নওগাঁ প্রতিনিধি

  ১৫ নভেম্বর, ২০১৯

নওগাঁয় মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে সাবকবলা দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। প্রসাদপুরের সাব-রেজিস্ট্রার ও এক দলিল লেখক এ কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় দলিল লেখককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সাব-রেজিস্ট্রার ওই অফিসে দুই বছর আছে যোগদানের পর থেকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া তিনি মহাদেবপুর উপজেলার অতিরিক্ত সাব-রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে রয়েছেন।

জানা গেছে, প্রসাদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিলের আসল দাতাকে বাদ দিয়ে নকল ব্যক্তিকে দাতাকে সাজিয়ে গত ১৯-৬-১৯ইং তারিখে দানপত্র হিসেবে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। যার দলিল নম্বর ৪৪০৩। প্রকৃত জমির দাতা কছিম উদ্দিন হওয়ার কথা থাকলেও অন্য এক ব্যক্তিকে দাতা সাজানো হয়। জমি রেজিস্ট্রির পর ওই ভুয়া ব্যক্তির ছবি দলিল থেকে সরিয়ে প্রকৃত দাতা কছিম উদ্দিনের ছবি লাগানো হয়। কিন্তু দাতা কছিম উদ্দিন গত ৬-৬-১৯ইং তারিখে মারা গেছেন। বাড়ি উপজেলার ভালাইন ইউনিয়নের মদকচক গ্রামে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে ২৬-৬-১৯ইং তারিখে তাকে মৃত দেখানো হয়। কছিম উদ্দিন আগে মারা গেলেও ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে নকল ব্যক্তিকে দাতা সাজিয়ে পরে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। জমি রেজিস্ট্রির কয়েকদিন পর মৃত দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মৃত সনদ নেওয়া হয়।

মৃত কছিম উদ্দিনের চার ছেলে সাইফুদ্দিন, শরিফুল, আশরাফুল ও আলমগীর তাদের চার বোনদের বঞ্চিত করতে মৃত বাবাকে জীবিত দেখিয়ে ভুয়া ব্যক্তিকে বাবা সাজিয়ে সাব-রেজিস্ট্রার শংকর চন্দ্র বর্মণ ও দলিল লেখক হামিদুর রহমানের যোগসাজশে জমি রেজিস্ট্রি করেছেন। জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর ওই নকল দাতার ছবি সরিয়ে আসল দাতার (কছিম উদ্দিন) ছবি দলিলে সংযুক্ত করা হয়। এ ঘটনায় দলিল লেখকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জমি রেজিস্ট্রির কয়েক দিন পর বিষয়টি প্রকাশ পায়।

গ্রহীতাদের একজন আশরাফুল বলেন, বাবা মারা যাওয়ার আগে সব কাগজপত্র ঠিক করা ছিল। হঠাৎ করেই বাবা মারা যান। মারা যাওয়ার কয়েক দিন পর দলিল লেখকের মাধ্যমে ৪ একর ৩৬ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করা হয়। মূলত চার বোনকে বঞ্চিত করতেই এটা করা হয়েছিল। এরপর বোনেরা বিষয়টি জানতে পেরে আমাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু করে। পরে স্থানীয়ভাবে বসে আমরা বিষয়টি আপস করে নিই।

দলিল লেখক হামিদুর রহমান বলেন, কাগজপত্র দেখেই জমির দলিল করে দিয়েছি। যে ব্যক্তি মারা গেছেন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তার সনদপত্র আমার কাছে আছে। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

মান্দা প্রসাদপুর দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এরশাদ আলী বলেন, দলিল লেখক হামিদুর রহমান বেশকিছু দিন থেকে অফিসে আসতেছেন না। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে কিছু অভিযোগ শুনতে পাচ্ছি, যে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত দেখিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। তবে কোনো পক্ষই আমার কাছে অভিযোগ করেনি। আরো জানা গেছে, উপজেলার কুশুম্বা ইউনিয়নে শামুকখোল মৌজায় সরকারি সম্পতি (ক-তফসিল অর্পিত) ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সাব-রেজিস্ট্রার শংকর কুমারের যোগসাজশে দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। ওই মৌজায় গত ৫/৩/১৮ ইং তারিখে ২৪২১ নম্বর দলিলে এবং আরএস-১২৮ নম্বর খতিয়ান যার দাগ নম্বর হাল- ৪৯২ ও সাবেক- ২৭০ এর ১৬ শতাংশ কাতে সাড়ে ৩ শতাংশ জমি বুদ্ধেশ্বরের তিন ছেলে সমর, অমল ও শ্যামলকে দাতা সাজিয়ে জগমোহনের ছেলে সঞ্জিত কুমারকে রেজিস্ট্রি করে দিতে সহযোগিতা করা হয়। এছাড়া ৪৯২ নম্বর দলিলে গত ১৪/০১/১৮ ইং তারিখে একই খতিয়ানের ১৬ শতাংশ কাতে ৭ শতাংশ জমি গোড়ার ছেলে আনন্দ কুমারকে দাতা সাজিয়ে নওফেলের ছেলে রফিকুল ইসলাম রেজিস্ট্রি করে নেন। এস এ খতিয়ান মূলে গেজেট হওয়ায় কেস নম্বর ৪/৮৩ সালে ভিপি সম্পত্তি হিসেবে মান্দা সহকারী ভূমি কমিশনারের কার্যালয় থেকে ডিসিআর মূলে সরকারকে রাজস্ব প্রদান সাপেক্ষে শামুকখোল গ্রামের ভূমিহীন আবদুল জব্বার ও তার দুই ছেলেকে বিধি মোতাবেক ৯ শতাংশ জমি লিজ দেওয়া হয়েছে। ভূমিহীন আবদুল জব্বার বলেন, একই কাগজের ৯ শতাংশ জমি আমি সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে গত ১০ থেকে ১২ বছর থেকে বসবাস করে আসছি। আবার ওই কাগজের বাকি জমি আরো দুই ব্যক্তি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন। জমির প্রকৃত মালিক ভারতে থাকেন। তাদের কোনো আত্মীয়স্বজন এখানে থাকেন না। গ্রহীতা সঞ্জিত কুমার বলেন, জমির প্রকৃত মালিক ধরনি মোহন দাস। তার ভাগ্নেদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি। তবে ভূমি উন্নয়ন করের রশিদের বিষয়ে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।

মান্দা প্রসাদপুর সাব-রেজিস্ট্রার শংকর চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close