গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
স্বীকৃতি চান রণাঙ্গনের যোদ্ধা আবদুর রশিদ
কাঠমিস্ত্রি আবদুর রশিদ। মাতৃভূমি রক্ষায় জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার পর রণাঙ্গনের সহযোদ্ধা শহীদ আবু খাঁর মা টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ায় অভিমানে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নেননি আবদুর রশিদ। কিন্তু জীবন সায়াহ্নে এসে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চান এই রণাঙ্গনের যোদ্ধা।
আবদুর রশিদের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের বাঘবেড় গ্রামে। তার বাবা মৃত হাফিজ উদ্দিন। মা মৃত শহরের নেছা। গ্রামবাসী তাকে বঙ্গবন্ধুপ্রেমী বলেই চেনে। বয়সের ভারে ন্যুয়ে পড়লেও এখনো প্রতি বছর ১৫ আগস্ট একা একা টুঙ্গিপাড়া যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করতে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাঘবেড় গ্রামে আবদুর রশিদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ময়মনসিংহ শহরে আনসারের (সশস্ত্র) প্রশিক্ষণ নিই। ২৫ মার্চ রাতে হানাদার বাহিনী নির্বিচার গণহত্যা শুরুর পরের দিন আমরা আনসাররা ময়মনসিংহে জড়ো হই। পাকবাহিনী ট্রেনযোগে ময়মনসিংহে যাতে না আসতে পারে সে জন্য জেলা আনসার অফিসার মালেক সাহেব আমাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে প্রত্যেককে অস্ত্র ও গুলি দিয়ে কেওয়াটকালী এলাকায় রেলপথে পাহারায় পাঠান। কয়েক দিন পর সেখান থেকে আমরা ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের দিকে রওনা হই। সেখানে যাওয়ার পথে পাকবাহিনীর বিমান হামলায় ছত্রভঙ্গ হয়ে অস্ত্র নিয়ে গৌরীপুর বাড়িতে আসি। এরপর উচাখিলা এলাকার এক সেনা সদস্যের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ে নেত্রকোনার রংরা বর্ডার দিয়ে ভারত প্রবেশ করি।’ কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল হক তারার নেতৃত্বে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, নাজিরপুর, বাইশদার, বড়াইল, নেত্রকোনা বিজয়সহ বিভিন্ন স্থানে বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করেন আবদুর রশিদ।
ভারত প্রবেশের পর ইয়ুথ ক্যাম্পে ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যাপ্টেন চৌহানের দেখা হয়। তার নির্দেশে নাজমুল হক তারার কোম্পানি তুরা ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের দলে যুক্ত হন। বাংলাদেশে প্রবেশ করে নেত্রকোনার ঠাকুরাকোনা বিজ্র ধ্বংস করেন।
‘নাজিরপুর বাজারে একটি কাছারিতে পাঞ্জাবিদের ক্যাম্প আগুন দিয়ে পুড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়। এ সময় কংশ নদীর হয়ে পাঞ্জাবিরা অতর্কিতে আক্রমণ করলে ডা. আজিজ, ফজলুল হক, ইয়ার মাহমুদসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরপর শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে কমান্ডার তারা ভাই মারাত্মকভাবে আহত হন।’
১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ইন্ডিয়ান আর্মি ক্যাপ্টেন চৌহান ও তারা কোম্পানির আবু সিদ্দিক ও খসরু ভাইয়ের নেতৃত্বে ভোররাতে পাকবাহিনীকে লক্ষ্য করে মর্টার শেল নিক্ষেপ করলে মোক্তারপাড়া সেতুসংলগ্ন এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ শুরু হয়। আমি আর আবু খাঁ সেতুর দক্ষিণপাশ থেকে পাকবাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছিলাম। ওই যুদ্ধে আবু খাঁ ও আবদুস সাত্তার শহীদ হন। গুরুতর আহত হন সিদ্দিক ভাই।
নেত্রকোনা সদর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কামান্ডর আইয়ুব আলী বলেন, আমাদের কোম্পানি যখন ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশে আসছিল, তখন ভারতীয় আর্মি ক্যাপ্টেন চৌহান অস্ত্রসহ রশিদ ভাইকে আমাদের দলে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর রশিদ ভাই আমাদের সঙ্গে থেকে নেত্রকোনা অঞ্চলের সবগুলো যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেছেন। আমি সরকারের কাছে দাবি জানাই রশিদ ভাই একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। তাকে যেন দ্রুত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রাষ্ট্রীয় সব সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।
"