বগুড়া প্রতিনিধি

  ১৯ নভেম্বর, ২০১৯

বগুড়ায় নবান্নে মাছের মেলা

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে বগুড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় বসেছিল মাছের মেলা। মেলাগুলোতে মাছ কেনাবেচা হয়েছে অনেক। শিবগঞ্জের মহাস্থান ও উথলি, নন্দীগ্রামের রণবাঘা ও ওমরপুর বাজারে মাছের মেলায় এসেছিল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পঞ্জিকা অনুসারে গতকাল সোমবার ছিল ১ অগ্রহায়ণ। দিনটি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নবান্ন উৎসব হিসেবে উদ্?যাপন করেন। প্রতি বছর এ উৎসবকে ঘিরে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার উথলী গ্রামের বটতলায় মাছের মেলা বসে। আর উথলি, রথবাড়ি, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, গরীবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, বাকশন, রহবলসহ ১০ থেকে ১২টি গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে উৎসবের আয়োজন হয়। প্রতি বাড়িতেই মেয়ে-জামাইসহ স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়। নবান্নে মেলা থেকে কেনা বড় মাছ ও নতুন সবজি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয় অতিথি-স্বজনদের। বগুড়ার মোকামতলা-জয়পুরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই ইট বিছানো একটি পথ। মোড়ে দাঁড়াতেই বেশ দূর থেকে মাইকের শব্দ কানে ভেসে আসে। শুনতে পাওয়া যায় মাছ বিক্রির ডাক, ‘মাছ নেবেন মাছ। বড় বড় মাছ। জয়পুরহাটের নান্দাইল দিঘির মাছ। খুব স্বাদের মাছ।’ ইট বিছানো পথ ধরে এগিয়ে যেতেই গ্রামীণ পরিবেশ চোখে পড়ে। কাদা মাড়ানো পথ। একটু দূরেই মানুষের বিপুল

সমাগম। সারি সারি মাছের পসরা সাজানো। মাছের দাম নিয়ে রীতিমতো হইচই। হচ্ছে চুলচেরা দরদাম। ভিড় ঠেলে একটু এগোতেই দেখা গেল, বিশাল আকারের দুটি বাঘাইড় ও দুটি বোয়াল মাছ নিয়ে বসে আছেন এক বিক্রেতা। নাম মান্নান মিয়া। গাইবান্ধার বালাসীঘাট এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, বড় বড় কিছু মাছ নিয়ে এসেছিলাম। প্রতিটি কাতলের ওজন হবে ১৩ থেকে ১৪ কেজি, দাম কেজিপ্রতি হাজার টাকা। প্রতিটি রুই মাছের ওজন ১০ থেকে ১৫ কেজির মতো। ৯০০ টাকা কেজি।

মেলায় নিজেদের মাছের ডালি নিয়ে এসেছেন অনেক বিক্রেতা। থরে থরে সাজানো রুই, কাতলা, মৃগেল, বিগ হেড কার্প, গ্রাস কার্প, কমন কার্প ও ব্ল্যাক কার্প মাছ। ব্যাপক উৎসাহে মাছ কিনছেন ক্রেতারা। মজার বিষয় হচ্ছে যত দাম দিয়েই বেচাকেনা হোক না কেন সবার মুখেই যেন বিজয়ের হাসি।

বিশাল আকৃতির একটি নদীর পাঙ্গাশ মাছ মাথায় তুলে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করছেন বগুড়ার গাবতলী উপজেলার কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামের রতন চন্দ্র মহন্ত। তিনি জানান, পাঙ্গাশ মাছের ওজন ১৩ কেজি। ১০ হাজার টাকা দাম। এটি ছাড়াও নানা জাতের ৩০০ কেজি মাছ বিক্রির জন্য নিয়ে বসেছেন তিনি। মাছ বিক্রেতা শিবগঞ্জ উপজেলার সাতআনা চাকলমা গ্রামের শিহাব মিয়া বলেন, শতাধিক ব্যক্তি মাছ বিক্রির জন্য পসরা সাজিয়েছেন উথলিতে।

রফিক ও সেলিম, উথলি গ্রামের জামাই। তারা মেলায় এসে ১২ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ সাড়ে ১০ হাজার টাকায় কিনেছেন। শ্বশুরবাড়ির জন্য। অতিথি আপ্যায়নের জন্য মাছ কিনতে মেলায় এসেছেন দুই বন্ধু মঙ্গল কুমার ও আপেল মাহমুদ। জানালেন, শিবগঞ্জ উপজেলার আমতলীতে তাদের বাড়ি, অনেক দিন ধরে এখানে নবান্ন উৎসব উপলক্ষে মেলা বসে। এক দিনের এই মেলায় নিত্যনতুন জিনিস পাওয়া যায়। প্রধান আকর্ষণ মাছ। দূরদূরান্ত থেকে মাছ কেনার জন্য ক্রেতারা ভিড় জমান। এই নবান্ন উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা বাড়ির আশপাশের পুকুরে সারা বছর ধরেই মাছ চাষ করেন। পুকুরের বড় বড় মাছ মেলায় বিক্রি করতে আনেন। ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতাকে চিন্তা করে মাছের দাম ঠিক করেন তারা। আর এলাকাবাসী তো আত্মীয় তাদের কাছে এমনিতে দাম কম রাখেন বিক্রেতারা।

এছাড়া মেলায় উঠেছে নতুন লাল আলু ও সাদা আলু। লাল আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা করে, সাদা আলু ১২০ টাকা করে।

এদিকে ঐতিহাসিক মহাস্থান হাটবাজারেও বসেছে মাছের মেলা। দুলাল নামের এক মাছ ব্যবসায়ী ১৫ কেজি ওজনের ব্ল্যাক কাপ মাছের দাম চাইলেন প্রতি কেজি ৮৫০ টাকা। দেড় থেকে ৩ কেজি ওজনের কাতলা মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, রুই মাছ আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৪৫০, ব্রিগেড মাছ আকার ভেদে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলার রণবাঘা ও ওমরপুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি মাছের দোকান। সেখানে থরে থরে সাজানো রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, সিলভার কার্প, বিগহেড, বাঘা আইড়, বোয়ালসহ হরেক রকমের মাছ। এক কেজি থেকে শুরু করে ১৪ কেজি ওজনের মাছ আছে। লোকজনও ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে কিনছেন এসব মাছ। কোনো কোনো মাছ বিক্রেতারা বিশালাকৃতির মাছগুলো মাথার ওপর তুলে ধরে ক্রেতাদের আকর্ষণের চেষ্টা করছে।

উপজেলার নামুইট গ্রামের মাছ বিক্রেতা ছমির উদ্দিন বলেন, নবান্ন উৎসবকে ঘিরে অনেকে বাড়ির আশপাশের পুকুরে মাছ চাষ করে। বড় বড় মাছ নবান্ন বাজারে বিক্রি করতে আনেন। তারা ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতাকে চিন্তা করে মাছের দাম কম রাখেন।

মাছ বিক্রেতা আবদুর রাজ্জাক হাওলাদার বলেন, মাছের আকার ভেদে একেকটি মাছ ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিগ্রেড ও সিলভার কার্প। রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৬০০ টাকা, চিতল ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা ও বোয়াল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

নতুন চালের ভাতের সঙ্গে মাছের তরকারি খাওয়ার রেওয়াজ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। মেয়ে-জামাই ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে নিয়ে এসে বাহারি পিঠা-পায়েসসহ নানা রকমের সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। এ উৎসবকে ঘিরেই প্রতি বছর মাছের মেলা বসে বিভিন্ন বাজারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close