নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষ, নিহত ১

আহত ১০, নিখোঁজ ১৫

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদীতে দুটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া আরো ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে গত শুক্রবার গভীর রাতে ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনা তদন্তে গতকাল শনিবার পর্যন্ত কোনো কমিটি গঠন করেনি নৌপরিবহন অধিদফতর। তবে আজ রোববার তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে আভাস মিলেছে। দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চ দুটি জব্দ করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

গত শুক্রবার রাত ১টার দিকে নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের সীমান্ত এলাকা সোনারগাঁ উপজেলার চরকিশোরগঞ্জে যাত্রীবোঝাই দুটি লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চ দুটি হলো ঢাকা থেকে চাঁদপুরগামী এমভি বোগদাদীয়া-১৩ ও শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী এমভি মানিক-৪। মেসার্স ঢাকা রিভার ট্রান্সপোর্টের অধীনে চলাচলকারী বোগদাদীয়া-১৩ লঞ্চের মালিক দুজন। তারা হলেন ফয়েজ আহমেদ ও শফিকুল্লাহ মামুন। অন্য লঞ্চটি এমভি মানিক-৪ চলাচল করে মেসার্স ভুঁইয়া রিভার ট্রান্সপোর্টের অধীনে; যার মালিক সিদ্দিকুর রহমান ভুঁইয়া। দুর্ঘটনায় একজন নিহত ও অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন; যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। এছাড়া আরো ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন এই দুর্র্ঘটনায়।

নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার কলাগাছিয়া নৌ-ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. মোস্তাফিজার রহমান দুর্ঘটনা ও হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ঠিক কতজন আহত ও নিখোঁজ হয়েছেন তা নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। নিহত মো. হুমায়ুন কবির (৩৫) শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার রামভদ্রাপুর এলাকার প্রয়াত আবদুল হাইয়ের ছেলে। গুরুতর আহত তিনজন হলেন রোজিনা বেগম (৩০), সোনা মিয়া (৪৬) ও মো. রুহুল আমিন। নিখোঁজদের নাম জানা যায়নি।

ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এমভি বোগদাদীয়া-১৩ শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ঢাকার সদরঘাটের লালকুঠিঘাট থেকে চাঁদপুরের চরভৈরবীর উদ্দেশে ছেড়ে গিয়েছিল। অন্যদিকে একই রাতে শরীয়তপুরের ওয়াপদা ঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে এমভি মানিক-৪। দুটি লঞ্চই যাত্রীবোঝাই ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশ পরিদর্শক আরো বলেন, এ ঘটনায় মানিক-৪ লঞ্চের ১০ থেকে ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন বলে তিনি শুনেছেন। সকাল থেকে নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড, বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় আহত ৯ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে সাতজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।

এছাড়া রোজিনা বেগম ও সোনা মিয়া নামের দুজনকে জাতীয় অর্থোপেডিক ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) পাঠানো হয়েছে। রোজিনার দুই পায়ে মারাত্মক জখম হয়েছে এবং সোনা মিয়ার দেহ থেকে দুই পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলে পুলিশ কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া জানান।

নৌপরিবহন অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) মো. মনজুরুল কবিরের কাছে দুর্ঘটনা ও পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামীকাল প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়ার পর মহাপরিচালক তদন্ত কমিটি গঠন করবেন। অধিদফতরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার (সিএনএস) ক্যাপ্টেন জসিমউদ্দিন সরকারও অভিন্ন কথা বলেন। তিনি বলেন, অধিদফতরের ঢাকা নদীবন্দরের পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমানকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও খোঁজখবর নিয়ে আগামীকালের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তার প্রতিবেদন পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।

দুর্ঘটনার পর নৌ অধিদফতরের মহাপরিচালক কিংবা উচ্চপদস্থ অন্য কেউ আজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করায় এবং একদিন পর তদন্ত কমিটি গঠনের কথা শুনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে পরিবেশ ও নাগরিক অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক বেসরকারি সংগঠন। গ্রিন ক্লাব অব বাংলাদেশের (জিসিবি) সভাপতি নুরুর রহমান সেলিম বলেন, লঞ্চ দুর্ঘটনায় একজন নিহত, ১০ আহত ও ১৫ জন নিখোঁজের খবর শুনেও ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় নৌপরিবহন অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিরা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির (এনসিপিএসআরআর) সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া বলেন, দুর্ঘটনার পর তদন্ত কমিটি গঠনে গড়িমসি রহস্যজনক। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নৌ প্রতিমন্ত্রী ও নৌ সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শহীদ মিয়া।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close