নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাবি প্রতিনিধি

  ১৫ নভেম্বর, ২০১৯

এবার ৩ দফায় অনড় বুয়েট শিক্ষার্থীরা

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়ার পরও ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গত এক মাস ধরে তারা এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা জানান, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চার্জশিটভুক্ত আসামিদের স্থায়ী বহিষ্কারসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস- পরীক্ষায় অংশ নেবেন না তারা। গতকাল বুয়েটের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন আন্দোলনরত বুয়েট শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ বুয়েট ছাত্রকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আন্দোলনকারীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অনিরুদ্ধ গাঙ্গুলি। এতে তিন দফা দাবি তুলে ধরেন তিনি। দাবিগুলো মেনে নেওয়ার শর্তে আসন্ন টার্ম পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা জানান তিনি। তাদের দাবিগুলো হলো ১. চার্জশিটের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা। ২. আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলের র‌্যাগের ঘটনায় অভিযুক্তদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া। ৩. সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি এবং র?্যাগের জন্য সুস্পষ্টভাবে বিভিন্ন ধাপে ভাগ করে শাস্তির নীতিমালা করা। নীতিমালাগুলো বুয়েট একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট থেকে অনুমোদন করে অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পরবর্তী ধাপগুলোতে প্রেরণ করা।

অনিরুদ্ধ জানান, গত ২ নভেম্বরের আলোচনায় বুয়েট প্রশাসন পরবর্তী এক সপ্তাহের মধ্যে দুটি দাবি বাস্তবায়ন করার আশ্বাস দেয়। কিন্তু দুই সপ্তাহের মধ্যেও দাবিগুলো বাস্তবায়নে প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ না দেখায় হতাশা ব্যক্ত করেন শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের গাফিলতি রয়েছে বলেও দাবি করেন তারা। বুয়েট প্রশাসনকে হুশিয়ারি দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি দাবিগুলোর প্রতি আন্তরিক না হন এবং প্রতিশ্রুতি পালনে ব্যর্থ হয় তাহলে তারা পরীক্ষায় অংশ নেবে না। চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়ায় এবং মামলাটি দ্রুত বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পরিচালনার ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ‘ইতিবাচক’ মনোভাব পোষণ করায় পুলিশ প্রশাসন ও আইনমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

গত ৬ অক্টোবর রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গত ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্তে নেমে এজাহারের ১৬ জনসহ মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। যাদের সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। আবরার ফাহাদ নিহত হওয়ার পর আন্দোলনে নেমে ১০ দফা দাবি তোলেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা। তাদের সেই দাবির সঙ্গে বুয়েট শিক্ষক সমিতি ও সাবেক শিক্ষার্থীরাও সমর্থন দেন। দাবির মুখে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, আবরার হত্যার আসামিদের সাময়িক বহিষ্কার এবং হলগুলোতে নির্যাতন বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আন্দোলন শিথিল করে ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ দিয়ে মাঠের আন্দোলনে ইতি টানলেও হত্যাকারীদের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। গত ১৯ অক্টোবর থেকে বুয়েটের টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা শুরুর কথা থাকলেও আন্দোলনের কারণে তা এখনো শুরু হয়নি। পরীক্ষা শুরুর জন্য বুয়েট কর্তৃপক্ষ নিজেদের তদন্ত এবং পুলিশের অভিযোগপত্রের জন্য অপেক্ষার কথা জানিয়েছিল। এদিকে গত বুধবার আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ বুয়েট ছাত্রকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে ডিবি পুলিশ। চার্জশিটে ৬০ জনকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। মামলা সংশ্লিষ্ট ২১টি আলামতও আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। এই মামলার আসামি সবাই বুয়েট ছাত্র। আর সাক্ষী সবাই বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী। ডিবি জানিয়েছে, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার তদন্তে ২৫ জন বুয়েট ছাত্রের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। তাদের সবাইকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে। এদের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এর বাইরে তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আরো ছয়জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এজাহারভুক্তদের মধ্যে ১৬ জন এবং এর বাইরে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পলাতক রয়েছে চারজন। এর মধ্যে তিনজন এজাহারভুক্ত ও একজন এজাহার বহির্ভূত। আবরারকে পোটানোয় সরাসরি অংশ নেয় ১১ জন। বাকি ১৪ জন হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত ছিল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close