প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১৪ নভেম্বর, ২০১৯

অদম্য মেধাবী

ওদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন কি পূরণ হবে না?

খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায় বারপোতা গ্রামের দিনমজুর মোশারফ হোসেন সরদারের ছেলে ফারুক হুসাইন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দিনমজুর আবদুস সালামের ছেলে অনিক মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু টাকার অভাবে ভর্তি এবং পড়ালেখার খরচ চালানোর ব্যাপারে তাদের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরÑ

খুলনা ব্যুরো : খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) ভর্তির মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না মেধাবী ছাত্র মো. ফারুক হুসাইন। খুবির ‘খ’ ইউনিটের মেধা তালিকার ৩৬৩তম অবস্থানে আছে মো. ফারুক হুসাইনের নাম। খুলনা জেলার কয়রা উপজেলায় বারপোতা গ্রামের হতদরিদ্র দিনমজুর মোশারফ হোসেন সরদারের ছেলে ফারুক। তার দুই বোনের একজন প্রতিবন্ধী। সুযোগ পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

ফারুক বলেন, এতদিন অনেক কষ্টে খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে এসেছি। গ্রামের বাড়ি এমনকি খুলনা শহরেও দিনমজুরের কাজ করেছি। শিক্ষকরাও আমার পড়ালেখা চালাতে সহযোগিতা করেছেন। এখনো দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে দিনমজুরের কাজ করছি। যা আয় করি তার অধিকাংশ প্রতিবন্ধী বোনের চিকিৎসার পেছনে ব্যয় হয়ে যায়। তিনি আরো জানান, খুবিতে চান্স পেয়ে খুশি হয়েছিলাম; কিন্তু ভর্তির টাকার চিন্তায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ২১ নভেম্বর থেকে ভর্তি শুরু। অর্থের অভাবে ভবিষ্যৎ নষ্ট হওয়াটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না ফারুক।

ফারুকের গ্রামের প্রতিবেশি সরকারি নর্থ খুলনা কলেজের প্রভাষক জি এম সাইফুল ইসলাম বলেন, বসতভিটা ছাড়া ফারুকের আর কিছু নেই। শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সে মেধার পরিচয় দিয়ে এসেছে। সমাজের বিত্তবান মহৎ ব্যক্তি, সরকারি বা বেসরকারি দাতাসংস্থা পাশে দাঁড়ালে ফারুকের স্বপ্নপূরণ হতে পারে। তাকে কেউ সহযোগিতার হাত বাড়াতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন ফারুকের সঙ্গে, এই ০১৯২৫৩৮৩৭৫১ (বিকাশ) নম্বরে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দিনমজুর পরিবারের মেধাবী ছাত্র অনিক মিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে অনিক। তবে অনিকের ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ জোগানোর চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন অনিক।

অনিক মিয়া কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের তালুক শিমুলবাড়ী গ্রামের দিনমজুর আবদুস ছালামের ছেলে। মা রেনুকা বেগম গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে অনিক বড়। ছোট দুই ভাই পঞ্চম ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ঢাকায় একটি রাইস মিলে শ্রমিকের কাজ করছেন অনিকের বাবা আবদুস ছালাম। অনিক বলেন, এখন পর্যন্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি ঠিকই কিন্তু আমার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। তবে এখনো ভর্তির টাকা জোগাড় করতে পারিনি। তিনি আরো বলেন, আমার বাবার আয় কম। তিনি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। জানি না বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারব কিনা। কেমন করে কী করব বুঝতে পারছি না।

অনিকের মা রেনুকা বেগম বলেন, ভিটাবাড়ি ছাড়া নিজেদের কোনো সম্পদও নেই। ছেলের পড়াশোনা চালাতে পারব কিনা জানিনা। অনিকের বাবা আবদুস ছালাম বলেন, ঢাকায় একটি রাইস মিলে দিনমজুরের কাজ করি। এই টাকায় সংসারই ঠিকমতো চলে না। অনিককে কেমন করে পড়াব! আমার মতো বাবার পক্ষে অসম্ভব।

ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা আরেফীন বলেন, অনিক বা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ যোগাযোগ করলে তার ভর্তির ব্যাপারে যথাযথ সহায়তা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close