প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩০ মার্চ, ২০২০

করোনা নিয়ে যত প্রশ্ন!

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সচেতন হতে শুরু করলেও মনে হয় যেন অনন্তকাল পেরিয়ে গেছে। বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, আমরা এখনো অনেক কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। এ কারণেই অনেক প্রশ্ন উঠেছে।

১. কতজন মানুষ সংক্রামিত হয়েছেন? সবচেয়ে বেশি জানতে চাওয়া প্রশ্নগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম এবং এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নও বটে।

বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। তবে এটি সংক্রমণের মোট সংখ্যার একটি অংশ মাত্র। কেননা অনেক অ্যাসিম্পটোমেটিক কেস রয়েছে যাদের প্রকৃত সংখ্যা কেউ জানে না। অ্যাসিম্পটোমেটিক কেস হলো যারা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তবে অসুস্থ বোধ করছেন না।

২. এটি আসলেও কতটা মারাত্মক? যতক্ষণ না আমরা জানতে পারছি মোট কতজন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তার আগ পর্যন্ত মৃত্যুর হার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রায় অসম্ভব। এই মুহূর্তে ধারণা করা হচ্ছে যে, ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের প্রায় ১ শতাংশ মারা যাচ্ছে। তবে অ্যাসিম্পটোমেটিক রোগীর প্রকৃত সংখ্যা যদি জানা যায় তবে মৃত্যুর হার আরো কম হতে পারে।

৩. যত ধরনের উপসর্গ। করোনাভাইরাসের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর এবং শুকনো কাশি। এগুলো হলো সেই

লক্ষণ যেগুলোর প্রতি আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে গলাব্যথা, মাথাব্যথা এবং ডায়রিয়ার মতো লক্ষণের কথাও জানা গেছে। এমন ধারণাও রয়েছে যে, এই করোনাভাইরাস মানুষের গন্ধ নেওয়ার অনুভূতি হ্রাস করতে পারে। তবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো মৃদু ঠান্ডাজাতীয় লক্ষণ যেমন সর্দি, হাঁচি, এগুলো কী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে রয়েছে কিনা।

গবেষণায় বলছে, এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজের অজান্তেই সংক্রমিত হয়েছেন বা ভাইরাসটি বহন করছেন।

৪. ভাইরাসটি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে শিশুরা কী ভূমিকা রাখে? শিশুরা অবশ্যই করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে মৃদু লক্ষণ দেখা যায়। এছাড়া অন্যান্য বয়সিদের তুলনায় শিশুদের মৃত্যুর ঘটনা তুলনামূলক কম। শিশুরা সাধারণত রোগের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ঘটায়। এর একটি কারণ তারা প্রচুর মানুষের সংস্পর্শে আসে। কখনো বাড়িতে, কখনো খেলার মাঠে। তবে তারা কতটা প্রকটভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিচ্ছে, সেটা পরিষ্কার নয়।

৫. ভাইরাসটি কোথা থেকে এসেছে? ২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের উহান শহরে ভাইরাসটি উদ্ভূত হয়েছিল, সেখানকার একটি পশুর হাটে আক্রান্ত হওয়ার কয়েকটি ঘটনা জানা যায়। করোনাভাইরাস, যার আনুষ্ঠানিকভাবে সার্স-কোভ-২ নামে পরিচিত, এটি ভাইরাসের সঙ্গে বাদুড়কে সংক্রমিত করা ভাইরাসের ঘনিষ্ঠ মিল রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, বাদুড় থেকে এই ভাইরাসটি কোনো রহস্যময় প্রাণিতে প্রবেশ করেছে। এর মাধ্যমে এটি মানুষের কাছে পৌঁছায়। মাঝখানের ওই প্রাণীটি কী ছিল সেটা এখনো জানা যায়নি। এবং এটি হয়তো আরো সংক্রমণের উৎস হতে পারে।

৬. গ্রীষ্মে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে? গ্রীষ্মের তুলনায় শীতের মাসগুলোতে সর্দি এবং ফ্লু বেশি দেখা যায়। তবে গরম আবহাওয়া ভাইরাসের বিস্তারকে পরিবর্তিত করবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যুক্তরাজ্য সরকারের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টারা সতর্ক করেছেন যে ভাইরাসটির ওপর ঋতুর কোনো প্রভাব আছে কিনা তা পরিষ্কার নয়। যদি কোনো প্রভাব থেকেও থাকে তবে তারা মনে করেন যে সর্দি এবং ফ্লু এর হার কমে আসবে।

গ্রীষ্মকালে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা যদি দ্রুতহারে নামতে থাকে, তাহলে শীতকালে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ারও আশঙ্কা থাকে, যখন হাসপাতালগুলোয় শীতকালের সাধারণ অসুস্থতা নিয়ে আসা রোগীদের অনেক ভিড় থাকে।

৭. কিছু লোক কেন আরো মারাত্মক লক্ষণ পান? কোভিড-১৯ বেশির ভাগ মানুষের ওপর বেশ মৃদু সংক্রমণ ঘটনায়। তবে এর মধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ আরো মারাত্মক রোগের বিকাশ ঘটাতে পারে, কিন্তু কেন? একজন ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বিষয়টি এক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। এর পেছনে জিনগত কারণও থাকতে পারে। এর কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও অনেকের নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন হয় না।

৮. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতো সময় স্থায়ী হয় এবং ভাইরাসে কেউ একাধিকভাবে আক্রান্ত হতে পারে? মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এই ভাইরাসকে কতদিন পর্যন্ত বা কতটা শক্তিতে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে সেটা নিয়ে নানা ধরনের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। তবে এ সম্পর্কে প্রমাণ রয়েছে, খুব কম। মানুষ যদি সফলভাবে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায় তবে তাদের অবশ্যই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। তবে এই রোগটি যেহেতু কয়েক মাস ধরে চলছে তাই এ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি তথ্যের অভাব রয়েছে।

অনেকে দুবার করোনাভাইরাসে সংক্রামিত হয়েছেন বলে যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। এর পেছনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ভুল থাকতে পারে। তারা হয়তো সংক্রমিতই হননি। দীর্ঘমেয়াদে কী ঘটবে তা বোঝার জন্য মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ।

৯. ভাইরাসটি পরিবর্তিত হবে কিনা। যেকোনো ভাইরাস সবসময় পরিবর্তিত হয়। তবে তাদের জিনগত কোডে যে পরিবর্তনগুলো আসে সেগুলো উল্লেখযোগ্য কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করে না। একটি সাধারণ নিয়ম হিসেবে, আপনি প্রত্যাশা করেন ভাইরাসগুলো দীর্ঘমেয়াদে কম মারাত্মক হিসেবে বিকশিত হয়। অর্থাৎ যত দিন যায় ততই এর প্রভাব দুর্বল হতে থাকে। তবে এটি নিশ্চিত তথ্য নয়। উদ্বেগের বিষয় হলো যদি ভাইরাসটি পরিবর্তিত হয় তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর এটিকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না এবং একটি নির্দিষ্ট টিকা বা প্রতিষেধকও আর কাজ করবে না

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close