নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ জানুয়ারি, ২০২০

বাণিজ্য মেলা-২০২০

‘গুলিস্তানের হাঁকডাকে’ ক্রেতারা বিপাকে

‘দেইখ্যা লন একশ, বাইছ্যা লন একশ’- এটি রাজধানীর গুলিস্তানে গেলেই শোনা যায় তা নয়; ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায়ও মেলে। বাণিজ্য মেলায় ঢুকলেই শোনা যায় হকারদের ডাক। মেলাটিকে আন্তর্জাতিক বলা হলেও এর কোনো লেশ নেই। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশে যে জায়গাটিতে প্রতি বছর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা হয়, সেটিকে ‘আন্তর্জাতিক’ বলতে নারাজ দেশের অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।

তারা বলেছেন, বাণিজ্য মেলাকে আন্তর্জাতিক বলার অর্থ হলো ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করা। কারণ মেলার অর্থ হলো সেখানে শুধু সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল নতুন পণ্যের পসরা বসানো হবে। কিন্তু বাণিজ্য মেলায় গড়পড়তা সব ধরনের পণ্যই বিক্রি হচ্ছে। কোনো নতুন পণ্য নেই। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিদেশে যেসব আন্তর্জাতিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়; সেখানে কখনো পণ্য বিক্রি হয় না। মেলায় শুধু পণ্যের অর্ডার নেওয়া হয়। তা ছাড়া বিদেশে এক মাস ধরে কোনো মেলা হয় না। মেলা হয় তিন থেকে পাঁচ দিন। মেলার উদ্দেশ্য হলো একটি দেশের সৃষ্টিশীল পণ্য আরেক দেশের সামনে তুলে ধরা। একই সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানো। কিন্তু আন্তর্জাতিক মেলার কোনো মানদন্ডই অনুসরণ করা হয় না বাণিজ্য মেলায়। ভবিষ্যতে বাণিজ্য মেলা বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাওয়ার কথা বলেছেন ব্যবসায়ীরা।

মেলা ঘুরে দেখা গেছে, বাণিজ্য মেলায় ক্রেতাদের দেওয়া হচ্ছে নানা অফার, ছাড়। একটি পণ্য কিনলে তিনটি ফ্রি। সেলফি তুলে জিতুন পুরস্কারÑ এমন অফারও মিলছে বাণিজ্য মেলায়। দেশীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে বিদেশি প্যাভিলিয়নে। চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতিদিন ঠকানো হচ্ছে ক্রেতাদের। পণ্যের দামও রাখা হচ্ছে বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি। বাণিজ্য মেলায় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরে বিস্তর অভিযোগ জমা পড়ে নানা প্রতারণার।

দেখা গেছে, নানা অনিয়ম আর অসংগতি। ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যের দাম রাখা হয় অস্বাভাবিক। নিম্নমানের পণ্যও গছিয়ে দেওয়া হয় ক্রেতাদের। এমনকি মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে বিস্তর। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরে প্রতিদিন অসংখ্য অভিযোগ আসে ভোক্তাদের কাছ থেকে। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ঘিরে প্রতি বছরই মিরপুর এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়। মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েন মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, কল্যাণপুরসহ ওই এলাকার বাসিন্দারা। গত সপ্তাহে এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী মেলা থেকে পণ্য কিনতে গিয়ে এক বিক্রয়কর্মীর খারাপ আচরণের শিকার হন। বেশ কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করেছেন, মেলার ভেতরে নানা হয়রানি ও খারাপ আচরণের শিকার হয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সামনে রেখে বাণিজ্য মেলা চালু হয়েছিল, তার কিছুই এখন মেলায় নেই। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিনের মতে, সারা বছর রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কোনো খবর থাকে না। বাণিজ্য মেলার সময় এলেই তাদের মূল কাজ শুরু হয়। মেলা ঘিরে যত অনৈতিক কাজ হয়, সবই হয় বাণিজ্য মেলায়। আর এই সুযোগ করে দেয় ইপিবি। বাণিজ্য মেলার কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হচ্ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close