নুর আলম, চিরিরবন্দর (দিনাজপুর)

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

হাতুড়ের অপচিকিৎসায় কলেজছাত্রী হাসপাতালে

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ভারত সীমান্তঘেঁষা পার্বতীপুর উপজেলার আমবাড়ি হাটে হাতুড়ি ডাক্তারের অপচিকিৎসায় প্রায় একমাস ধরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ কলেজছাত্রী রুকসানার জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকার। সামনেই তার এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা তার জন্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

চিরিরবন্দরে পার্শ্ববর্তী পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপতাল সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রুকসান পারভীন (১৭) নামের এক কলেজছাত্রী মাথাব্যথার রোগ নিয়ে যায় আমবাড়ি হাটের পল্লী চিকিৎসক আবদুল কাইয়ুমের চেম্বারে। আবদুল কাইয়ুম ওই ছাত্রীর শরীরে কয়েকটি ইনজেকশন পুশ করেন। উচ্চ শক্তিসম্পন্ন গ্যাসের ক্যাপসুলসহ ১২-১৩ ধরনের ট্যাবলেট দেয়া হয় ওই রোগীকে। এসব ওষুধ সেবন করে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। এরপর কাইয়ুমের কাছে এলে তাকে দেয়া হয় আরো ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল। এসব সেবন করে ওই ছাত্রী জ্ঞান হারিয়ে পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। আশঙ্কজনক অবস্থায় তাকে প্রথমে দিনাজপুর আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (দিমেক) এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ভুল চিকিৎসা ও মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনের শিকার ওই ছাত্রীটি এক মাস ধরে এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মেয়েটি আমবাড়ি মহিলা কলেজের ছাত্রী ও চলতি বছরের এইচএসসি পরিক্ষার্থী। ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়ারী ইউনিয়নের উত্তর শিবপুর গ্রামের মোকছেদ আলীর মেয়ে।

গত মঙ্গলবার মেয়েটির বাবা মোকছেদ আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, তার মেয়েকে ডা. আবদুল কাইয়ুম সামান্য মাথাব্যথার জন্য ৭০০-৮০০ টাকার উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল দেন। শরীরে ইনজেকশনও পুশ করেছেন। বাসায় নিয়ে আসার পর সারা রাত মেয়েটি ঘুমাতে পারেনি। পরের দিন পুনরায় তাকে হাতুড়ে ডাক্তার কাইয়ুমের কাছে নিয়ে গেলে আরো কিছু ওষুধ সেবন করিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। তার এই অপচিকিৎসায় আমার এ পর্যন্ত লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়ে গেছে। মেয়েটি এখনো রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।

এদিকে এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে পার্বতীপুর উপজেলা সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গত মঙ্গলবার তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থলে তদন্তে যান। কমিটির প্রধান ও সদস্যরা হলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার মো. আলম মিয়া, সদস্য হেলথ ইন্সপেক্টর রজব আলী ও আমবাড়ি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোখলেছুর রহমান।

তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. আলম মিয়া পল্লী চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমবাড়িতে এমন আরো ১০-১২ জন হাতুড়ে ডাক্তার সাধারণ মানুষদের অপচিকিৎসা দিয়ে চলেছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি।

পার্বতীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহিল মাফি জানান, অবিলম্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সহায়তায় সব ধরনের হাতুড়ে ডাক্তারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক আবদুল কাইয়ুমের সঙ্গে সরাসরি কথা হলে তিনি তার ভুল স্বীকার করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close