চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২২ জানুয়ারি, ২০২০

চসিকের সাধারণ সভা

‘ফুটপাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে জেল-জরিমানা’

নগরীর রাস্তা, ফুটপাত ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের জায়গার ওপর কাঁচাবাজার, হকার বসানোর বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানের কথা উল্লেখ করলেন চসিক মেয়র আলহাজ আ জ ম নাছির উদ্দীন। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন রাস্তা, ফুটপাত ও ড্রেনের ওপরে ইট, বালি, কংকর লৌহজাত দ্রব্য, নির্মাণসামগ্রী, অস্থায়ী দোকান ও দোকান পাটের

মালামাল এবং কাঁচাবাজার বসিয়ে সর্বসাধারণের চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা কোনোক্রমে বরদাশত করা হবে না। এসব কর্মকা- পরিবেশ দূষণ এবং নগরীর সৌন্দর্যহানির সামিল। যা নাগরিক স্বার্থের পরিপন্থি ও বেআইনি। এ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। অভিযান চলাকালে রাস্তা, ফুটপাত ও চসিকের জায়গার ওপর কোনো ধরনের স্থাপনা পাওয়া গেলে মালামাল জব্দ ও জেল-জরিমানাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত ৫ম পরিষদের ৫৪তম সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে সিটি মেয়র আলহাজ আ.জ.ম নাছির উদ্দীন এসব কথা বলেন। চসিক থিয়েটার ইনস্টিটিউট হলে অনুষ্ঠিত এই সভায় চসিক প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চসিক প্রধান নির্বাহী মো. সামসুদ্দোহা, প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল সোহেল আহমদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মফিদুল আলম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, মেয়রের একান্ত সচিব মো. আবুল হাশেম, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ) জাহানারা ফেরদৌস, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আখতারসহ চসিক বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ এবং নগরীর সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভা সঞ্চালনায় ছিলেন চসিক সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী। সভাপতির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ঐতিহাসিক লালদিঘি ময়দানে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী সুশৃঙ্খল মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী গঠিত কমিটি সদস্য ও নেতারাসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে এ সমাবেশে যোগদান করবেন। নগরীর সর্বসাধারণ মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ তা এই সমাবেশের মাধ্যমে প্রমাণ করতে চায় চসিক। সভায় সিটি মেয়র ‘মেয়র হেলথ কেয়ার কার্ড’ প্রদানের কথা উল্লেখ করে এখনো যারা তালিকা জমা দেননি তাদের আগামী ৩০ জানুয়ারি ২০২০ এর মধ্যে জমাদানের জন্য আহ্বান জানান। নগর উন্নয়নে ওয়ার্ড ভিত্তিক উন্নয়নের ফিরিস্তি জনবহুল এলাকায় টাঙ্গিয়ে দেয়া এবং ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের ওপর গুরুত্বারোপ করে সিটি মেয়র বলেন, এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ওয়ার্ডের সামগ্রিক উন্নয়ন চিত্র সম্পর্কে নগরবাসী জানবে এবং দেখবে। এতে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের জনপ্রিয়তাও বৃদ্ধি পাবে। নগরীর হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও কমিউনিটি সেন্টারের বর্জ্য অপসারণের কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন, যত্রতত্র ময়লা ফেলে নগর পরিবেশকে কোনোক্রমেই ব্যাহত করতে দেয়া যাবে না। তাই নগরীর হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও কমিউনিটি সেন্টারের মালিকদের নিয়ে বৈঠকের পরামর্শ দেন তিনি। মেয়র চসিকের কর্মকা-ের জবাবদিহির কথা উল্লেখ করে বলেন, চসিকের গ্রাউন্ড লেভেলে জনবল কমে গেছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে সবাইকে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে হবে। তাই মাঠ পর্যায়ের সুপারভাইজার সঠিকভাবে কাজ তদারকি করছে কিনা তা দেখভালের দায়িত্ব উপসহকারী প্রকৌশলীদের। আর উপসহকারী প্রকৌশলীরা মাঠ পর্যায়ের কাজ সঠিকভাবে তদারকি করছে কিনা তার দেখভাল নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর। তাই নিজেদের মধ্যে সমন্বয়টা নিবিড়ভাবে করতে হবে। এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র বলেন, উন্নয়ন কাজে জড়িত ঠিকাদারদের করুণা দেখার কোনো সুযোগ নেই। তাদের কাছ থেকে কার্যাদেশ মতে শতভাগ কাজ আদায় করতে হবে। কাজের গুণগত মানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করা যাবে না। মুজিববর্ষ ২০২০ উদ্যাপন উপলক্ষে মশকমুক্ত, পরিচ্ছন্ন, সবুজনগরী বিনির্মাণ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনার আলোকে চসিকের উদ্যোগে নগরীর ফুটপাত, গোলচত্বর ও সড়কগুলোর সবুজায়ন, সৌন্দর্যবর্ধনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিয়মিতভাবে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এ নগরের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ অব্যাহত রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে সিটি মেয়র বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীকে উপলক্ষে করে যত্রতত্র জাতির পিতা ছবি, ম্যুরাল ও ভাস্কর্য স্থাপন করা যাবে না। এ ব্যাপারে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের তদারকি করার আহ্বান জানান মেয়র। আন্তর্জাতিক মাতৃদিবস ভাষা দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ২০ দিনব্যাপী একুশে বইমেলা আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে নগরীর আউটার স্টেডিয়াম জিমনেশিয়াম চত্বরে আয়োজন, নগরীতে অবস্থিত বিভিন্ন বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর মূল্য পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক পর্যালোচনাসহ বিবিধ বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অনুষ্ঠিত সভায় অর্থ ও সংস্থাপন, শিক্ষা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্যরক্ষা, নগর অবকাঠামো নির্মাণ ও সংরক্ষণ, আইন শৃঙ্খলাবিষয়ক, সমাজকল্যাণ ও কমিউনিটি, বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ, হিসাব নিরীক্ষা ও রক্ষণ বিষয়ক যোগাযোগ, নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, পরিবেশ উন্নয়ন সম্পর্কিত, দারিদ্র্য হ্রাসকরণ ও বস্তি উন্নয়ন, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ, পানি ও বিদ্যুৎ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব কমিটির কার্যবিবরণী উপস্থাপন করেন এবং আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভার শুরুতে সম্প্রতি নগরীতে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close