নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

ক্যাসিনো-কাণ্ড

সম্রাটের ‘সেকেন্ড হোমের’ খোঁজে বিএফআইইউ

যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ যাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, তারা অর্থ পাচার করেছেন কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে যেসব বাংলাদেশির নাম রয়েছে তাদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহের জন্য দেশটিতে একাধিকবার ঘুরে এসেছেন। বিএফআইইউ জানতে পেরেছে, ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকে মালয়েশিয়া ছাড়াও থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের পাশাপাশি সম্পদ গড়ে তুলেছেন।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান কর্মকর্তা আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, সেকেন্ড হোমের সুবিধা কারা নিয়েছে, এ ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিয়েছি। এখনো খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের বাইরে অর্থ পাচার বা সেকেন্ড হোম নিয়ে বিএফআইইউ নিজেদের মতো করে কাজ করছে। তার মতে, সরকার চাইলে দেশের বাইরে কী পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, অথবা কারা অর্থ পাচার করেছে, সেই তথ্য আমরা আনতে পারব।

রাজী হাসান বলেন, কার কোথায় কী আছে, এখন সবই জানা যায়। মানুষের যাতায়াত এখন সারা পৃথিবীতেই। কাজেই কে কী পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে গেছেন তা পুরোপুরি জানা না গেলেও সেকেন্ড হোম সুবিধা নেওয়াদের খবর সহজেই পাওয়া যায়।

সূত্র বলছে, মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিনিয়োগ করা বাংলাদেশিদের অর্থের উৎস জানার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের কর্মকর্তারা। এর মধ্যে যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটসহ বেশ কয়েকজনের তথ্য পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ার আমপাং তেয়ারাকুন্ড এলাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। এছাড়া, মমিনুল হক সাঈদ, খালেদ মাহমুদ ভূইয়াসহ অন্তত ৫০ জনের বিদেশে থাকা অর্থের তথ্য সংগ্রহ করেছে বিএফআইইউ। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যও রয়েছেন। বিএফআইইউর কর্মকর্তারা বলেন, সম্প্রতি যাদের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে, তারা অর্থ পাচার করেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে বিএফআইইউ জানতে পেরেছে, ক্যাসিনোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকে মালয়েশিয়া ছাড়াও থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারের পাশাপাশি সম্পদ গড়েছেন।

জানা গেছে, মালয়েশিয়া সরকারের ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী, সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের আমলা, রাজনীতিবিদসহ চার হাজারের বেশি নাগরিক নাম লিখিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকে সপরিবারে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনশোর বেশি বাংলাদেশি সেখানে বাড়ির মালিক হয়েছেন।

মালয়েশিয়ার মিনিস্ট্রি অ্যান্ড ট্যুরিজম আর্টস অ্যান্ড কালচারের ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য (২০১৮ সালের জুন) অনুযায়ী, দেশটিতে সেকেন্ড হোমের সুবিধা নেওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা ৪ হাজার ১৮ জন। সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই সেকেন্ড হোম প্রজেক্টে দেশ থেকে শুধু হুন্ডির মাধ্যমে নগদ টাকা পাচার হয়েছে ৪ হাজার ২১৯ কোটি টাকার মতো। অবশ্য সেকেন্ড হোমের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে প্রকৃত বাংলাদেশির সংখ্যা ১২ থেকে ১৪ হাজারের মতো। তারা বলেন, বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার করে অনেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন সেখানকার কৃষি খাতসহ বিভিন্ন খাতে। মালয়েশিয়াতে কয়েক হাজার বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টের ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। ওই দেশে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের পাঁচতারকা হোটেল ব্যবসা, গার্মেন্ট কারখানা, ওষুধ শিল্পসহ নানা খাতে বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে। অনেকে রাজধানী কুয়ালালামপুরসহ বড় বড় শপিংমলে দোকানও কিনেছেন। অনেকে স্বর্ণ, খেলনা, তৈরি পোশাকের ব্যবসা করছেন।

এদিকে, অবৈধভাবে বিদেশে অর্থ পাচার করে যারা সেকেন্ড হোমের মালিক হয়েছেন তাদের ধরতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের পাশাপাশি এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের কর্মকর্তারা গত কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন। সেকেন্ড হোম সুবিধাভোগীদের ধরতে কাজ করছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)।

এ প্রসঙ্গে বিএফআইইউ প্রধান কর্মকর্তা আবু হেনা রাজী হাসান বলেন, পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে শুধু বিএফআইইউ নয়, সরকারের আরো কয়েকটি বিভাগের কাজ আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন, এনবিআর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস, আইনশৃঙ্খলা বিভাগের সহযোগিতারও বিষয় আছে।

জানা গেছে, বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের শেষ দিকে বিদেশে পাড়ি জমানোর জন্য সেকেন্ড হোম প্রকল্পে নতুন করে আবেদন করেছিলেন ৬৪৮ ব্যক্তি। মালয়েশিয়ার সরকার ২০০২ সালে বিশেষ কর্মসূচির আওতায় ‘সেকেন্ড হোম’ প্রকল্প শুরু করে। ২০০৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৬৯১ জন ওই সুবিধা নিয়েছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close