কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

  ০৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

কুষ্টিয়ায় প্লাইউড কারখানায় অগ্নিকাণ্ড

ঘটনার দুই সপ্তাহ পরও কারণ অজানা

অগ্নিদগ্ধ চার কারখানা শ্রমিকের মৃত্যুর পরে নড়েচড়ে বসেছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলা প্রশাসনের এক সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনার দুই সপ্তাহ পার হলেও গতকাল শনিবার পর্যন্ত এই অগ্নিকা-ের কারণ জানাতে পারেননি। এ তদন্তের দায়িত্ব আছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লুৎফুন নাহার। তবে ফায়ার সার্ভিস, কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর এই দুর্ঘটনার কারণ জানার চেষ্টা করছে বলে জানা গেছে।

এই তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গত ২৭ নভেম্বর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ঘটনার পাঁচ দিন পর সেখানে আপাতদৃষ্টে বোঝার কোনো উপায় নেই ওই ঘটনা সম্পর্কে। পরে কারখানায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে বোঝার চেষ্টা করি।

সিসি ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনাস্থলেই টয়লেট আছে, সেখানে শ্রমিকরা খাওয়া দাওয়াও সারেন, খুব স্বাভাবিক যে, কোনো শ্রমিক হয়তো খাওয়ার পর বিড়ি/সিগারেটের আগুন ফেলে থাকতে পারে। এতে সেখানে প্যারাফিনাল কেমিক্যাল ও ভাসমান দাহ্য গ্যাসের সংস্পর্শে ধপ করে আগুন জ্বলে উঠতে পারে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত যে, শর্টসার্কিট থেকে বৈদ্যুতিক তারের আগুনে নয়; বরং আগুন এসে বৈদ্যুতিক তারে ধরেছে। এ ছাড়া কোনো মেশিনের বিস্ফোরণে আগুন লাগলে সেই মেশিনটাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা, তাতে উৎপাদন কন্টিনিউ করার কথা নয়। আগুনের ঘটনাস্থল থেকে বয়লার অনেক দূরে, সেখানে অগ্নিকা-ের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি হয়েছে কি নাÑ এমন প্রশ্নের উত্তরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, বিষয়টি জানার পর ডিসি স্যার আমার ওপরই দায়িত্ব দিয়েছেন। দাফতরিক অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এই বিষয়টি নিয়েও কাজ করতে হচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন শেষ করে জমা দেওয়া হবে।

যদিও প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিক নিহত সাজেদুলের মৃত্যুপূর্ব জবানবন্দির বিবরণ দিয়ে ভাই মাজেদুল বলেন, সিগারেট জ্বালাতে দুই শ্রমিকের ধস্তাধস্তিতে লাইটার থেকে আগুন জ্বলে উঠে। প্রথমে প্লাস্টিকের বস্তায় আগুন লাগে, পরে মেশিনের কম্প্রেসার থেকে গ্যাস মিশ্রিত হাওয়া এসে লাগার সঙ্গে সঙ্গে আগুন বড় আকার ধারণ করে। তখনই একসঙ্গে চারজনের গায়ে আগুন লেগে যায়। এই অবস্থায় তারা প্রাণে বাঁচতে দৌড়াতে শুরু করে।

নিহত শ্রমিক মেহেদী হাসানের বাবা আব্বাস উদ্দিনের অভিযোগ, ‘এত বড় ইলাকাজুড়ে এই কারখানা, রাইত-দিন ধইরি কাজ চলে, অথচ ভিতরে শ্রমিকদের জন্যি একটা নিরাপদ জায়গা রাখিনি, যেকেনে শ্রমিকরা খাওয়া-দাওয়া বা এককাপ চা/বিড়ি খাতি পারে; যেকেনে কাম সেকেনেই, খাওয়া, পেসাব-পায়খানা, সব এক জাগায়। সেদিন যেদি (যদি), ওকেনে সিগারেট জ্বালানির লাইটার নিয়ে চান্নু রায়হানের কাড়াকাড়ি না হইতি তালি (তাহলে) তো এই সব্বনাশটা হইতি না।’

কারখানায় শ্রমিকদের অনিরাপদ কর্মপরিবেশের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মাহবুব জোয়ার্দার তুহিন। কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানান, উডল্যান্ডের অগ্নিকা-ে শ্রমিক নিহতের ঘটনায় কেউ কোনো অভিযোগ নিয়ে আসেনি। কেউ অভিযোগ করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নিব। তবে এ ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষ ঘটনার দিনেই থানায় একটা জিডি করেছেন।

কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ওই কারখানায় শ্রমিকদের অনিরাপদ কর্ম পরিবেশ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে মালিকের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকের পরিবারগুলো যাতে পুনর্বাসিত হন সে বিষয়ে উদ্যোগ নেবে জেলা প্রশাসন।

উল্লেখ্য, গত ২২ নভেম্বর রাত সোয়া ৩টায় কুষ্টিয়ায় উডল্যান্ড নামক প্লাইউড কারখানায় অগ্নিকা-ে দগ্ধ চার শ্রমিক ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসারত একে একে সাত দিনের মধ্যে সবাই মৃত্যুবরণ করেন। নিহতরা হলেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল গ্রামের খবির উদ্দিনের ছেলে রায়হান (২৪), জুগিয়া বারখাদা গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে সাজেদুল (২২), অমল কুমার দাসের ছেলে চান্নু কুমার (১৭) এবং আব্বাস উদ্দিনের ছেলে মেহিদী হাসান (১৮)।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close