পার্থ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে

  ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

বিক্ষোভ থামছে না পশ্চিমবঙ্গে

৬ জেলায় ইন্টারনেট বন্ধ

নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে শনিবারের পর গতকাল রোববারও উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা। কোথাও রেল অবরোধ, কোথাও রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। বাধ্য হয়েই কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। গতকাল রাজ্যের ৬ জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। বলা হচ্ছে, রাজ্য সরকারের বারবার আহ্বান সত্ত্বেও কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত ও হাঙ্গামা বাধানোর চেষ্টা করছে। তাই আপাতত রাজ্যের শান্তি ও সাধারণ মানুষের স্বার্থে বাতিল করা হচ্ছে ইন্টারনেট পরিষেবা। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সরকার বারবার বলা সত্ত্বেও কিছু বহিরাগত অন্যদের ফাঁদে পা দিয়ে অশান্তি করছে। নিরুপায় হয়ে সরকারকে কিছু এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ করতে হচ্ছে।

এদিকে জেলায় জেলায় অবরোধ-বিক্ষোভ প্রতিবাদের নামে যথেচ্ছ ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, রাস্তা অবরোধ যারা করবে, তাদের কাউকে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে কড়া বিবৃতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অশান্তি ছড়ানোর ইঙ্গিত আসতেই কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। মুখ্যসচিব রাজীব সিন্?হা, রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, কলকাতা পুলিশের সিপি অনুজ শর্মাসহ শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে ভিডিও বার্তায় ফের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন কার্যকর না করার আশ্বাস দিয়েছেন। মমতা বলেছেন, ভুল বোঝাবুঝি করবেন না, উত্তেজনা ছড়াবেন না। প্ররোচনায় পা দেবেন না। সাম্প্রদায়িক উসকানিতে কান দেবেন না। বাংলায় ক্যাব কার্যকর হবে না। কিন্তু তাতেও বহু জায়গায় উত্তেজনা প্রশমিত না হওয়ায় এবার বেশ কিছু জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য সরকার।

রাজ্যের যে ৬ জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে, সেগুলো হলো উত্তর দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদ, হাওড়া এবং বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত ও বসিরহাট মহকুমা। এ ছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর ও ক্যানিং মহকুমাতেই বন্ধ হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। অন্যদিকে, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত থাকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায়। রোববার মহেশতলা থানার ডাকঘর থেকে ডাকঘরা জালখুরা পর্যন্ত রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ চলে বজবজ ট্যাঙ্করোড। নতুন নাগরিকত্ব আইন বিরোধী আন্দোলনের জেরে শনিবারের পর রোববারও সকাল থেকে প্রায় রাজ্য জুড়েই ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ। বেলা যত বেড়েছে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শিয়ালদহ-বজবজ বিভাগের আকড়া স্টেশনে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। আকড়া স্টেশনে বেলা পৌনে ১টা নাগাদ রেল অবরোধ করা হয়। আগুন ধরিয়ে দেন প্রতিবাদী জনতা।

অন্যদিকে, নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে দুদিন ধরেই অশান্ত রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল। মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়ার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা এবং রেললাইন অবরোধ করে একাধিক ট্রেনে একের পর এক আগুন ধরানো হয়। বিভিন্ন স্টেশনে ভাঙচুর করা হয়। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়ে ট্রেনে পাথর ছোড়া হয়। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাসনাবাদ, লালগোলা-কৃষ্ণনগর শাখায় ট্রেন চলেনি। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তি হয় সাধারণ মানুষের। দুদিন ধরে যেভাবে স্টেশনে স্টেশনে তা-ব চলেছে, তার জেরে এ দিনও ট্রেন চালাতে সমস্যায় পড়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল। রেল সূত্রে খবর, রোববারও লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেন চালানো যায়নি। কিছু ট্রেন পরিস্থিতি অনুযায়ী স্বল্প দূরত্বে চালানো হচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের বিভিন্ন জায়গায় লোকাল ট্রেন চললেও তা অন্যান্য রোববারের মতো চলছে না।

নাগরিকত্বের প্রমাণ ভোটার কার্ড বা পাসপোর্ট : আদালত

এদিকে, সারা দেশ যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে তোলপাড়, ঠিক তখনই নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ভোটার কার্ড আর পাসপোর্টকে মান্যতা দিয়েছে মুম্বাইয়ের একটি নি¤œ আদালত। জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে মহম্মদ মোল্লা (৫৭) ও সইফুল (২৩) নামে দুজনকে গ্রেফতার করে মুম্বাই পুলিশ। সম্পর্কে বাবা-ছেলে মোল্লা ও সইফুলকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে আদালতে অভিযোগ করে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, ওই দুজন বাংলাদেশি ভাষাতে কথা বলেন এবং তারা এমন কোনো নথি দেখাতে পারেননি, যাতে প্রমাণিত হয় তারা ভারতীয়। কিন্তু আদালতে দুজনেই ভারতীয় পাসপোর্ট ও ভোটার আইডি কার্ড জমা দেন। এরপরই আদালত জানান, পাসপোর্ট থাকাই যথেষ্ট সইফুলের নাগরিকত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে। একইভাবে ভোটদানের ক্ষমতা প্রদান করে ভোটার আইডি কার্ডও দেশের নাগরিক হিসেবে প্রমাণের যথেষ্ট নথি হিসেবে গ্রাহ্য। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট করে দিয়েছেন কোর্ট, তা হলো রেশন কার্ড, আধার কার্ড বা অন্যান্য পরিচয়পত্র নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য নয়।

ওদিকে আবার, দেশের বিভিন্ন অংশে নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় চরম বিক্ষোভের জন্য বিরোধীদের দিকে আঙুল তুললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার অভিযোগ, কংগ্রেস ও তার শরিক দলগুলোই আইন নিয়ে বিভিন্ন রাজ্যে ধুন্ধুমার বাঁধিয়েছে। আসামবাসী হিংসা থেকে সরে এসেছে বলে দাবি করে এ দিন তাদের অভিনন্দনও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। ঝাড়খ-ের দুমকার নির্বাচনী সভায় তিনি বলেছেন, আসামের ভাই ও বোনদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। তারা হিংসায় অংশ নেওয়া থেকে সরে এসেছেন। তারা শান্তিপূর্ণ পথে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরছেন।

এরপরই কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দেগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, কংগ্রেস ও তার সমর্থকরা আগুন ছড়াচ্ছে। কিন্তু উত্তর-পূর্বের মানুষ হিংসা পরিত্যাগ করেছেন। কংগ্রেসের পদক্ষেপ বুঝিয়ে দিচ্ছে যে সংসদে যে সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে তা একেবারে সঠিক। বিরোধী দলগুলো মানুষের কষ্ট না-বুঝে শুধু নিজেদের ইমারত গড়ে তুলেছেন বলেও কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। দেশে বিজেপিশাসিত সরকারের সাফল্যের তালিকা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের জন্য একটি মাত্র দল যে উন্নয়ন এনেছে তা কার্যকর করতেই তিনি এখানে এসেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close