দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

ব্যাংক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ

বন্ধকি জমি নিয়ে জামায়াত নেতার প্রতারণার চেষ্টা

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা চত্বরে ইসলামী ব্যাংক বানেশ্বর শাখার শাখা ব্যবস্থাপককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংকের কাছে জমি বন্ধক রেখে ঋণ নেয়। ওই বন্ধকি জমি নিজ নামে জারি করে ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টাও করেন। এতে উপজেলা সহকারী কমিশনার কার্যালয়ে বাধা দিতে আসা ব্যাংক কর্মকর্তা রেজাউল করিমকে লাঞ্ছিত করেন ঋণখেলাপি দুই ভাই। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ঋণখেলাপি নূরুজ্জামান লিটন এবং অপরজন তার মেজো ভাই নূরুল ইসলাম মিলে রেজাউল ইসলাম নামের ওই কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করেন। দুই ভাইয়ের একজন হলেন উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির নূরুজ্জামান লিটন এবং অপরজন তার মেজো ভাই নূরুল ইসলাম। এ ঘটনায় দুর্গাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন ইসলামী ব্যাংক বানেশ্বর শাখার ব্যবস্থাপক রেজাউল করিম। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ব্যাংক কর্মকর্তা রেজাউল করিম দুর্গাপুরে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয় থেকে বের হওয়ামাত্র নূরুজ্জামান লিটন এবং নূরুল ইসলাম তাকে ঘিরে ধরেন। একপর্যায়ে তাকে লাঞ্ছিত করেন দুই ভাই। এ সময় স্থানীয়রা এসে ব্যাংক কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন। পরে রেজাউল করিম থানায় গিয়ে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

রেজাউল করিম জানান, প্রায় ১০ বছর আগে দুর্গাপুরের প্রয়াত ব্যবসায়ী নূরুন নবী ৩৭ শতাংশ জমি বন্ধক রেখে নিগার পটেটো টিস্যু কালচার প্রকল্পের নামে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করেন পুঠিয়ার বানেশ্বরে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক শাখা থেকে। এই ঋণের জামিনদার হলেন তার দুই ভাই নূরুল ইসলাম ও নূরুজ্জামান লিটন। কিন্তু কয়েক বছর আগে নূরুন্নবী মারা যান। এরপর আর ঋণটি তাদের দুই ভাই পরিশোধ না করে ওই সম্পত্তি ভোগ-দখল করে আসছেন। এমনকি তারা গোপনে বন্ধক রাখা ৩৭ শতাংশ জমির মধ্যে ১৭ শতাংশ জমি নিজেদের নামে নামজারি করার চেষ্টা করছেন। এখানেও নূরুন্নবীর এক ছেলেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তবে ব্যাংকের কাছে ওই সম্পত্তিটি বন্ধক আছে, কাজেই নামজারির করার চেষ্টার বিষয়টি জানতে পাওয়ার পর ব্যাংক থেকে তাতে আপত্তি জানানো হয়। ওই আপত্তির শুনানি ছিল গত বৃহস্পতিবার দুপুরে। দুর্গাপুর সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে আপত্তি শুনানি শেষে তিনি বের হওয়ামাত্রই তাকে লাঞ্ছিত করেন নূরুল ইসলাম ও নূরুজ্জামান লিটন।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ভাইয়ের নামে ঋণ হলেও তিনি মারা যাওয়ার কারণে এখন জামিনদার হিসেবে এবং সম্পত্তির মালিক হিসেবে দুই ভাই ঋণখেলাপি। কিন্তু সেই ঋণ পরিশোধ না করে তারা দুই ভাই নানা টালবাহানা করছেন। এরই মধ্যে ব্যাংকে বন্ধক রাখা সম্পত্তিও আত্মসাৎ করতে তারা গোপনে ওই জমির কিছু অংশ নামজারি করার চেষ্টা করছেন। এটি তারা আইনগতভাবে করতে পারেন না।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে যোগযোগ করা হলে নূরুল ইসলাম বলেন, আমরা উপজেলায় ভূমি অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তা রেজাউল করিমের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে বিষয়টি জানতে নূরুজ্জামানের ফোন কল করা হলে, তিনি বলেন ওই ব্যাংকে আমাদের নিজ নামে কোনো ঋণ নেই। আমরা ঋণখেলাপি নই। ওই ব্যাংকে ঋণ করা আছে আমার ভাতিজি মেরিনার নামে সে মারা গেছে। ওই ঋণের দায় আমাদের নয়। এ সময় তিনি আরো বলেন, আমাদের দুই ভাইয়ের দলিলি সম্পত্তি খারিজ করে নিজ নামে নাম জারি করেছি। এতে ব্যাংক বাধা দিতে পারে না। ২০০১ সালে দুই ভাইয়ের নামে দলিল হয়। যার দলিল নং ১৩৫২১। ভুলবশত ওই দলিলি সম্পত্তি ভাতিজি মেরিনার ব্যাংক ঋণের বন্ধকিতে চলে যায়।

এ বিষয়ে দুর্গাপুর থানার ওসি খুরশিদা বানু কনা বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিতের অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close