নাঈমুল হাসান, টঙ্গী (গাজীপুর)

  ৩০ মার্চ, ২০২০

বাজারে নকল স্যানিটাইজারে স্বাস্থ্যঝুঁকি

করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় দেশে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার বেড়েছে কয়েক গুণ। চাহিদার চেয়ে জোগান কম হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। ফার্মেসিগুলোতে অন্য ওষুধের চেয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে প্রতিদিনেই আসছে সাধারণ মানুষ। ফার্মেসিতে স্যানেটাইজার না থাকায় নকল স্যানিটাইজার তৈরি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু চক্র। টঙ্গী ও আশপাশের প্রায় প্রতিটি ফার্মেসি ও ফুটপাতে দেদার বিক্রি হচ্ছে এই নকল হ্যান্ড স্যানেটাইজার।

হ্যান্ড স্যানেটাইজারে মূল উপাদান নকল ব্র্যান্ডগুলোতে থাকে না। সরল বিশ্বাসে এগুলো ব্যবহার করে ভাইরাস প্রতিরোধ তো নয়ই, উল্টো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়তে পারেন ব্যবহারকারী। ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহারে চর্মরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান।

গত শুক্রবার টঙ্গীর চেরাগ আলী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, একটি ফার্মেসির কাছে ব্লু-লাইফ হ্যান্ড স্যানেটাইজার নামের স্যানেটাইজার বিক্রি করছেন বিক্রয় প্রতিনিধি। বোতলের গায়ে থাকা স্টিকার থেকে জানা যায়, এর প্রস্তুতকারক দেশের ব্লু-লাইফ ই কমার্স লিমিটেড। ৫০ মিলিগ্রামের প্রতি বোতল ৭০ টাকা দরে কেনা ওই স্যানেটাইজার একজন সাধারণ ক্রেতার কাছে সর্বোচ্চ ১৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করতে দেখা যায়। স্টেশন রোড এলাকার আরেকটি ফার্মেসিতে অরগানিক মিনি নামক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মোড়কে ১০০ মিলি বোতলের হ্যান্ড স্যানেটাইজার বিক্রয় করছে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। এ রকম আরো স্যানেটাইজারের খোঁজ পাওয়া যায়, যারা বোতলের গায়ে দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তৈরি নানা ব্র্যান্ডের নাম লেখা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্যানেটাইজারের চাহিদা কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দেশি-বিদেশি কোম্পানির বোতল ও মোড়ক হুবহু নকল করে বাজারজাত করছেন। অধিকাংশ পণ্যের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখও নেই। এমনকি কোন প্রতিষ্ঠান আমদানি করেছে তারও কোনো স্টিকার নেই। নেই বিএসটিআইয়ের নাম সনদ। তারপরও কোনো কিছু যাচাই না করে এসব স্যানেটাইজার কিনছেন সাধারণ মানুষ। বাজারে পণ্যের চাহিদা বেশি ও অতিরিক্ত লাভে বিক্রি করতে পারায় ওষুধ দোকানিরা নির্দ্বিধায় বিক্রি করছেন এসব নকল হ্যান্ড স্যানেটাইজার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলেন, গত কয়েক দিন ধরে দেশি কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা চাহিদামতো স্যানিটাইজার দিতে পারছেন না। এই সুযোগে বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করে দেশিÑবিদেশি বলে নিয়ে আসছেন অনেকে। এই সময়ে একটি চক্র নকল স্যানিটাইজার দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

গাজীপুর ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক (টঙ্গী) শফিকুল ইসলাম। জানতে চাইলে তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্যানিটাইজার তৈরির প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় আইপিএ (আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহল), যা এসব নকল হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ব্যবহার করা হয় না। এতে জীবাণ ধ্বংস না হয়ে মানব দেহের ব্যবহৃত স্থানে ক্ষতি হতে পারে।

জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে স্থানীয়ভাবে অসাধু চক্র এমনটা করছে। এরই মধ্যে নকল পণ্য যাতে ফার্মেসিগুলোতে বিক্রি বন্ধে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close