পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

দাদার কীর্তির দাদা আর নেই

দাদার কীর্তির দাদা অভিনেতা তাপস পাল আর নেই। সামনেই দোল, বসন্তের মন কেমন করে হাওয়ায় ভরে গিয়েছে শহর। দাদার কীর্তির কেদার আবার পথে নামবেন রং মাখতে। কিন্তু বাস্তব কেদারের জীবনে ইতি টেনে দিল এই বসন্ত। ১৯৫৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর হুগলির চন্দননগরে জন্ম ভারতীয় বাংলা সিনেমার নায়ক তাপস পালের। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ। কলেজে পড়াকালীন নজরে পড়েন পরিচালক তরুণ মজুমদারের। মাত্র ২২ বছর বয়সে মুক্তি পায় প্রথম ছবি দাদার কীর্তি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। একের পর এক হিট ছবি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের।

বাংলা ছবিতে তিনি ছিলেন যেন সেই পরিচিত পাশের বাড়ির ছেলে। চন্দননগর থেকে উঠে আসা এক অপরাজেয় নায়ক। আজও বাঙালি দর্শক বার বার সেই দাদার কীর্তির তাপসকে মনে করেন। সেই ছবিতে প্রবল জনপ্রিয় হয়েছিল তার নিপাট ভালোমানুষি, যাকে হয়তো বোকামি বলে পরিহাস করা হয়। কিন্তু তা আজও প্রেমের বার্তা দিয়ে ফেরে। এখানেই তাপস পালের অভিনয়ের দক্ষতা। দাদার কীর্তির মতো সাহেব ছবিতেও তিনি উজ্জ্বল। বার বার এমন চরিত্র নির্বাচন করছেন, যা বাংলার তথাকথিত হিরোইজমকে ভেঙে দিয়েছে। এই স্বাভাবিক, সারল্যই ছিল তাপস পালের ইউএসপি। যে কারণে তার একের পর এক পারিবারিক ছবি হয়ে উঠেছিল তৎকালীন বাংলার কমার্শিয়াল ছবি। এক দিকে নিপাট সারল্য অন্য দিকে ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে বীরত্ব প্রদর্শন করে নায়িকাকে উদ্ধার। এমন বহু দৃশ্যে তিনি অভিনেতা থেকে স্টার হয়ে উঠেছিলেন। এই কমার্শিয়াল স্টারকে অভিনয়ের জন্য ডেকেছিলেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো পরিচালক। দর্শক দেখেছে উত্তরা বা মন্দ মেয়ের উপাখ্যান ছবিতে তার অসামান্য অভিনয়।

১৯৮৪ সালে হীরেন নাগের ছবিতে তার বিপরীতে নায়িকা ছিলেন মাধুরী দীক্ষিত। রাখি গুলজারের সঙ্গেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে তাকে। কিন্তু তাপস পাল পুরোদস্তুর বাংলার অভিনেতা। কলকাতায় তরুণ মজুমদারের ডাকে মুম্বাই থেকে কলকাতা ফিরে এসে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে অভিনয় করেন ভালোবাসা ভালোবাসা ছবিতে। ১৯৮৫ সালে এই ছবি বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য এনে দেয়। বাংলা ছবিতে তৈরি হয় দেবশ্রী-তাপস জুটি। একে একে বাড়তে থাকে ছবির তালিকা। অর্পণ, সুরের সাথী, সুরের আকাশে, নয়নমণি, চোখের আলোয়, তবু মনে রেখো। তপন সিংহ থেকে অঞ্জন চৌধুরী, অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় থেকে তরুণ মজুমদার ৮০ থেকে ৯০ দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের প্রেম, অভিমান, অনুরাগ এবং লড়াই, বাঙালির সমস্ত আবেগের মিশেল তাপস পাল।

পরবর্তী সময়ে দেবশ্রী পেরিয়ে শতাব্দীর সঙ্গে জুটি বাঁধেন নায়ক তাপস পাল। হরনাথ চক্রবর্তী, তরুণ মজুমদারের হাত ধরে এই জুটির ম্যাজিক ক্লিক করে বক্স অফিসে। শুধু শতাব্দী বা দেবশ্রী নয় ইন্দ্রাণী হালদার থেকে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন তিনি। দেবাদিত্যের আটটা আটের বনগাঁ লোকাল ছবিতে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল তাপস পালকে। রুপালি পর্দার নায়ক থেকে প্রথমে বিধানসভা এবং পরে সংসদের গ-িতে পা রাখেন তাপস পাল। ২০০৯ সালে তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। ওই বছর রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের টিকিটে কৃষ্ণনগর থেকে জিতে সংসদ সদস্য হন তাপস পাল। নানা মন্তব্যকে ঘিরে বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত অভিনয়ের চেনা জগতেও ফিরতে চেয়েছিলেন তাপস পাল। কিন্তু অসুস্থতা তাকে সরিয়ে নিয়ে গেল সবার অলক্ষ্যে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close