আদালত প্রতিবেদক

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২০

সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে অপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে হত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডিত হওয়ার প্রহর গুনছেন সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক সরকারের সাবেক এ প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষিত মৃত্যুদন্ড সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়েও বহাল হয়ে যাওয়ায় দন্ড কার্যকরে এখন অপেক্ষা পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের। তা হয়ে গেলে অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হবে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে।

একাত্তরে মুসলিম লীগ নেতা থাকাকালে কায়সার রাজাকার বাহিনীতে যোগ দিয়ে হয়ে উঠেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একজন বিশ্বস্ত সহযোগী। ‘কায়সার বাহিনী’ নামে নিজে একটি দল গঠন করে তিনি এমন সব অপরাধ ঘটাতে থাকেন, যেজন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে তিনি ‘কুখ্যাত কায়সার’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন। পরে এ ‘কুখ্যাত কায়সার’-ই স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের আমলে হয়ে যান বিএনপির লোক। জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে তার গড়া জাতীয় পার্টিতে ভিড়ে যান কায়সার। দল বদলের কৌশলে প্রতিমন্ত্রীও বনে যান তিনি। সবশেষ তিনি ওয়ান-ইলেভেনের সময় পিডিপিতে (প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল) যোগ দেন।

যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে ২০১৩ সালের ১৫ মে কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। বিচার শেষে ২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

সৈয়দ কায়সার ওই দন্ডের বিরুদ্ধে আপিল করলে গত ১৪ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রেখে আদেশ দেন। নিয়ম অনুযায়ী, রায় প্রকাশের পর আসামি ও রাষ্ট্র উভয়পক্ষ এ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবেন। তাতে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত না বদলালে আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারবেন। যদি রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করেন, তবে সৈয়দ কায়সারের মৃত্যুদন্ড কার্যকরের পদক্ষেপ নেবে কর্তৃপক্ষ।

সৈয়দ কায়সারের জন্ম-পরিচয় : হবিগঞ্জের মাধবপুরের ইটাখোলা গ্রামের সৈয়দ সঈদউদ্দিন ও বেগম হামিদা বানুর ঘরে ১৯৪০ সালের ১৯ জুন জন্ম নেন সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার।

কায়সারের বাবা সৈয়দ সঈদউদ্দিন ১৯৬২ সালে সিলেট-৭ আসন থেকে কনভেনশন মুসলিম লীগের এমএলএ নির্বাচিত হন। ওই বছরই মুসলিম লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন তার ছেলে কায়সার। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কায়সার মুসলিম লীগ সিলেট জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৭০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি পরাজিত হন।

কায়সার বাহিনী গঠন : ১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ৫০০ থেকে ৭০০ স্বাধীনতাবিরোধীকে নিয়ে ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করেন এ মুসলিম লীগ নেতা। তিনি নিজে ছিলেন ওই বাহিনীর প্রধান। তিনি ওই সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের লোক এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর দমন অভিযান চালিয়েছিলেন- সে বিষয়টি অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে আসে। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করার ঠিক আগে কায়সার পালিয়ে লন্ডনে চলে যান। দেশে ফেরেন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর।

মৃত্যুদন্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া : বিধান অনুযায়ী, আপিল বিভাগ এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। সেই রায়ের অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন ট্রাইব্যুনাল। মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে পাঠানোর পর সেটি ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিকে পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ। পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ। রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি হয়ে গেলে এবং তাতে মৃত্যুদন্ড বহাল থাকলে আসামিকে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। এরপর রাষ্ট্রপতির ক্ষমার বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে গেলে রাষ্ট্র কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেই রায় বাস্তবায়ন করবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close