বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৫ শিক্ষার্থীর উদ্ভাবন

এবার রোগ শনাক্তে রোবট

মানুষের শরীরের তাপমাত্রা, হৃৎকম্পন, অক্সিজেনের পরিমাণ ও রক্তচাপ পরিমাপসহ বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে সক্ষম একটি মেডিকেল রোবট আবিষ্কারের দাবি করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাঁচ শিক্ষার্থী। রোবটটির নাম ‘মিস্টার ইলেকট্রোমেডিকেল’। এমনকি ওই রোবটে সংযুক্ত করা হয়েছে থার্মো স্ক্যানার। একজন চিকিৎসকের পক্ষে রোগীর সংস্পর্শে আসতে যেখানে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে, সেখানে ‘মিস্টার ইলেকট্রোমেডিকেল’ রোবটে স্থাপিত থার্মো স্ক্যানার দ্বারা পরীক্ষা করায় কারো কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে না।

শুধু তাই নয়, ‘মিস্টার ইলেকট্রোমেডিকেল’ নামের ওই রোবটটি চলাফেরা করা, সালাম দিয়ে নিজের নাম বলা, দেশের নাম, জাতির জনক ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলতে পারে।

ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রোমেডিকেল বিভাগ সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমান করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে এই রোবট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। সংক্রমণের ভয়ে আক্রান্তের কাছে যাওয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকির ভয় নেই রোবটের। ফলে ‘মিস্টার ইলেকট্রোমেডিকেল’ অনায়াসেই শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, ইজিসি, হার্টবিট ও অক্সিজেনের পরিমাণ পরিমাপ করতে পারবে। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে ওষুধ ও খাবার সরবরাহের কাজও করতে পারবে এই রোবট।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান, মো. আনাসুর রহমান, মো. মীর আমিন, মেহেদী হাসান ও ষষ্ঠ ব্যাচের শিক্ষার্থী আবদুল মোন্নাফ মাত্র ১৫ দিনের অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই রোবট বানিয়েছেন। ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের ল্যাবে এই রোবট বানানো হয়। এতে খরচ হয় ৫০ হাজার টাকা। যার বড় অংশ শিক্ষার্থীরাই জোগাড় করেছেন।

ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, মি. ইলেকট্রোমেডিকেল নামের এই রোবট মানুষের শরীরের রক্তচাপ, রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ, ইসিজি, হৃৎকম্পন, (হার্টবিট), কোলেস্টরল, ইউরিক এসিড ও ব্লাড সুগার পরিমাপসহ রোগ নির্ণয়ের জন্য রোবটটিতে বিপি মনিটর, ইসিজি সেন্সর, পালস অক্সিমেটরি সেন্সর, জিসিইউ সেন্সর, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও থার্মাল স্ক্যানার যুক্ত করা হয়েছে। আর চলাফেলা করার জন্য এর মধ্যে ক্যামেরা ও আল্ট্রাসনিক সেন্সর লাগানো হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এসব ফিচার ব্যবহারও করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, পালস অক্সিমেটরি সেন্সরে আঙুল রাখলেই হৃদয়ের কম্পন হার্টবিট ও অক্সিজেনের পরিমাণ দেখা যাবে। রোবটের হাতে থাকা রক্তচাপ পরিমাপ যন্ত্র দিয়ে সহজেই উচ্চ রক্তচাপ ও নিম্ন রক্তচাপ জানা যাবে। তারা আরো জানান, মাদকাসক্ত শনাক্ত করতে এবং আগুন লাগার খবর দিতে রোবটটিতে অ্যালকোহল ডিটেক্টর ও ফায়ার অ্যালার্ম যুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। পাশাপাশি যেকোনো জায়গা থেকে মুঠোফোনে রোবটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মোবাইল অ্যাপস তৈরির কাজও করছে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী।

ইলেকট্রোমেডিকেল টেকনোলজি বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান জানান, দেশে আমরাই প্রথম এ ধরনের মেডিকেল রোবট তৈরি করেছি। একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সকল পরীক্ষা-নীরিক্ষার কাজ এই রোবট দিয়ে করানো সম্ভব। রোবটিকে আরো আধুনিক ও উন্নত করার চেষ্টা চলছে। চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতেও এটি কাজ করতে পারবে। প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মিস্টার ইলেকট্রোমেডিকেল দেশের সেরা মেডিকেল রোবট হবে বলে তিনি আশা করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রোমেডিকেল বিভাগের জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর মো. আবুল কাশেম জানান, রোবটটি বিভিন্ন বায়োমেডিকেল কাজ করতে পারে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, ছাত্র-শিক্ষকরা তাদের স্বল্প সামর্থ্যরে মধ্যে এই রোবট তৈরি করেছে। কেউ অর্থায়ন করলে রোবটটিকে আরো কার্যকর করা সম্ভব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close