রাকিবুল ইসলাম রাকিব, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)

  ২৭ জানুয়ারি, ২০২০

পুলিশের গুলিতে নিহতের ৫১ বছর

আজও মেলেনি শহিদ হারুনের স্বীকৃতি

মৃত্যুর ৫১ বছর পরও ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে নিহত গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আজিজুল হক হারুনের আত্মত্যাগ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি। মুক্তিযুদ্ধের পর পৌর শহরে তার নামে ‘শহীদ হারুন পার্ক’ গড়ে তোলা হয়। কিন্তু পার্কের জায়গা এখনো সরকারিভাবে বরাদ্দ পায়নি। তাই হারুনের নামে গড়ে উঠা পার্কটি ভবিষ্যতে থাকবে কি না সেটা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, হারুনের মৃত্যুর পর গৌরীপুর উত্তাল হয়ে উঠে। ঘটনার কয়েক দিন পর তৎকালীন জেলা সাব ডিভিশনাল অফিসার (এসডিও) গৌরীপুর আসলে কালীপুর বাজার এলাকায় আমরা তার ওপর হামলা চালিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করি। কিন্তু মৃত্যুর এত বছর পরেও শহীদ হারুনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়াটা দুঃখজনক।

জানা গেছে, পূর্বপাকিস্তানি শাসকদের পতনের দাবিতে গণআন্দোলনের ডাকে ১৯৬৯ সালে ২৭ জানুয়ারি গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পৌর শহরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি ধানমহাল এলাকায় আসতেই জেলা সাব ডিভিশনাল অফিসারের (এসডিও) নির্দেশে এসআই এম এ মল্লিকের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা মিছিলে লাঠিচার্জ ও গুলি করলে আজিজুল হক হারুন নিহত। পরে তার লাশ থানায় এনে রাখা হয়। এদিকে তৎকালীন গৌরীপুর মহাবিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ ও তার সহযোগীরা লাশ আনতে গেলে পুলিশ তাদের হুমকি দিয়ে বের করে দেয়। পরে ওইদিন সন্ধ্যায় নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ছামারুল্লা গ্রামে হারুনের লাশ পাঠানো হয়। নান্দাইল-আঠারবাড়ী সড়কের পাশেই হারুন চিরনিদ্রায় আছেন।

প্রবীণ সাংবাদিক সুপ্রিয় ধর বাচ্চু বলেন, আমার বাবা মধুসূদন ধর ও মা কমলা ধর নেতাজি সুভাষ বসুর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হারুন নিহত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আকাশবানী কলকাতা বেতারকেন্দ্রের প্রচারিত খবরের অংশে খবর পাঠক নীলিমা সান্নাল হারুন নিহত হওয়ার খবরটি প্রচার করলে স্থানীয় প্রশাসন ও মানুষের মধ্যে জল্পনা শুরু হয়। ওইদিন বিকালে পুলিশ আমাদের বাড়িতে এসে সবকিছু তছনছ করে। পুলিশের সন্দেহ ছিল আমার বাবা ও মা ভারতীয় গোয়েন্দো বাহিনীর চর হিসেবে কাজ করে ওই খবর কলকাতা পাঠিয়েছেন।

জানা গেছে, হারুন পার্কের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড। পার্কের প্রবেশ পথে ফটক না থাকায় কুকুর ও বিড়াল অবাধে বিচরণ করছে। পার্কের ভেতর শহীদ মিনারের গা ঘেঁষে গড়ে উঠেছে স্যানেটারি কারখানা। সংস্কারের অভাবে শহীদ হারুন স্মৃতি স্তম্ভের পাশে আগাছা জন্মে জঙ্গল হয়ে গেছে। মানুষ এই স্তম্ভের গা ঘেঁষে যত্রতত্র প্রস্রাব-পায়খানা করছে। চায়ের দোকানের ময়লা পানি ও নোংরা আবর্জনাগুলো প্রতিদিন এখানে ফেলা হচ্ছে। ফলে এই চত্বরটি বর্তমানে দুর্গন্ধযুক্ত স্থানে পরিণত হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেজুতি ধর বলেন ফারহানা করিম বলেন, শহীদ হারুনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও হারুন পার্কের নামে জমি বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close