পাবনা প্রতিনিধি

  ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯

১২ কোটি টাকায় নির্মিত সড়কে ৬ মাসেই ধস

পাবনার ফরিদপুর উপজেলায় ৬ কিলোমিটার সড়ক কাজ শেষ করার ছয় মাস না যেতেই ধসে গেছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন ঠিকাদার ও প্রকৌশলীদের যোগসাজশে দায়সাড়াভাবে নামমাত্র কাজ করায় কার্পেটিং উঠে যাওয়াসহ সড়কটির সিংহভাগ ধসে গেছে। এদিকে ফরিদপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব অর্থায়নে সড়কটি মেরামত করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে আরটিআইটি-২ প্রকল্পের আওতায় ফরিদপুর উপজেলা প্রশাসনের অধীনে প্রায় ১২ কোটি ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাবনার ফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী পর্যন্ত ৬ হাজার ৩৯০ মিটার (প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার) সড়ক চলতি বছরের জুন মাসে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এদিকে খুলে দেওয়ার ছয় মাস না যেতেই সড়কের ২ কিলোমিটার অংশের কার্পেটিং উঠে যাওয়াসহ বেশিরভাগ জায়গা ধসে গেছে। কার্পেটিংয়ে নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহার ও মাটি সঠিকভাবে কম্প্যাকশন না করায় সড়কের এই বেহাল দশা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাসহ দুই চাকার কিছু যানবাহন চলাচল করলেও ওই সড়কে ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। এছাড়া সড়কের আরো কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। সড়কটি দ্রুত সংস্কার না করা হলে সড়কের এসব অংশ যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ফরিদপুর উপজেলা স্থানীয় প্রকৌশল অধিদফতর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পারফরিদপুর থেকে বিএলবাড়ী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। এই সড়ক নির্মাণ কাজের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকা। রাজশাহীর ঠিকাদার আবদুল আউয়াল এ সড়কের নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পান। সড়কের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের শেষের দিকে। কিন্তু ঠিকাদার আবদুল আওয়াল নিজে কাজ না করে পাবনার ঠিকাদার শাহনেওয়াজ আলীর কাছে কার্যাদেশ বিক্রি করে দেন। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে ঠিকাদার শাহনেওয়াজ ৫০ শতাংশ বিল তুলে নিয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকার পর উপজেলা প্রকৌশল অফিস থেকে ঠিকাদার আবদুল আওয়ালকে কাজ শেষ করার জন্য তাগিদ দেয়া হয়। পরে ঠিকাদার আব্দুল আওয়াল নিজেই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু করেই প্রাক্কলিত ব্যয় বাড়ানোর আবেদন করেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ও উপজেলা অফিসের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা সড়ক নির্মাণে বরাদ্দকৃত ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রাক্কলন রিভাইজ করে নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে ১২ কোটি ৩৬ হাজার ১৬৫ টাকা নির্ধারণ করেন। চলতি বছরের জুন মাসে সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নির্মাণ কাজ চলাকালীন সড়কের বিভিন্ন স্থানে ফাটল ধরে বসে যায়। সে সময় ঠিকাদার তড়িঘড়ি করে বসে যাওয়া স্থানগুলোতে দায়সারাভাবে মেরামত করেন।।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাড়ে ছয় কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক দেওভোগ গ্রামের খালের এক পাশ দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সড়ক নির্মাণে খালের পাশের অংশ বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। তবে বালুর ওপর সামান্য কিছু মাটির আস্তরণ দেওয়া হয়। সড়কের ধসে পড়া ঠেকাতে খালের নিচে থেকে কার্পেটিং পর্যন্ত সিসি ব্লক বিছানো হয়েছে। সঠিকভাবে সিসি ব্লক পিসিং ও জোড়া দেয়া হয়নি। ফলে সিসি ব্লকের জোড়ার স্থান দিয়ে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করে ভেতরের বালু ধুয়ে যাওয়ায় সড়ক ধসে গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণ কাজে অনিয়মের কারণেই সড়কের ধস নেমেছে।

দেওভোগ গ্রামের স্কুলশিক্ষক নুরুজ্জামান বলেন, সড়ক নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই অনিয়ম লক্ষ করা হয়েছে। এ কারণেই এখন সড়কের এই দশা। বিএলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

ফরিদপুর প্রকৌশল অফিসের সড়ক নির্মাণ তদারকির দায়িত্বে নিয়েজিত উপসহকারী প্রকৌশলী ইসলাম আলী বলেন, আগাম বন্যা ও ভারি বৃষ্টির কারণে এ সমস্যা হয়েছে। ঠিকাদারের নিজ দায়িত্বেই এই সড়ক মেরামত করে দিতে হবে।

ফরিদপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. বাকী বিল্লা এ ব্যাপারে বলেন, ‘এই সড়কের দু’পাশে খাল এবং পুকুর রয়েছে। খাল এবং পুকুরে প্রায় ৩০-৪০ ফুট পর্যন্ত গভীরতায় নরম মাটি রয়েছে। গাইডওয়ালের জন্য যে ডিজাইন করা হয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক তা অনুমোদন করেনি। ফলে আগের ডিজাইনে খাল এবং পুকুরে গাইডওয়াল নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানিতে এ সমস্যা হয়েছে। ঠিকাদারকে নিজ খরচে সড়ক মেরামতের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close