প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ মে, ২০২০

করোনাভাইরাসের টিকা কতদূর?

নানা দেশ ও সংস্থা নানাভাবে করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। কেউ ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিন, কেউ লাইভ ভ্যাকসিন আবার কেউ ডিএনএ ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক এ পদ্ধিতিগুলো আসলে কীÑ

লাইভ ভ্যাকসিন : এই ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে মূলত রোগের জন্য দায়ী ভাইরাসকেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সেগুলো শরীরের ক্ষতি করতে পারে না অর্থাৎ সেগুলোর রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাশূন্য থাকে। ফলে ওই ভাইরাসের কারণে শরীর আক্রান্ত হয় না কিন্তু মানবদেহের কোষের ভেতর সেগুলো বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম। ভাইরাসের বংশবিস্তার শুরু হলে মানবদেহের প্রাকৃতিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে উঠে এবং অ্যান্টিবডি তৈরির মাধ্যমে ভাইরাস ধ্বংস করে। এভাবেই মানুষের শরীরে বিশেষ ওই রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয় এবং পরে ওই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে শরীরে থাকা অ্যান্টিবডি সহজেই সেগুলো চিহ্নিত করে ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম হয়। এভাবে মানবদেহে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে। এই পদ্ধতি ব্যবহার করেই গুটি বসন্তের টিকা আবিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া আফ্রিকার দেশেগুলোতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ইবোলার বিরুদ্ধে প্রথম অনুমোদন পাওয়া টিকাও এক পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে।

ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিন : ভাইরাসের দেহে কোনো নিউক্লিয়াস ও সাইটোপ্লাজম নেই; এটি কেবল প্রোটিন এবং নিউক্লিক এসিড দিয়ে গঠিত। ভাইরাস কেবল উপযুক্ত পোষকদেহের অভ্যন্তরে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এদের অভ্যন্তরীণ তথ্যবহনকারী সূত্রক দুই ধরনের হতে পারে ডিএনএ এবং আরএনএ।

ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিনে সুনির্দিষ্ট ভাইরাল প্রোটিন বা নিষ্ক্রিয় ভাইরাস থাকে। শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা এগুলোকেই হত্যা করবে। যেহেতু শরীরে নিষ্ক্রিয় বা মৃত ভাইরাস প্রবেশ করানো হয় তাই সেগুলো বংশবিস্তার করতে পারে না। কিন্তু রোগের বিস্তার ঘটাতে না পারলেও দেহে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সেগুলো চিহ্নিত করে এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করে।

ইনফ্লুয়েঞ্জা, পোলিও, হুপিংকাশি, হেপাটাইটিস বি ও ধনুষ্টংকারের টিকায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

জিন-বেজড ভ্যাকসিন : এটা অনেকটা ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিনের মতো। তবে বাড়তি সুবিধা হচ্ছে, ওষুধ কোম্পানিগুলো ইনঅ্যাক্টিভ ভ্যাকসিনের চেয়ে জিন-বেজড ভ্যাকসিন দ্রুত উৎপদান করতে পারে। কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।

কারণ কোভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকা আবিষ্কার হলে দ্রুততম সময়ে বিশ্বে সেই টিকা ছড়িয়ে দিতে কোটি কোটি ডোজ উৎপাদন করতে হবে। জিন-বেজড ভ্যাকসিন করোনাভাইাসের ডিএনএ বা আরএনএ থেকে একদম সঠিক জিনগত তথ্য নিয়ে তৈরি করা যাবে।

এই টিকা শরীরে প্রবেশের পর সেটা নির্বিষ ভাইরাল প্রোটিন তৈরি করবে এবং মানবদেহের প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেগুলোকে নির্মূল করতে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। তবে এখন পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে তৈরি কোনো টিকা বাজারে নেই। নানা দেশের বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এ পদ্ধতির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছে এবং তাদের গবেষণাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

কবে আসবে টিকা? করোনাভাইরাসে বিশ্বজুড়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ৩৭ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। মারা গেছেন আড়াই লাখের বেশি মানুষ। এখনো ভাইরাস সংক্রমণের যে গতি তাতে এ মৃত্যুর মিছিল কোথায় গিয়ে থামবে তা কেউ বলতে পারছে না।

যথাযথ টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার না হলে এই ভাইরাস ফিরে ফিরে আসবে বলেও আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের। ফলে সবার মুখেই এখন এক প্রশ্ন, কবে আসবে টিকা?

নানা দেশে ও সংস্থা নিজেদের মতো করে কোভিড-১৯ এর টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে। গবেষণাগারে পরীক্ষা এমনকি মানবদেহে পরীক্ষা পর্যন্ত ?শুরু করেছেন কেউ কেউ। কিন্তু তারপরও এখনো ঢের সময় প্রয়োজন। মানবদেহে পরীক্ষার পর প্রথমেই সেটা নিরাপদ কিনা দেখতে হবে। তারপর দেখতে হবে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হচ্ছে কিনা এবং সেটা ঠিকঠাক মতো কাজ করছে কিনা। সব কিছু ঠিকঠাকভাবে যাচাই করার পর শুরু হবে বাণিজ্যিক উৎপাদন। সেখানেও পেরুতে হবে নানা ধাপ। তাই ২০২১ ?সালের আগে করোনাভাইরাসের টিকা বাজারে আসার সম্ভাবনা নেই বলেই মত অনেক বিশেষজ্ঞর। সূত্র : গুডরুন হাইস/এসএনএল

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close