গাইবান্ধা প্রতিনিধি

  ১২ এপ্রিল, ২০২০

গাইবান্ধায় করোনার প্রভাব

চরাঞ্চলে মরিচের বাম্পার ফলন দাম না পাওয়ায় হতাশ চাষিরা

চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু ভরা মৌসুমেও করোনাভাইরাসের কারণে জেলা শহর লকডাউন ঘোষণা করায় হাট-বাজারগুলোতে বাইরে থেকে মরিচের ক্রেতা আসছেন না। ফলে চাষিরা কাঁচামরিচের সঠিক মূল্য পাচ্ছেন না।

বর্তমানে গাইবান্ধা জেলার হাট-বাজারে এখন কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ৮ থেকে ১০ টাকা অর্থাৎ ২৪০ থেকে ৩০০ টাকা মণ মূল্যে বেচাকেনা হচ্ছে। এত কম মূল্যে মরিচ বিক্রি করে ফসল উৎপাদনের খরচ তুলতে পারছেন না মরিচচাষিরা। ফলে জমি থেকে মরিচ না তুলে মরিচ পাকানোর অপেক্ষায় জমিতেই রাখতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক কৃষক। যাতে পরিস্থিতির উন্নতি হলে চরা মূল্যে তারা বিক্রি করে খরচটা পুষিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু বৃষ্টিহীন উত্তপ্ত বিরূপ আবহাওয়ার কারণে অনেক আগেই মরিচ পাকতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় পাকা মরিচ বিক্রি করে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে মরিচচাষিরা চরম হতাশার মধ্যে দিনযাপন করছেন। কারণ মরিচ চাষ করতে গিয়ে যে ব্যয় হয়েছে, তাতে লাভ তো দূরের কথা বরং উৎপাদন ব্যয়ই উঠবে কি না, সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র নদের কোলঘেঁষে ওঠা চরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাট ফুলছড়ি এখন মরিচের হাট নামে খ্যাত। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন ঘোষিত হওয়ায় এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়টিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় তিন সপ্তাহ ধরে ফুলছড়ি হাটে মরিচের বেচাকেনা হচ্ছে না। বাইরে থেকে আসা তো দূরের কথা, স্থানীয় পাইকাররাও মরিচ কিনতে আসছেন না। ফুলছড়ি হাটে আসা মরিচচাষিরা জানালেন, গত বছর তারা এই মৌসুমে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ২০ থেকে ২৫ টাকা মূল্যে অর্থাৎ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা মূল্যে পাইকাররা হাট থেকে কিনে নিয়ে গেছেন। অথচ এখন চরাঞ্চলের কৃষকরা জমিতেই প্রতি কেজি মরিচ ছয় থেকে আট টাকা অর্থাৎ প্রতি মণ ১৮০ থেকে ২৪০ টাকা মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

কৃষি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, একসময় এ জেলায় মরিচের চাষ হতো অনেক কম। ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মরিচ দিয়ে জেলার চাহিদা পূরণ হতো না। ফলে পাশের বগুড়া, জয়পুরহাট ও নওগাঁ থেকে মরিচ আমদানি করে চাহিদা মেটানো হতো। আর এখন এখান থেকেই মরিচ অন্য জেলায় রফতানি হচ্ছে।

ফুলছড়ি হাটের ইজারাদার সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ফুলছড়ি হাট জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মরিচের হাট। চরাঞ্চল থেকে কৃষকরা নৌকায় মরিচ নিয়ে আসেন এখানকার আড়তদারের কাছে। ব্যবসায়ীরা ট্রাক নিয়ে এসে হাট থেকে সস্তায় মরিচ কিনে নিয়ে যান। কিন্তু এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে অবস্থা সম্পন্ন ভিন্ন। এতে শুধু চরাঞ্চলের মরিচচাষিরাই নন, বরং হাটের ইজারাদার, ক্ষুদ্র মরিচ ব্যবসায়ী এবং এ ক্ষেত্রে যেসব শ্রমিক কাজ করতেন, তারাও পাইকার না আসায় কর্মহীন দিনযাপন করে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close