প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ জানুয়ারি, ২০২০

ছত্রাক দিয়ে বাড়ি হচ্ছে চাঁদ-মঙ্গলে জানাল নাসা

চাঁদ, মঙ্গলে ঘরবাড়ি বানানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তবে ইট, সিমেন্ট, বালি, চুনসুরকি দিয়ে নয়, সেইসব ঘরবাড়ি তৈরি হবে ছত্রাক দিয়ে। বলা ভালো, ছত্রাকের যে অংশটিকে আমরা দেখতে পাই না, মূলত সেই ‘মাইসেলিয়া’ দিয়ে। আদতে যেটা ছত্রাকের মূল অংশ। ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে নাসার এমস রিসার্চ সেন্টারে ‘মাইকো-আর্কিটেকচার প্রজেক্টে’র প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর লিন রথ্?সচাইল্ড এ কথা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, চাঁদ আর মঙ্গলে নতুন বসতির সেইসব ঘরবাড়িতে শুধু মানুষ নয়, থাকবে অন্য জীবও। এখন যেমন ফ্ল্যাটে, বাড়িতে মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম থাকে, চাঁদ-মঙ্গলে আমাদের ঘরবাড়িতেও তেমনই রাখা থাকবে নানা ধরনের অণুজীব। যারা বাঁচার প্রয়োজনে শুষে নেয় সৌরশক্তি। আর তা দিয়ে পানি ও বিষাক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসকে বদলে দেয় অক্সিজেনে। কার্যত বায়ুমন্ডলহীন চাঁদ, মঙ্গলে আমাদের শ্বাসের বাতাস হয়ে উঠবে সেই অক্সিজেনই। পানি ও বিষাক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসকে ভেঙে সেই অণুজীবরা বানাতে পারে আরো কিছু পদার্থ। যা খেয়েদেয়ে তারা বেঁচে থাকবে। তাই এদের ‘সায়ানোব্যাকটেরিয়া’ও বলা হয়।

চাঁদ, মঙ্গলের শহরগুলো মোটেই তেমন ধাতব হবে না। পৃথিবীর বাইরে বসতি বানাতে ধাতুর ব্যবহার যতটা কম করা যায়, সে কথা মাথায় রেখেই কাজ শুরু করে দিয়েছে নাসা। আর তার জন্যই শুরু হয়েছে ছত্রাক নিয়ে কাজ। যা চাঁদ, মঙ্গলকেও করে তুলবে ‘সবুজ থেকে সবুজতর’!

মাইকো-আর্কিটেকচার প্রজেক্টের অন্যতম বিজ্ঞানী, নাসার সদর দফতরে পাথফাইন্ডার মিশনের সদস্য অমিতাভ ঘোষ বলেছেন, সভ্যতার ওই নতুন বসতি বানাতে আমাদের গবেষণা একেবারেই অভিনব পথে এগোচ্ছে। চাঁদে ও মঙ্গলে বসতি বানানোর মালমশলা নিয়ে যাওয়া হবে।

রথ্?সচাইল্ড জানিয়েছেন, কচ্ছপের মতোই মালমশলা নিয়ে যেতে হবে। তবে সেইসব মালমশলা পিঠে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভার বইতে হবে না। তার পরিবর্তে নিয়ে যাওয়া হবে ছত্রাক। যা অসম্ভব হাল্কা। যেন পালকের মতো। ছত্রাকের কয়েকটি সুবিধা রয়েছে। পৃথিবীর বাইরে যেতে সুদীর্ঘ পথ পেরনোর সময় ছত্রাকের কোনো ক্লান্তি আসবে না! ছত্রাক মরে যাবে না। সেগুলো নিস্তেজও হয়ে পড়বে না। এমনকি, চাঁদ বা মঙ্গলের মাটিতে পা ছোঁয়ানোর পর আমরা সুযোগ-সুবিধা মতো ছত্রাকের মাইসেলিয়াকে বাড়িয়ে নিতে পারব। যাতে আমরা নামার পর সেই ছত্রাক সেখানে আমাদের আস্তানা বানিয়ে দিতে পারে। দেখা গেছে, মঙ্গলের অসম্ভব রুখুসুখু পরিবেশে দিব্য বেঁচে থাকতে পারে সেই ছত্রাক। বেঁচে থাকতে পারে চাঁদেও, বায়ুমন্ডলের অভাবে যেখানে প্রতি মুহূর্তেই আছড়ে পড়ছে সূর্য থেকে ছুটে আসা বিষাক্ত কণা, রশ্মি, মহাজাগতিক রশ্মিও। শুধু তাই নয় ছত্রাকের বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন হয় না, সেই অক্সিজেন আমরা টেনে নিতে পারব। আর বিষাক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস টেনে নেবে ছত্রাক। এমনকি, আমাদের জৈববর্জ্য বস্তুগুলোও খেয়ে নিতে পারবে ছত্রাক। বা সেই আস্তানায় থাকা ব্যাকটেরিয়াগুলো। ফলে চাঁদ, মঙ্গলের পরিবেশ দূষিতও হবে না।

রেফ্রিজারেটরে রাখা অনেক দিনের খাবারদাবারেও ছত্রাক জন্মায়। আমরা বলি ‘ছাতা পড়েছে’। যে জৈব যৌগগুলো থেকে পেনিসিলিনের মতো অ্যান্টিবায়োটিক বানানো হয়, অনেক দিন রাখা থাকলে সেই যৌগগুলোর ওপরেও জন্মায় ছত্রাক।

রথ্?সচাইল্ডের কথায়, ‘ছত্রাকের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার মাইসেলিয়া অংশটি। এই অংশটিই পরে মাশরুম তৈরি করে। ঠিকমতো তাপমাত্রা, পরিবেশ পেলে তারা আরো বড় কাঠামোও তৈরি করতে পারে। চাঁদ আর মঙ্গলে এই মাইসেলিয়া দিয়ে আমরা যে নতুন বসতি বানানোর পথে এগোচ্ছি, তার ঘরবাড়িগুলো শুধুই যে চার দেওয়ালের হবে, তা নয়; সেগুলো একই সঙ্গে রক্ষা করবে বাস্তুতন্ত্রকেও।

রথ্?সচাইল্ড ও অমিতাভ জানাচ্ছেন, একেবারে গম্বুজের মতো। বলা যায়, তার তিনটি তলা বা স্তর থাকবে। গম্বুজের মাথাটা দেখা যাবে চাঁদ বা মঙ্গলের পিঠে। জমাট বাঁধা ওয়াটার আইস দিয়ে, যা সেই মুলুকের অন্দরে লুকনো (‘ট্র্যাপ্?ড’) রয়েছে। সেই ওয়াটার আইস অসম্ভব ক্ষতিকারক তীব্র বিকিরণের হাত থেকে আমাদের বসতিগুলোকে বাঁচাবে। আর সেই পানির নিচে গড়িয়ে পড়ে পৌঁছে যাবে আমাদের বসতির দ্বিতীয়তলা বা স্তরে থাকা ছত্রাক ও অণুজীবগুলোর কাছে। যাতে সৌরশক্তি দিয়ে সেই পানিকে ভেঙে তারা তাদের প্রয়োজনীয় খাবারদাবার পেতে পারে। আবার আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ছাড়তে পারবে অক্সিজেনও। পরিবশকে বিষমুক্ত করতে ওই পানির সাহায্যেই কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাসকে ভেঙে দিতে পারবে। পারবে তারও নিচের স্তর বা তলায় থাকা ছত্রাকের মাইসেলিয়াকে টিকে থাকার রসদ জোগাতে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close