ভারতের শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্য প্রবর্তনের শতবর্ষপূর্তি উদ্যাপন উপলক্ষে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়েছে। বাংলাদেশ মণিপইর আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় তিলকপুর দয়াময় সিংহ উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. আতিউর রহমান।

আলোচনা সভায় মণিপুরি আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সমরজিত সিংহর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ। সম্মানিত অতিথি ছিলেন জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. গোলাম শফিউদ্দিন এনডিসি, বিশ্বভারতি বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রসংগীত, মণিপুরি নৃত্য ও নাটক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ওয়াই হেমন্তকুমার, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের মণিপুরি নৃত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. শ্রুতি বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রাক্তন অধ্যাপক মণিপুরি নৃত্যগুরু কলাবতী দেবী, নৃত্যসংগঠক ও নৃত্যগবেষক লুবনা মারিয়াম, চিত্রশিল্পী নারগিস পারভিন সোমা ও রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রানা কুমার সিনহাসহ অনুষ্ঠানে ভারত ও বাংলাদেশের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কণ্ঠশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, লেখক, গবেষকসহ নানা পেশার অতিথি উপস্থিত ছিলেন। প্রতিদিনই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মণিপুরি নৃত্য নিয়ে মুক্ত আলোচনা ও মণিপুরি নৃত্যবিষয়ক সেমিনার ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকছে। আজ শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও এরপর পুরস্কার বিতরণীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে দুদিনের এই আয়োজন।

উল্লেখ্য, আজ থেকে শতবর্ষ আগে নভেম্বর ১৯১৯ ইং বাংলা ১৩২৬ সালের কার্তিক মাসের মাঝামাঝি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বেড়াতে এসেছিলেন সিলেটে। ৫ নভেম্বর সকালে ট্রেন সিলেট স্টেশনে পৌঁছালে কবিগুরুকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয়। সিলেটের ঐতিহ্যবাহী চাঁদনীঘাটকে পত্র-পুষ্প পতাকা, মঙ্গল ঘট আর লাল শালু দিয়ে সাজানো হয়। কবিগুরুর এই সফরে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল মণিপুরি নৃত্য। এই নৃত্যের অন্তর্নিহিত ভাবসম্পদ, শান্ত সমাহিত ভঙ্গি এবং সাবলীল ছন্দ দেখে তিনি এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্যের কোর্স প্রবর্তন করেন। তার কালজয়ী রচনা চিত্রাঙ্গদা, চ-ালিকা, মায়ার খেলা, নটীর পূজা, শাপমোচন নৃত্যনাট্যে মণিপুরি নৃত্যের স্থান দেন। বলা হয়ে থাকে মণিপুরি নৃত্যকে ম-প প্রাঙ্গণ থেকে বের করে বিশ্বম-লে স্থান করে দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। মূলত শান্তিনিকেতনে প্রবর্তনের মাধ্যমে এই নৃত্যের বিশ্বময় প্রচার ও সৌকর্য সাধিত হয়।

"