কাইয়ুম আহমেদ

  ২১ জানুয়ারি, ২০২০

কৃষিতেও সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রা

প্রধানমন্ত্রী কৃষি অর্থনীতিতে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছেন

‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ চিরায়ত এই বাক্যটি শুধুই প্রবাদ নয়, এখন সত্যি হয়ে এসেছে ‘একটি ঘর, একটি খামার’ প্রকল্পের কল্যাণে। আর এই প্রকল্প এনেছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কৃষি অর্থনীতিতে খুলে দিয়েছেন সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা এখন বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে উদীয়মান অর্থনীতির সম্ভাবনাময় দেশ হিসেবে সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই অগ্রযাত্রায় সামিল কৃষি খাতও। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে; দুর্যোগ সহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘একটি ঘর, একটি খামার’ প্রকল্পের আওতায় প্রান্তিক চাষিদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। কৃষি অর্থনীতিকে আরো আধুনিক করতে সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা করেছে। কৃষি উপযোগী উর্বর পলিমাটি আর নদীবিধৌত ও বৃষ্টিস্নাত বাংলার অকৃত্রিম এবং পরিশোধিত পানির সমন্বয়ের মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতির ক্ষেত্রকে শাক্তিশীল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শ্যামল বাংলার প্রকৃতির অফুরন্ত দান যেমন সর্বমানুষের দৈনন্দিন জীবনের অনুষঙ্গ হয়েছে, একইভাবে বিভিন্ন গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের নতুন উদ্ভাবনী শক্তি আর আবিষ্কার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নদীমাতৃক দেশটির সিংহভাগ অর্থনীতি এখন কৃষিকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমীক্ষায় বলছে, ২০৩০ সাল নাগাদ ‘নেক্সট ইলেভেন’ সম্মিলিতভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশকে ছাড়িয়ে যাবে। লন্ডনের একটি শীর্ষ স্থানীয় পত্রিকা লিখেছে, ২০৫০ সালে প্রবৃদ্ধির বিচারে বাংলাদেশ পশ্চিমা দেশগুলোকে ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্বের নামকরা রেটিং বিশেষজ্ঞ সংস্থা মুভিস ও স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশকে সন্তোষজনক অর্থনৈতিক রেটিং দিয়ে যাচ্ছে। ব্রিটেনের দি ইকোনমিস্টের মতে, বাংলাদেমের সূচকগুলো এতই ইতিবাচক যে, তা ধরে রাখতে পারলে অনুন্নয়ন ও দারিদ্র্য কাটিয়ে উঠতে পারবে। নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি এগিয়েছে।

এখন ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করা হয় এবং সেই সঙ্গে ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মধ্যে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। যুগান্তকারী এসব পদক্ষেপে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সবজি রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৫ কোটি ৯৩ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি। দেশের রফতানি করা সবজির প্রায় ৬০ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্যে এবং বাকি ৪০ শতাংশ ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে যায়। বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশের সবজি রফতানি হয়।

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এক সময়ে দেশের মধ্য ও উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোরেই শুধু সবজির চাষ করতেন কৃষকরা। অথচ বর্তমানে দেশের সব এলাকায় সারা বছরেই সবজির চাষ হচ্ছে। এখন ১ কোটি ৬২ লাখ কৃষক পরিবার সবজি চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ধানের উৎপাদন তিনগুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচ গুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে দশ গুণ। প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বছরে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অর্থনীতির মেরুদন্ড হচ্ছে কৃষি। খাদ্য উৎপাদন করলে হবে না, আমাদের নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমাদের দেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হলো কৃষি ও কৃষক। এ দর্শন সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেই স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবুজ বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। কৃষি বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলো কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠপর্যায়ে সম্প্রসারণ, শস্য বহুমুখীকরণ, আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তর, শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপে এখন কৃষি উৎপাদনের ধারা ঊর্ধ্বমুখী।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক আবদুল মুঈদ বলেছেন, কৃষকদের ভর্তুকিতে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে সরকার। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় পাল্টে যাচ্ছে কৃষি খাত।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close