যশোর প্রতিনিধি

  ০৯ এপ্রিল, ২০২০

হায়রে ফুল, এখন পশুখাদ্য!

সারা বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। আর এই সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের প্রায় সবকিছু বন্ধ করে সরকার সবাইকে ঘরে থাকতে বলেছে। ফলে অনেক জিনিসের কেনাবেচা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে আছে ফুলও। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে এ দেশে বিপুল অংকের ফুল বিক্রি হয়। তবে এবার পহেলা বৈশাখ পালিত হবে না। আর তাই আগেই চাষ করে রাখা ফুল নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। এবার তাদের মাথায় হাত, আর উৎপাদিত ফুল এখন খাওয়ানো হচ্ছে গৃহপালিত পশুকে।

যশোরের ঝিকরগাছার নন্দী ডুমুরিয়া গ্রামের গোলাম রসুল বলেন, তিনি এ বছর ১০ বিঘা জমিতে গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাসের পাশাপাশি জারবেরা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, তবে পরিবহন ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। ফুলের বাজার বসছে না, কেনাবেচাও নেই। এদিকে ফুল না কাটলে নতুন করে আর কুঁড়ি আসে না। তাই গোলাপ ফুল কেটে ছাগল-গরুকে খাওয়ানো হচ্ছে।

প্রতিদিন সূর্য উঠার আগেই চাষি, পাইকার, মজুরের হাঁকডাকে মুখর হয়ে উঠত যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে ফুলের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত গদখালী বাজার।

দূর-দূরান্ত থেকে ফুল কিনতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা আসতেন। সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের বাসের ছাদে স্তূপ করে সাজানো হতো ফুল। পাঠানো হতো দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ও ভ্যান ভরে ফুল যেত।

হাঁড়িয়া নিমতলা গ্রামের আসলাম হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এখন এগুলো শুধুই স্বপ্ন। করোনাভাইরাস ফুল চাষিদের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে। আজ তারা দিশেহারা। তিনি বলেন, ফুলের বাজারে ১৫ দিন ধরে ক্রেতাশূন্য। ক্রেতা-বিক্রেতা নেই, ফুল বেচাকেনা বন্ধ। খেতেই পচে নষ্ট হচ্ছে। চাষিরা বাগান থেকে ফুল কেটে ছাগল-গরুকে দিয়ে খাওয়াচ্ছে। তাদের চোখে-মুখে বিষণœতার ছাপ।

গত ২৪ মার্চ থেকে গদখালি ফুলের বাজার বন্ধ রয়েছে। আর প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত হচ্ছে ফুলের ভরা মৌসুম।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, স্বাধীনতা দিবস ও বাংলা বর্ষবরণে ফুল বিক্রি করতে না পারায় এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীদের অন্তত ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বেচাকেনা বন্ধ থাকায় চাষিরা বাগান থেকে ফুল কেটে তা পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করছেন। ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ হোসেন পলাশ জানান, এ বছর তার উপজেলায় ২৭২ হেক্টর জমিতে গ্লাডিওলাস, ১৬৫ হেক্টর জমিতে রজনীগন্ধা, ১০৫ হেক্টর জমিতে গোলাপ, ৫৫ হেক্টর জমিতে গাঁদা, ২২ হেক্টর জমিতে জারবেরা ও অন্যান্য ফুল চাষ করা হয়েছে প্রায় ৬ হেক্টর জমিতে।

কৃষি কর্মকর্তা বলেন, চাষিরা ফুল বিক্রি করতে পারছেন না। আবার খেতে ফুল রাখতেও পারছেন না। উভয় সংকটে পড়েছেন তারা। গদখালি ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক রনি আহম্মদও জানালেন তাদের বিপদের কথা।

তিনি বলেন, হাজারো ফুলচাষি এখন মহাবিপাকে পড়েছেন। তাদের বাগানের গোলাপ, রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, জারবেরা ফুল কেটে গবাদিপশু দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে সেই চিন্তাই আমাদের মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই ক্ষতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে সেই ভাবনায় শঙ্কিত আমরা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close