নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ জানুয়ারি, ২০২০

ক্যাসিনো সাঈদের বিরুদ্ধে তদন্তে ৩ সংস্থা

ক্যাসিনো কান্ডে বিতর্কিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার মোমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ ত্রিমুখী অনুসন্ধানে নেমেছে তদন্ত দল। এর মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। দুদকের তদন্ত দল রয়েছে। সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনুসন্ধান কাজ প্রায় শেষের দিকে। সাঈদের বিরুদ্ধে অচিরেই মানিলন্ডারিং মামলা হতে পারে।

বিএফআইইউ সূত্রে জানা গেছে, বিএফআইইউ তদন্ত কাজ শুরু করার পর অর্থ পাচারের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকে সেই প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে বিএফআইইউ। মোমিনুল হক সাঈদের ডজন খানেক অ্যাকাউন্ট জব্দও করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিএফআইইউয়ের প্রাথমিক প্রতিবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা না গেলেও তদন্তকারী দলের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাবেক কমিশনার মোমিনুল হক সাঈদ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বেশ কয়েকটি দেশে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাচার করেছেন সিঙ্গাপুরে। সিঙ্গাপুরে তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি-গাড়ি রয়েছে। বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে সাঈদ এসব টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। এরই মধ্যে তদন্ত দল ওইসব ব্যাংকের নথিপত্রও সংগ্রহ করেছে বলে জানা যায়। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দলটি ডজন খানেক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার সন্ধানও পেয়েছে, যা অ্যাকাউন্ট জব্দের মাধ্যমে এরই মধ্যে আটকা পড়েছে।

তবে সাঈদের বিরুদ্ধে তদন্তের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জনসংযোগ শাখায় যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। মতিঝিল-আরামবাগ এলাকার সাবেক কমিশনার মোমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার হয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করছে সিআইডি।

সিআইডি সূত্র জানায়, সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের একটি তদন্ত দল সাঈদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে। প্রাথমিক অবস্থায় সাঈদ বিদেশে অর্থ পাচার করেছে এমন তথ্যও পেয়েছে। তবে কী পরিমাণ টাকা, কোন কোন পথে পাঠিয়েছেন তা সম্পূর্ণভাবে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি। শিগগিরই সাঈদের বিরুদ্ধে সিআইডির তদন্ত কাজ শেষ হবে। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল বলেন, সাঈদের নামে সিআইডিতে বর্তমানে কোনো মামলা নেই। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার সংক্রান্ত তদন্ত চলছে। অর্থ পাচার প্রমাণিত হলে মামলা হবে। মামলা হওয়ার আগে সাঈদ নির্বাচন করছেন নাকি করছেন না সেটি সিআইডির দেখার বিষয় নয়। তাছাড়া আরও দুটি সংস্থা তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে। তারাও এখনো কোনো মামলা করেনি। অন্য কেউ মামলা করলেও হয়ত তার বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশনে যেতে পারতাম। কারণ অর্থ পাচার সংক্রান্ত তদন্তের জন্য সিআইডিকে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে।

সাঈদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশনও দুদক। দুদক একইসঙ্গে অর্থ পাচার ও অবৈধ উপায়ে সম্পত্তি অর্জনের বিষয়টিও তদন্ত করছে। জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনের প্রাথমিক তথ্যও পেয়েছে দুদক। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দুদক সাঈদের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

এর আগে, ক্যাসিনো কান্ডে জড়িতদের সম্পদের অনুসন্ধানের জন্য দুদক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠিতে ১০৫ জনের ব্যাংক হিসেবে চেয়ে তথ্য চাওয়া হয়। চিঠিতে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা, ঠিকাদার, ব্যবসায়ীসহ কাউন্সিলরের নাম উঠে আসে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুদকের সচিব দিলোয়ার বখত বলেন, ক্যাসিনো সম্পৃক্ততায় যাদের নাম এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। বিশেষ করে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি দুদক অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধান শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close