪ জনের শরীরে মিলেছে করোনার সংক্রমণ। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ১৬ হাজার ৯১৯ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রাণহানি ঘটেছে আরো ২১৭ জনের। এতে করে করোনার থাবায় না ফেরার দেশে ৬ হাজার ৭৫ ভারতীয়।

তবে ভারতে করোনাভাইরাস থেকে পুনরুদ্ধারের হারও যথেষ্ট সন্তোষজনক। মরণ এ ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায় সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৪৭ দশমিক ৯৯ শতাংশে উন্নিত হয়েছে। যার সংখ্যা ১ লাখ ৪ হাজার ১০৭ জন। আর চিকিৎসাধীন ১ লাখ ৬ হাজার ৭৩৭ জন।

ভারতে করোনা ভয়াবহ রূপ দেখিয়েছে মহারাষ্ট্রে। মহারাষ্ট্রের পরেই করোনা সংক্রমণের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তামিলনাড়। এদিকে রাজধানী দিল্লিও ভুগছে করোনা আতঙ্কে। আসামেও দ্রুত হারে বাড়ছে সংক্রমণ। রাজ্য সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, আসামের ৯০ শতাংশেরও বেশি রোগীর শরীরে করোনা সংক্রমণের লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না, যা আরো আশঙ্কার। া

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close